নবীজির ভাষণ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ০৫ জুন, ২০১৪, ০৯:৪২:৪৪ সকাল
৮ম হিজরী। মুসলমানগণ হুনাইন যুদ্ধে বিজয় লাভ করলেন। যুদ্ধ শেষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাহ) কুরাইশ এবং অপরাপর মুসলমানদের মাঝে গণীমতের মাল বন্টন করে দিলেন। অথচ আনসার সাহাবাদেরকে (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) কিছুই উপহার দিলেননা। এটা আনসারদের মনে সামান্য ঈর্ষা তৈরি করল। আল্লাহ’র নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যপারটা অনুধাবন করে হযরত সা’দ বিন উবাদাকে (রাঃ) ডেকে বললেন, সবাইকে জমায়েত কর। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছু কথা বলবেন।
আনসার সাহাবাগণ (রাঃ) হযরত সা’দের (রাঃ) কথামত এক জায়গায় এসে জড়ো হলেন। নবীজিও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছুক্ষণ পরে তাদের মাঝে আগমন করলেন। শুরু হল তাঁর ইতিহাস-বিখ্যাত হৃদয়স্পর্শী সেই অমর বক্তৃতাঃ
হে আনসারের দল! তোমাদের একি কথা আমার আমার কানে এসেছে! তোমরা আমার ব্যপারে তোমাদের মনে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছ? অথচ আমি কি তোমাদের কাছে সে সময়টাতে আসিনি যখন তোমরা ছিলে পথভ্রষ্ট? অতঃপর আল্লাহ তায়া’লা তোমাদেরকে আমার মাধ্যমে হেদায়েত দিয়েছেন। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব তৈরি করে দিয়েছেন।
আনসারগণ জবাবে বললেনঃ হ্যা, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী, আল্লাহ আমাদের বেলায় এমনটি করেছেন।
নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর মনোবেদনা প্রকাশ করে বললেন, তোমরা কি আমার ডাকে সাড়া দিবেনা?
প্রতিউত্তরে আনসারগণ বললেন, হে আল্লাহ’র রাসুল! আপনি শুধু একবার বলুন আমরা কিভাবে আপনার ডাকে সাড়া দিব। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্যই সকল মর্যাদা ও সম্মান!
নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ’র শপথ; আমি জানি, যদি তোমরা চাইতে তবে অনেক কিছুই বলতে পারতে। আর তোমাদের সবগুলো কথাই হত সত্যি এবং বিশ্বাসযোগ্য। তোমরা বলতে পারতে যে, আপনি ‘মিথ্যুক’ অপবাদ নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন -বিপরীতে আমরা আপনাকে বিশ্বাস করেছি। আপনার কওম আপনাকে পরিত্যাগ করেছিল কিন্তু আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি। তারা আপনাকে তাড়িয়ে দিয়েছে তথাপি আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। এমনকি আপনি ছিলেন নিঃস, তবু আমরা আপনার সেবা করেছি।
হে আমার প্রিয় আনসারের দল! তোমরা কি সামান্য সম্পদ না পাওয়াতে আমার ব্যপারে মনে মনে বিরক্ত হও? অথচ আমি এই সম্পদ দিয়ে একটি দলকে কাছে টানতে চেয়েছি। তাদের মাঝে আমাদের ভালবাসার বার্তা পৌঁছিয়েছি। যাতে তারা ইসলাম গ্রহণ করে। বিপরীতে তোমরা আমার কাছে তোমাদের ইসলামকে আগেই সমর্পন করে রেখেছো।
হে আমার আনসারেরা! তোমরা কি এ ব্যপারে সন্তুষ্ট নও যে, মানুষজন আমার কাছ থেকে সামান্য উট আর বকরী নিয়ে তৃপ্ত হয়ে যাবে আর প্রতিদানে তোমরা তোমাদের পাশে সবসময় আল্লাহ’র রাসুলকে পাবে?
সে সত্ত্বার কসম যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি ইসলামের জন্য হিজরত ‘পূর্বনির্ধারত’ না হত, তবে আমি হতাম আনসারদের দলে। সকল মানুষ যদি এক পথে হেঁটে যেত আর আনসারেরা অন্য পথে চলত, তবে আমি আনসারদের পথটিই গ্রহণ করতাম। ও আল্লাহ! তুমি আমার আনসারদের দয়া কর। তাদের সন্তানদেরকে দয়া কর এবং তাদের সন্তানদের সন্তানদেরকে দয়া কর!
নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথাগুলো শুনে উপস্থিত সাহাবাগণ কেঁদে ফেললেন। তাঁরা এতটা কাঁদলেন যে, তাদের চোখের পানিতে তাদের দাড়িগুলো ভিজে গেল। তাঁরা বলতে লাগলেনঃ
সম্পদ ও প্রাপ্য হিসেবে আমরা আল্লাহ’র রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পেয়েই সন্তুষ্ট।
বিষয়: বিবিধ
৯৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন