একজন মহান মুক্তিযোদ্ধার এফবি স্ট্যাটাস ও আমার কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন কয়েছ আহমদ বকুল ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৭:১৫ সকাল
একজন মহান মুক্তিযোদ্ধার এফবি স্ট্যাটাস ও আমার কিছু কথা
কয়েছ আহমদ বকুল
মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন মৌলভী বাজার জেলা জুড়ে এক নামে পরিচিত। বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দীর্ঘদিনের কামান্ডার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন দেশের সর্বাদিক মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত অঞ্চল বড়লেখায় ১৯৭১ সালের একজন অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা সংঘটক হিসাবে কাজ করেন এবং চার নং সেক্টরে কামান্ডার চিত্ত রঞ্জন দত্তের অধীনে পুরো নয় মাস ধরেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
আসলে আজকের লেখাটার বিষয় কোন ভাবেই মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনকে নতুন করে বড়লেখা মৌলভীবাজার অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে নয়, তিনি এমনিতেই স্বনামে স্বমহিমায় ঐ অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত। তাঁর আপোষহীন মানসিকতা ও সকল প্রকার অন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কারণে বড়লেখা জুড়ী তথা আশেপাশের এলাকায় তিনি অনেক অনেক বিশেষ বিশেষ নাম উপনামে সমাদৃত। আমার কাছে তিনি ঐ অঞ্চলের সর্বস্থরের মুক্তিযোদ্ধাদের এক মাত্র আশা ও ভরসার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসাবেই কেবল পরিচিত।
মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন আমার কৈশোরের হিরো, ভাবতাম বড় হয়ে আমি সিরাজ উদ্দিনের মতো ত্যজদীপ্ত সত্যবাদী বলিষ্টচেতা ও নির্বিক হবো। আমার কৈশোরের হিরোর সাথে দেশ ত্যাগের আগে আর আমার ব্যক্তিগত পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়নি। ২০০৫ সালে দেশে ফিরে ১৫ই আগষ্টে জাতীয় শোক দিবসে শোক স্মরণিকা 'রক্তে লেখা পান্ডুলিপি'র প্রকাশনা উৎসবকে কেন্দ্র করে উনার সাথে আমার প্রথম ব্যক্তিগত পরিচয়। প্রকাশনা উৎসবের প্রধান আলোচকের সম্মান দিয়ে উনাকে আমন্ত্রণ জানাতে গেলে উনি আমাকে জানান আমার লেখালাখির বিষয়ে উনি জানেন এবং সুযোগ পেলে পড়েন। সত্যি বলতে অনেক অতিথিদের মাঝে মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনের প্রকাশনা উৎসবে রাখা প্রাণবন্ত আলোচনা সেদিন রক্তেলাখা পান্ডুলিপির' প্রকাশনা উৎসবকে এতোটাই ঋদ্ধ আর স্বার্থক করে তুলেছিলো
আজও রক্তেলেখা পান্ডুলিপি হাতে নিলে উনাকে আমার মনে পড়ে। উনার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ তারপর থেকে বেড়ে গিয়েছিলো এবং তা আজও বর্তমান। এই ৮/৯ বৎসর থেকে কখনো খুব কাছ থেকে কখনো একটু আড়াল থেকে কখনো ভালোবেসে কখনো উনার কোন সিদ্ধান্তকে ভুল ভেবে অভিমান থেকে উনাকে যতটা জানতে পেরেছি আজ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনের মতো সৎ আর নিষ্টাবান মানুষ আমাদের সমাজে আজ আর খুব বেশী নেই।
মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন আমার গবেষনার বিষয়। আমি একটি আঞ্চলিক সপ্তাহিকে যখন ধারাবাহিক ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ফিচার লিখছিলাম কোন ভাবেই আমি সেই তালিকায় উনাকে প্রবেশ করাইনি, কারণ আমি জানি কোন সপ্তাহিকের সীমিত অক্ষর বাক্যে আমি উনাকে প্রকাশ করতে পারবো না। উনার জন্য একটা বিশাল কলেবর দরকার। আজও এখানে উনাকে নিয়ে সেই অর্থে আমি কিছু লিখতে চাই না। আজ ফেইস বুকে উনার দেয়া একটা স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সামান্য দু'টি কথা বলতে চাই মাত্র।
মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন আজ তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন
''আমরা হয়তো অজোপাড়া-গাঁয়ের্ ছেলে। আত্মপ্রচারে বিশ্বাস করিনা। রাজনীতিতে ব্যক্তিগত বাহিনী পোষা পছন্দ করিনা তাই স্বাধীকার আন্দোলন থকে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং '৭৫ সাল থেকে সামরিকশাসন,স্বৈর শাসন সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর খুনী সহ '৭১ এর চিহ্নিত ঘাতকদালালদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য শতভাগ আন্তরিকতার সহিত মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ লড়াই-সংগ্রােম স্বপরিবারে অংশগ্রহন করেও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলাম।তবে আমার মত আহম্মকরা সক্রিয় রাজনীতি না করাই উত্তম।''
কেন একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে আহাম্মক বলতে বাধ্য হচ্ছেন। আমি জানিনা উনার এই অভিমান ভরা বক্তব্যের কারণ কি। কার কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পাবার কথা বলছেন তা ও আমার জানা নেই। সক্রিয় রাজনীতি বলতে তিনি কি বুঝাতে চাইছেন আমার বোধগম্য নয়। কিন্তু আমি শুধু একটি কথা বলবো মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন হচ্ছেন বড়লেখার একমাত্র রাজনৈতিক নেতা একমাত্র অনুকরণিয় ব্যক্তিত্ব যাঁকে যুগ যুগ ধরে বড়লেখার রাজনৈতিক অঙ্গনের মানুষই নয় শুধু সাধারণ মানুষও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে উনাকে ভীষণ ভালোবাসি বলেই বিগত উপজেলা নির্বাচনে উনার সিদ্ধান্তের কারণে উনার উপর রেগে আছি কিন্তু উনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই সিদ্ধান্ত বড়লেখার রাজনৈতিক আকাশে তাঁকে এক উজ্জ্বল তারকা করে দিয়েছে।
মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন ২০০৮ সালের উপজেলা নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ প্রার্থী সাবেক সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান বড়লেখার বরেণ্য আরেক রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা সংঘটক সিরাজুল ইসলামকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। দ্বায়িত্ব পালনকালে তিনি এতোটাই সৎ ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন যে ইউ এন ও সহ উপজেলা পরিষদের প্রায় সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে বারবার তাঁর বিতন্ডা ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অনৈতিক সুবিধা না দেবার কারণে অনেক কাছের মানুষ ও তাঁর পর হয়ে উঠেন, তাঁর অপোষহীন মানসিকতা তাঁর পৃথীবিকে এতোটাই ছোট করে দেয় যে বন্ধু স্বজনদের সংখ্যা হয়ে যায় হাতে গুনা। ত্যজদ্বীপ্ত কন্ঠে তবু উচ্চারিত হয় দূর্নীতি স্বজনপ্রীতি আর সকল অনিয়ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ট বক্তব্য। কিন্তু আপাদমস্তক দূর্নীতিগ্রস্থ এই সময়ে মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন স্রোতের বিপরীতে বেশী দিন চলতে পারেন না। সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরও বিগত উপজেলা নির্বাচনে তাঁর রাজনৈতিক দল তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে একটি সিলেকশন সেঁতু পার হয়ে তাঁকে নির্বাচনে আসতে বলে। সিলেকশনে উনি আসতে পারবেন না আমি জানতাম। কারণ উনার মতো সৎ আর অবৈধ সুযোগ না দেয়া মানুষকে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে কোন বোকা সিলেকশন করবে বলুন। উনার রানিং মেইট পৌরসভা নির্বাচনে পরাজিত যুবলীগ নেতা সিলেকশন সেঁতু পেরিয়ে যান, সিলেক্ট হতে পারেন না নির্বাচিত এবং বিভাগ শ্রেষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান এই জননেতা।
আমি নিশ্চীত মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনের আজকের স্ট্যাটাসের কারণ বিগত উপজেলা নির্বাচন নয়। তিনি হাসি মুখেই সেদিন সিলেকশন মেনে নিয়েছিলেন বলেই জানি। নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেও কাজ করেছিলেন। তাহলে আজ কেন উনার কন্ঠে এই কষ্ট এতো হতাশা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের মধ্যে আর খুব বেশী দিন নেই, আমরা কি এই শেষ সময়ে এসেও উনাদের যথাযথ মর্যাদাটা দিতে পারবো না।
কাদের মোল্লার ফাঁসী হলো, ভাঙ্গচুর হলো মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনের বাড়ী, অল্পের জন্য মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলেন তিনি। কারণ কি, কারণ তিনি আপোষহীন, কারণ তিনি দল ও দেশের প্রতি নিবেদিত কারণ তিনিই দেশদ্রোহি আর আওয়ামীলীগ বিরোধিদের টার্গেট। এমন নিবেদিত প্রাণ একজন মানুষ কেন এমন আহত ভাবে নিজেক আহাম্মক আর রাজনীতির জন্য অনুপযোগী বলে কষ্ট প্রকাশ করেন তা দেখার কি কেউ নেই?
বিষয়: বিবিধ
১৩৯২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন