যতই অপবাদ দাও; ইসলাম আমার এগিয়ে চলেছে বহতা-নদীর মতই
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ১৫ মার্চ, ২০১৪, ০৮:২৭:০০ রাত
জুমা'র নামাজ শেষ। মুসল্লীগণ কেউ কেউ সুন্নতে দাঁড়িয়ে গেছেন। কেউ আবার মসজিদ থেকে বের হয়ে বাড়ী ফেরার পথ ধরেছেন। তবে অধিকাংশ মুসল্লীই এখনো মসজিদে অবস্থানরত। নামাজ শেষে পবিত্র-নির্মল আবহে সবাই নিজেদের দেহ-মন পুলকিত করার চেষ্টায় নিমগ্ন। হঠাৎ ইমাম সাহেবের কন্ঠ ভেসে এল মাইকে। সবাইকে যার যার অবস্থানে একটু অপেক্ষা করার অনুরোধ জানালেন তিনি। ফলে পূর্ণ একাগ্রতা ও কৌতূহল নিয়ে সবাই দৃষ্টিপাত করল ইমাম সাহেবের দিকে। ততক্ষণে হাতে ছোট্ট স্পিকার নিয়ে ইমাম সাহেব কাউকে আহ্বান জানাচ্ছিলেন সামনে আসার। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে একজন ছোট-খাটো মানুষ নিতান্ত সাধারণ ভঙ্গিতে এগিয়ে এলেন কাতারের মাঝ থেকে। সবার কৌতূহল বেড়ে গেল তাতে। এত বড় মজমা'য়, আপাতদৃষ্টে একেবারেই নিরীহ একজন গুরুত্বহীন মানুষকে ইমাম সাহেব কেন ডাকলেন সেটা সবার কাছেই কিছুটা বিস্ময় হয়ে এল। লোকটি ইমাম সাহেবের সাথে করমর্দন শেষ করতেই খতীব সাহেবের ভরাট কন্ঠ আবারো সবাইকে পূর্ণ মনোযোগী করে তুলল। তিনি বলতে শুরু করলেন, "গাড়ী থেকে নেমে মসজিদে ঢোকার ঠিক আগ-মুহুর্তে এই ভদ্রলোক আমাকে ডাক দিয়েছিলেন। খুৎবার সময় তখন প্রায় নিকটবর্তী হয়ে যাওয়ায় আমি কিছুটা তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলাম। তবু তার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারলামনা। কাছে যেতেই তিনি আমায় জানালেন যে, তিনি একজন অমুসলিম। আমার হাত ধরে মুসলমান হতে চান। যেহেতু সময় খুব সংক্ষিপ্ত ছিল, তাই তার কথা শুনে খুব বেশি আনন্দিত হলেও নিজের দায়িত্ববোধের কারণে তখন আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। সঙ্গত কারণেই আমার এই ভাইটিকে তখন বেশি সময়ও দিতে পারিনি। অবশ্য তাকে বলে দিয়েছিলাম তিনি যেন মসজিদে বা এর আশেপাশে থাকেন। এখন আপনাদের সামনে, হাজারো মুসল্লীকে সাক্ষী রেখে তিনি আমার মত একজন ক্ষুদ্র মানুষের সহযোগিতায় ইসলাম গ্রহন করবেন। আপনারা সবাই তার এই মহৎ ইচ্ছাকে আপনাদের নেক দোয়ার মাধ্যমে অভিনন্দিত করুন"। এই বলে তিনি আগন্তুক ভাইটিকে তার নাম জিজ্ঞেস করলেন। (দুঃখিত পাঠক, আমি তার পূর্বের নামটি ভুলে গেছি) তারপর ইমাম সাহেব প্রশ্ন করলেন, "আপনার দেশ কোথায়"? "জী, আমি একজন শ্রীলঙ্কান"। "আপনার বর্তমান ধর্ম কি"? "আমি একজন হিন্দু" উত্তরে বললেন ইসলাম-প্রেমিক সেই ভাইটি। ইমাম সাহেব এবার তার দিকে স্নেহের দৃষ্টি মেখে বললেন, "আমি এখন আপনাকে যে কথাগুলো বলব, আপনি আমার সাথে সাথে সেগুলো উচ্চারণ করবেন। ঠিক আছে"? "জী, ঠিক আছে"। সংক্ষিপ্তভাবে সায় দিলেন ইসলামের এই নতুন মেহমান। ইমাম সাহেব তাকে লক্ষ করে পাঠ আড়ম্ভ করলেন, "লা-ইলাহা"- জবাবে লোকটিও মৃদু স্বরে উচ্চারণ করছিলেন- লা-ইলাহা, "ইল্লাল্লাহু"-ইল্লাল্লাহু, "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ"; মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এভাবে আরো বেশ কয়েকটি কালেমা দু'জন একসাথে সম্পন্ন করতেই মসজিদে সমবেত মুসল্লীগণ পবিত্র উল্লাসে ফেটে পড়লেন। আনন্দ-করতালির মাধ্যমে সবাই আমাদের এই নব-মুসলিম ভাইটিকে বরণ করে নিলেন। একে একে মসজিদের ভিতরে লাইন পড়ে গেল- আমাদের এই পরমাত্মীয় ইসলামী ভাইটির সাথে বুক মেলাতে। আমিও ছুটে গেলাম। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ও শ্রদ্ধা মেশানো কন্ঠে তাকে সালাম জানালাম। মুসাফাহা ও মুয়া'নাকা শেষে তার কাছে দোয়া চেয়ে ধীরে-ধীরে ফিরে আসলাম। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় ভাবছিলাম, সারা পৃথিবীর সকল মিডিয়া ও প্রচার-যন্ত্র বিরামহীনভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছে। শত-সহস্র ইসলাম-বিদ্বেষী আর মুসলমানদের শত্রুভাবাপন্ন সকল কুচক্রী মিলে ইসলামকে ধ্বংস করার হাজারো অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। ইসলামের অগ্রযাত্রা ব্যহত করার শত পরিকল্পনাও কাজে আসছেনা। বরং দিনকে দিন ইসলাম তার চিরকল্যাণকর আহ্বানকে বীরদর্পে ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীময়। যার ছোট্ট একটি নমুনা আজ আমরা চোখের সামনেই দেখতে পেলাম। যে ধর্ম ও তার বাণীকে মহান আল্লাহ তা'য়ালা নিজে হেফাজত করার অঙ্গীকার করেছেন, তাকে পথ-রূদ্ধ করার সামান্যতম শক্তিও কি কারো আছে? না, অবশ্যই না। আল্লাহ তায়া'লা আমাদের সবাইকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা মেনে চলার তৌফীক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Thanks for sharing.
মন্তব্য করতে লগইন করুন