চেতনার যাতনা ০১

লিখেছেন লিখেছেন মু আতিকুর রহমান ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩৯:৪৩ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

চেতনার যাতনা ০১

ইতিবাচক চিন্তা ভাবনাঃ আমাদের বাস্তবতা।

ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা একটি বিশেষ গুন। যুক্তিপুর্ন মতামত ও ব্যতিক্রমী চিন্তার আধিকেত্য যে কোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার মানস গড়ে উঠার প্রয়োজনীয়তা অপ্রীসিম। ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার রয়েছে ধর্মীয় বিশেষ গুরুত্ব। এর উপর আদর্শিক বিকাশ অনেকাংশে নির্ভর করে। নির্ভর করে সমাজ,সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিকাশও।

ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার অধীকারী হতে হলে নিজেকে নিজের শিক্ষক হতে হয়। এক্ষেত্রে অন্যের ভুমিকা গৌণ। এ গুন অর্জনে দীর্ঘ মেয়াদী চেষ্টা প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়তে পারে। নিয়মিত আত্বসমালোচনা ও অনুশীলন ব্যতীত পরিশুদ্ধ চিন্তা ভাবনার অধীকারী হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। মোটকথা জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল হওয়ার পরও ব্যাক্তির নিজস্ব চিন্তা ভাবনার উপর যথেষ্ট কন্ট্রোল থাকতে হয়।

ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা ঐক্য ত্বরান্বিত করে। এই গুন ছাড়া কোন বিষয়ের সঠিক মুল্যায়ন সম্ভব নয়। আর কোন বিষয়ে যথাযথ চিন্তা ভাবনা ও অনুসন্ধান ছাড়া মতামত প্রকাশ করা শুধু বেঠিকই নয় অনৈতিকও বটে। কারন তাতে অবমূল্যায়নের সম্ভাবনা প্রব্ল থাকে। সুতরাং যে বিষয়ে যতটুকুন জানা থাকে এবং যা মানুষের জন্য কল্যাণকর কেবল তা-ই গ্রাহ্য। আমাদের দেশে এ দিকটি খুব একটা মানা হয় না। অনেকে না জেনে না বুঝে নিজের আয়াত্তের বাইরেও বিষয়েও বিচক্ষন ব্যাক্তির মত মন্তব্য করে থাকেন। এ প্রবণতা ঐক্য বিনষ্ট করে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেয়। দেখা যায় অনেক আলোচনা সমালোচনায় যুক্তিপূর্ন মতামতের চাইতে কুটতর্কের আশ্রয়ী হোন বেশি। ফলে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদের পথ প্রশস্ত হতে থাকে।

গনযোগাযোগের পরিসর বিস্তৃত হয়ে ওঠা এবং মতামত সেন্সর করার উপযুক্ত ব্যাবস্থা না থাকায় মুহুর্তের মধ্যে সম্মানে আঘাত হানার সুযোগ পায়। এতে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা খুব বেড়ে চলছে। কোন বিষয়ে নিজের মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গী ফলানোর সময় পূর্বা-পর ভেবে নেয়া প্রয়োজন রয়েছে। সবসময় নিজেকে জাহির করার প্রবণতা পরিশুদ্ধ ও ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার মানস গড়ে উঠার প্তহে একটি বিরাট বাধা। ব্যাক্তি সতর্ক না হলে এ রোগ পরিবার ও সমাজের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠে।

অনেককে ধর্মীয় স্পর্শকতার বিষয়ে রায় প্রদানে স্বেচ্ছা প্রনোদিত হতে দেখা যায়। দেখা যায় অন্যকে বেদীন প্রমান করার জোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হতে । এরা মোটেও এ কথা মনে রাখে না যে, এ বদভ্যাস মুলত তাদেরকে ধর্মীয় বিষয়ে রায় প্রদানে অধিকতর অযোগ্য বিবেচিত করে তোলে। এ প্রবৃত্তির লোকেরা মানুষকে ধর্ম ও ঈমান থেকে জোরপুর্বক বের করে দিতে চায়। অথচ এটি খুবই অন্যায় কাজ।

অনেকে আবার অন্যকে ধর্ম বীরোধী সাব্যস্ত করতে গিয়ে নিজেই ধর্ম বিরোধী কাজ কজ করে ফেলে। উপরন্ত নিজে ঐ ব্যাক্তির চাইতে বেশী ক্ষতি করে ফেলে ধর্মের। অন্যকে বেদীন সাব্যস্ত করার জোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ার অনুমুতি ইসলাম কাউকে দেই না। আলেমরা এমনটি কখোনই করেন না। এটি পুরোপুরি পরিশুদ্ধ ও ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা বিরোধী কাজ।

এক ব্যাক্তি ইমাম আবু হানিফা র এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল হে ইমাম জনৈক ঈমান ও ইসলামের দাবী করে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী কিন্তু সে-

একঃ জান্নাতে যাবার আশা রাখে না।

দুইঃ জাহান্নামকে ভয় করে না।

তিনঃ নির্দ্ধিধায় মৃত প্রানী খায়।

চারঃ নামাজ পড়ে রুকু সিজদা করে না।

পাচঃ না দেখেও সাক্ষ্য দেয়।

ছয়ঃ ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের কথাকে সাক্ষ্য দেয়।

কিন্তু হে ইমাম এসবতো কুফুরীর লক্ষন। এমন ব্যাক্তি সম্পর্কে আপনার রায় কি? ইমাম আবু হানিফা র জবাবে বলেন আমার মতে সে মুসলিম। প্রশ্নকারীকে অবাক হতে দেখে প্রতুত্তরে ইমাম কারন বর্ননা করে বলেন-

একঃ তার কাছে আল্লাহকে পাওয়ার আকাংখাই প্রাধান্য পেয়েছে। আল্লাহকেই সে চায়, সুতরাং জান্নাত লাভের আকাংখার প্রতি তার কোন মনোযগ নাই।

দুইঃ সে জাহান্নামের আগুন নয় বরং আগুনের রবকেই বেশী ভয় পায়।

তিনঃ সে মাছ খায়।

চারঃ সে জানাজার নামাজ পড়ে যাতে রুকু সেজদা নাই।

পাচঃ আল্লাহ ও তার রাসূল সা কে না দেখে সে তাওহীদ এবং রেসালাতের সাক্ষ্য দেয়।

ছয়ঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা একে অপরেকে বলে যে তারা সত্যের উপর নয়। এ কথায় সে বিশ্বাস করে। আর এটাই হলো ইমান।

ইমাম আবু হানিফা র এর এরুপ বিচার – বিশ্লেষন ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার একটি প্রকৃষ্ট উদাহারন। ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার অধিকারী মানুষেরর কাজ হল সর্বদা মানুষের মাঝে আশা জাগিয়ে তোলা। মানুষকে আশ্রয় দেয়া। সংশোধন করার দ্বায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার মানসিকতা পরিশুদ্ধ ও ইতিবাচক চিন্তা ভাবনাবর্জিত মানুষের কাজ।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File