নেতাকে পিতা বানানো কি ভালো................।!

লিখেছেন লিখেছেন কয়েছ আহমদ বকুল ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:২৮:৩৯ রাত

নেতাকে পিতা বানানো কি ভালো..............!

কয়েছ আহমদ বকুল

একটা বিশেষ কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ। সামনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তীর সুবর্ণ জয়ন্তী, হাতে যে কয়টি বছর সময় আছে সেই সময়টা যেখানে সুবর্ণ জয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদা ও তাৎপর্য্যপূর্ণ ভাবে পালনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সেখানে আমরা ব্যস্ত আছি গুনি পিতাদের অহেতুক গুনকীর্তনের মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতের প্রতিযোগীতায় নামা সন্তানদের পিতা স্তুতির আঘাত থেকে ইতিহাস রক্ষার কাজে। বেশ স্পষ্ট ভাবেই দৃশ্যমান এই সন্তানরা নিজেদের বাবাদের নিয়ে আবেগের রেণুমাখা কথামালা গুলো সাজাচ্ছেন বেশ সাবলীল ভাবেই আর তাতে নির্লজ্জের মতো ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের দেশের তথাকথিত সুশীল ভায়েরা।

বিগত নির্বাচনের প্রাক্কালে আমাদের দেশের সুশীল কাম রাজনীতিবিদদের কয়েকজনের হলফ নামা আমাকে বেশ আশ্চর্য্য করেছিলো। তাঁরা বেশ স্বাচ্ছন্দে তাঁদের হলফ নামায় আয়ের উৎস কলামে লিখেছিলেন 'টক শো'। টক শোতে এতো টাকা! আউলা হয়ে গিয়েছিলাম। তার কিছু দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে গেলো বি এন পি নেতা তারেক রহমান আর শমসের মুবিন চৌধুরীর গোপন ফোনালাপ। আলাপের এক পর্যায়ে শমসের মুবিনকে বলতে শুনলাম তিনিরা তাদের কিছু কথা বিশিষ্ট সুশীল মাহবুবুর রহমানকে দিয়ে 'টক শো' তে বলানোর চেষ্টা করছেন। পরিষ্কার হয়ে গেলো আসলে 'টক শো'তে কত টাকা। আরেকটা বিষয় পরিষ্কার হলো কেন আমাদের অনেক সুশীল অবলীলায় নিজের অবস্থান বদলে নীতিভুলে নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে অবস্থান নেন বিবেকের বিপরীতে।

আজকের লেখার মূল বিষয় আমাদের প্রথম প্রাধানমন্ত্রী আগাগুড়া ভালো মানুষ আপোষহীন নেতা মরহুম তাজ উদ্দিন আহমদের মেয়ে শারমীন রিপির লেখা গ্রন্থ 'তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা'। গ্রন্থটি প্রকাশের আগেই এটির প্রতি আমার আগ্রহ ছিলো বেশি, তাজউদ্দিনকে নিয়ে অনেক লেখা আমি পড়েছি, জহুরা তাজউদ্দীনের স্মৃতিচারণ থেকেও জেনেছি অনেক, মেয়ের লেখা থেকে ও ভালো কিছু নতুন কিছু পাওয়া যাবে ছিলো আশা ও বিশ্বাস। দেশের বাহিরে থাকার কারণে গ্রন্থটি আমার হাতে আসার আগেই একটি বিশেষ দৈনিকের রিভিউ থেকে বইটি বিষয়ে যা জানছি তা আশাহত হওয়ার মতো। আসলে নেতা তাজউদ্দীনকে তাঁর মৃত্যুকালীন সময়ের এগারো বছর বয়সী মেয়ের কাছ থেকে জানার বিশেষ কিছু নেই। পিতা তাজউদ্দীনকে নিয়েই তিনি কি লিখেছেন সেটা জানার আগ্রহই ছিলো বেশী। কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত ঢুল পেটাতে ব্যস্ত। রিপি হয়তো জানেন না বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের ঠিক কোন জায়গাটাতে তাজউদ্দীনের অবস্থান, জানলে নতুন করে নিজেই নিজের পিতাকে বড় করার চেষ্টা করতে যেয়ে নিজে ছোট হয়ে যেতেন না। বিভিন্ন দৈনিকের অনলাইন ভার্সনে আমি রিপির গ্রন্থের রিভিউ পড়ছি, আর হাসছি, যার যার মানষিকতা দিয়ে গ্রন্থটাকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে ওরা। ভাবতে অবাক লাগে উনার মৃত্যুর এতো বছর পর এসে উনাকে নতুন করে বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগ্যতার প্রতিযোগীতায় নামিয়ে আসলে রিপিরা কি পেতে চাচ্ছেন। ডলারপাউন্ড নাকি নতুন কিছু আরো বড়ো কিছু? রিপির মা জাতীয় সংসদের এম পি ছিলেন, ভাই মন্ত্রী ছিলেন, বোন এখনো এম পি। আর তাদের এই সব প্রাপ্তী রাজনৈতিক সংঘটন আওয়ামীলীগের কাছ থেকেই। রিপির না পাওয়ার যন্ত্রণা যদি এভাবে তাঁকে লিখিয়ে থাকে সেটা শুধু দুঃখজনক নয় হতাশাব্যঞ্জক ও বটে। পারিবারিক দূরত্ব তাঁদের মধ্যে থাকতেই পারে, স্বার্থ জনিত দ্বন্ধ থাকতে পারে, কিন্তু তাজউদ্দীন কি কেবলই এক ব্যক্তি এক পিতা, তিনি কি একটি প্রতিষ্ঠান নন? এই প্রতিষ্ঠানকে কুলষিত বিতর্কিত করার অধীকার রিপির কি আদৌ আছে? রিপি আজ নাচের পুতুল, নাচছেন প্রম্পটরের ইচ্ছা মত, নাচ শেষে পারিশ্রমিকও ঠিকই পাবেন তিনি কিন্তু মধ্যখান দিয়ে মানুষের মনে তাজউদ্দীন আর মেজর জিয়াকে প্রায় এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি। এটা উচিৎ হয়নি।

মেজর জিয়াকে তারেক রহমান নামক তাঁর পথভ্রষ্ট ছেলে বাংলাদের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। পাগলের প্রলাপ ছাড়া কেউ কিছু বলেনি, একটি অক্ষর ও লিখতে ইচ্ছা হয়নি সে বিষয়ে। কিন্তু রিপির মতো মানুষরা তারেকের প্রলাপে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। রিপির বুঝা উচিৎ ছিলো তিনি তাজউদ্দীনের মেয়ে, বিতর্ককে মেনে নিয়ে বললে তিনি তাজউদ্দীনের মেয়ে না হলেও অন্তত তাজউদ্দীনের পরিচর্যায় পালিত, তাঁকে এভাবে কারো প্ররোচনায় পড়ে নিজের পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিৎ হয়নি।

আমাদের সুশীলকূল শিরোমনি ডঃ কামাল হোসেন কথিত ঐ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশনা উৎসবে যেতে হলে গ্রন্থটি পড়ে যেতে হয়, ডঃ হোসেন সেই কাজটি করেছেন বলে মনে হয় না। আসলে কেবল চেক চিন্তায় বক্তব্য আওড়ানো মানুষ গুলোকে মাঝে মধ্যে এই রকম বিপত্তিতে পড়তে হয়।

এই দেশে আওয়ামীলীগ না থাকতে পারে, এই দেশ থাকলে লালা সবুজ পতাকা থাকলে বঙ্গবন্ধু মুজিব থাকবেন। এই মহান সত্যকে নিয়ে যারা বিতর্কের জন্ম দিয়ে সাময়িক লাভবান হতে চাইবেন তারা নিশ্চয়ই নিক্ষিপ্ত হবেন চরম আস্তাকুড়ে।

বিষয়: রাজনীতি

১০৪৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

214075
২৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৩৬
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : পরে সময় নিয়ে পড়ে মন্তব্য করবো।
২৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৩৮
162322
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আর হা ব্লগে নিয়মিত লেখা চাই। বিশেষ করে কবিতা।
214133
২৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:২৯
আবু জারীর লিখেছেন : যারা নেতার চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করে গালি দেয় তারাই আবার নেতাকে পিতা বানায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File