দেশটা কি ইসলামিষ্টদের হাতে তুলে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী
লিখেছেন লিখেছেন কয়েছ আহমদ বকুল ১৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:৩২:০৮ সকাল
দেশটা কি ইসলামিষ্টদের হাতে তুলে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
কয়েছ আহমদ বকুল
আমি সব সময় ইতিবাচক ভাবতে ভালবাসি। ভাবতে খুব ইচ্ছা করে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ এখন ভালো আছে, আর্ত-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এসব কেবলই আপ্লুত মনের আকুল ভাবাবেগে ভাসা। আসলে আমার বাংলাদেশ আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ ভালো নেই। চমকে যাবার মতো উৎকন্ঠায় ভেঙে পড়ার মতো খারাপ সময়ের দিকে দাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজকের বক্তব্য।
আজ ১৪ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার গণভবনে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্টানে শেখ হাসিনা বলেন 'কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।আমার ধর্ম আমি পালন করি। আমার ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি নোংরা কথা লেখে সেটা আমরা কেন মেনে নেব? এখন একটা ফ্যাশন দাঁড়িয়ে গেছে, ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেই তারা হয়ে যায় মুক্তচিন্তার মানুষ।আমিতো এখন মুক্তচিন্তা দেখিনা। আমি এখানে দেখি নোংরামি, পর্ন। এতো নোংরা নোংরা লেখা কেন লিখবে? যাকে আমি নবী মানি, তাঁর সম্পর্কে নোংরা কথা কেউ যদি লেখে সেটা কখনো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্যনা। আমি একজন মুসলমান হিসেবে প্রতিনিয়ত আমার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি। সেখানে কেউ যদি এভাবে লেখে এতে আমার নিজেরও কষ্ট হয়। আর এই লেখার জন্য কোন অঘটন ঘটলে দোষ সরকারের উপর আসবে কেন?
বিষয়টা কিন্তু খুবই পরিস্কার, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে কতল হতে হবে, বরদাসত করা হবেনা। যে বা যারা ব্লগার তথা মুক্তমনা লেখক বা লেখা প্রকাশের সাথে সংশ্লীষ্ট কাউকে হত্যা করবে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দ্বায়িত্ব সরকারের নয়।
ইতিপূর্বে অনেক জাতীয় সংকট ও খারাপ সময় পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে এখনকার মতো এতো অসহায় সময় আর কোনদিন পার করিনি আমরা।সেই রাজিব হায়দার থেকে শুরু করে এই সেদিন ব্লগার নাজিম উদ্দিন সামদের হত্যাকারীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। একের পর এক ব্লগার লেখক সাংবাদিক প্রকাশক নিহত হয়ে চলেছেন আর রাষ্ট্র যন্ত্রের সর্বোচ্চ চেয়ারে বসা মানুষটি ধর্ম নামের বেহায়াপনার দোহাই দিয়ে সেই হত্যা প্রক্রিয়াকে আকন্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। নিশ্চীত ভাবে বাঙালি জাতির জন্য এ এক কলঙ্কজনক বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর মতো মানুষ যখন এরকম ভাবে ধর্মীয় জঙ্গিগুষ্টিকে উৎসাহিত করে বক্তব্য দেন আমাদের তখন আর বুঝতে বাকি থাকেনা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন কতটা মৌলবাদ আর ধর্ম ব্যবসায়ীদের দখলে।
শেখ হাসিনা সেই রাজনৈতিক দলটির সভানেত্রি যেটাকে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির আদর্শ হিসেবে মানা হয়।
কিন্তু তাঁর প্রবল ধর্ম দুর্বলতা তাঁর দলের অন্য ধর্মের লোকদের কতটা হতাশ ও দু্ঃখিত করে তিনি কি একবার তা ভেবে দেখেছেন। নাকি ধর্ম নিয়ে কালে কালে তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন হওয়াটা আসলে একটা রাজনৈতিক কারণ? যখন এদেশের বেশির ভাগ মুসলমান জামাত ও বি এন পির প্রতি সমর্থন দিয়ে দিয়েছিল তখন নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতার মুলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামনে ধরে নিজের অস্থিত্ব বাঁচিয়ে রাখা আওয়ামীলীগ কি তবে তখন ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনীতি করেছিলো আর এখন ভোটার বিহীন ভোটে ক্ষমতায় এসে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে ক্ষমতায় থাকতে চায়? ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যাকারীর সংখ্যা কিন্তু এখনো বেশিনা। কি কারণে সরকার বা আওয়ামীলীগ এই সংখ্যাটা অনেক বাড়িয়ে দিতে চায় জানিনা, তবে শেখ হাসিনার সুযোগ ছিলো নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রমাণের পাশাপাশি একজন যোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্টা করা। বিভিন্ন সময়ে উলামালীগ নামের একদল পাগলের কিছু প্রলাপ শুনে কখনো বিশ্বাস করতে চাইনি এরা আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংঘটন, আজ তাদের সভানেত্রি অনেকটা তাঁদের মতো করেই মানুষ হত্যার মাধ্যমে ইসলামকে বাঁচিয়ে রাখার দাওয়াত দিয়ে গেলেন।
স্বাধীনতার চেতনা বলতে আওয়ামীলীগের মধ্যে আর কিছু অবশিষ্ট আছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা। যে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়ে ছিলো জেনারেল এরশাদ স্বেচ্চাচারিতার মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রা্ষ্ট্রধর্ম করার মাধ্যমে আসলে একটি অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে দেন। এদেশের কোন মুসলমান ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার দাবী নিয়ে তাঁর কাছে যায়নি, উনি নিজের লাভের জন্য এটা করেছেন, ব্যবসা করেছেন ধর্ম নিয়ে, লাভমান ও হয়েছেন। আশা ছিলো আওয়ামীলীগ একদিন ক্ষমতায় এসে এই কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্তি দেবে। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে এরকম কোন উদ্যোগ নেয়নি। সর্বশেষ ২৮ বৎসর আগের করা একটি আবেদনের শুনানি যখন ২৭ মার্চ হবে শুনলাম ভাবলাম কলঙ্কটা কাটবে এবার। হা খোদা আমরা তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, সেই মুসলমান মহিলা এ রাষ্ট্রে অন্য ধর্মের মানুষের অস্থিত্ব মেনে নেবেন কেন?
শেখ হাসিনা একজন প্রাজ্ঞ মানুষ, তিনি ভালই বুঝতে পারছেন গণতন্ত্রকে হত্যা করে এদেশে চিরকাল ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মের মূলো দেখিয়ে খুশী রাখতে হবে।আর এই খুশি রাখার প্রক্রিয়ায় তাঁর নিজের নিশ্চীহ্নতার মাধ্যমে এই দেশে চিরকালের জন্য ইসলামিষ্টদের ক্ষমতায় চলে আসার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার যে সম্ভাবনা আছে তিনি তা ভুলে গেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন