"!জীবন ফুলের বিছানা নয়"
লিখেছেন লিখেছেন মায়িশাহ মুনাওয়ারাহ ১২ মে, ২০১৬, ০৬:১৯:০৩ সন্ধ্যা
লেখা হয় কিভাবে?কলম থেকে কাগজের বুকে লেখা কিভাবে আসে? নিজেকে নিজে এই প্রশ্নটি অনেক দিন করেছি। কখনো কোলাহলে ডুবে থেকে, কখনো রাতের নির্জনতায় অাত্মমগ্ন হয়ে। কখনো ভেবেছি হয়ত লেখার জন্য প্রচুর পরিমাণ সাহিত্যের জ্ঞান থাকতে হয়, হয়ত লিখতে হলে অনেক জ্ঞানী হতে হয়, জ্ঞান ছাড়া লেখা কখনো ই সম্ভব না, কিন্তু এই উত্তর গুলো তেও কেমন যেন প্রশান্তি পেতাম না মনের মাঝে। কিন্তু হৃদয় মাঝে বারবার এই প্রতিধ্বনী অাসতো যে, যেদিন বুকের মাঝে লেখার জন্য উত্তাল ঢেউয়ের তরঙ্গ অনুভব করবে সে দিন খাতা কলম নিয়ে বসে যেও। যখন মনের গভীরে প্রচন্ড পরিমাণ আঘাত পাবে সে দিন খাতা কলম নিয়ে বসে দেখো, লেখা কিভাবে আসে?
আসলেই তাই মানুষ যখন ব্যথা পায়, তার চোখের পানি ও কলমের কালি মিশে যায় তখন লেখা আসে। ঠিক এই উত্তর টির ই যেন অপেক্ষা করছিলাম বহু দিন যাবত।
অনেকেই তো অনেক ভাবে ব্যথা দেয়, কিন্তু ব্যথা তো লাগেনা, হয়ত ব্যথা পাওয়ার কৌশল জানা নেই তা অনুভব করা হয়ে উঠেনা, মুখে স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে সেই ব্যথা টুকু শুষে নিতে হয় নিজের মধ্যে যেভাবে শুষে নেয় কাগজ টপকে পড়া পানি বা কালি কে।
যখন কেউ আগুনে আর্তচিৎকার করে, তখন সবাই ছুটে অাসে, এবং উদ্ধার করে, কিন্তু ব্যথার দহনে দগ্ধ হৃদয়ের কাতর ধ্বনী কেউ শুনতে পায়না। কিন্তু হৃদয় যখন ব্যথা পায় তখন কেউ কি তা দূর করতে পারে তিনি ছাড়া?
বলছিলাম হৃদয় গভীরের ব্যথার কথা, যে ব্যথা প্রতি টি মানুষ তার জীবনে কম বেশি পেয়ে থাকে। হৃদয়ের এই ব্যথা কে দূর করার জন্য মানুষ কত কিছু না করে থাকে। এক টুকরো প্রশান্তির জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে, তবু তাদের ব্যথা লাঘব হয়না। যারা তাদের জীবনে হৃদয় বেদনায় ভুগে, অস্থিরতায় হাসফাস করে, তাদের অধিকাংশ ই তাদের জীবনে হতাশার অনলে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে, তারা জানেনা মুক্তির পথ কোথায়? জীবনের প্রতি তাদের কতইনা অভিযোগ, কেন জীবন এমন হয়? প্রত্যেকের জীবন তো কত সুন্দর! তবে কেন আমার জীবন এমন? জন্মই কি তবে বৃথা? পৃথিবীতে জন্ম নেয়াটাই তবে অপরাধ?
জীবনের বাঁকে বাঁকে এমন কত অহেতুক হতাশার ভাবনা তাদের মনে দোলা দেয়,কেউ আল্লাহর সাহায্যে অসীম দয়া ও মায়া নিয়ে এই হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে পারে, কেউ পারেনা, জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইতিহাসের অতল গভীরে হারিয়ে যায়। হতাশার জীবন কেউ চায়না, সবাই চায় শান্তিময় পবিত্র জীবন।
একজন আরব কবী বলেছিলেন;
হে অভিযোগ কারী! তুমি অভিযোগ করছ, অথচ তোমার অভিযোগ করার কোনো কারণ নেই। সুস্থ অবস্থায় তুমি অভিযোগ করছ, অসুস্থ হয়ে গেলে তবে কি করবে তুমি?
তুমি কি শুধুই গোলাপের কাঁটা দেখতে পাচ্ছ? আর ফুলের উপরে মালার মত শিশির বিন্দু দেখতে পাচ্ছনা??
জীবনে যারাই খুব বেশি হতাশা বিষণ্নতায় ভুগে তারা ভুলে যায় দুনিয়ার এই জীবন ফুলের বিছানা নয়। প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট বিপদ অাপদ, ব্যথা বেদনা,বিষণ্নতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরুপ,অথবা আল্লাহর একান্ত প্রেম ও মায়া দিয়ে বান্দা কে গুনাহের গান্দেগী থেকে পবিত্র করার জন্য বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ যদি চাইতেন তবে কি পারতেন না তার বান্দাকে গুনাহের মাঝে ডুবিয়ে রেখে, দুনিয়ার জীবনে সুখ শান্তিতে রেখে আখেরাতে কঠোর ভাবে পাকড়াও করতে?
যারা আল্লাহর প্রিয় আল্লাহ তাদের দুনিয়ার জীবনে এভাবেই নানা রকম কষ্ট দেন,দিতেই থাকেন, কষ্ট দিয়ে দিয়ে তাদের কে পবিত্র করে নিজের একান্ত করে নেন। যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা,যারা আল্লাহ কে ভালোবাসে তারা চরম বিপদেও আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, তারা কখনো ই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায়না, তারা বিশ্বাস করে নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে কেউ পাশে থাকুক বা না থাকুক, আমার আল্লাহ কখনো ই আমাকে দূরে ফেলে দিবেন না। হৃদয় ভাঙ্গা আর্তনাদ কে তিনি কখনো বিফলে যেতে দিবেন না, তিনি যে দয়াময়,প্রেমময়!
ইব্রাহীম আঃ কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন حسبنا الله و نعم الوكيل.
যার ফলে আগুন তার জন্য শান্তি ও শীতল দায়ক হয়ে গিয়েছিল। যখন তাকে নিক্ষেপ করা হচ্ছিল তখন জিব্রাঈল আঃ বলেছিলেন আপনি কি আমার কাছে কিছু চান? তখন তিনি বলেছিলেন আপনার কাছে নয়, আমি আমার আল্লাহর কাছে চাই।
মূসা আঃ কে যখন তার শত্রুরা পিছন থেকে ধাওয়া করছে, সামনে তার বিশাল সাগর, তখন তিনি বলেছিলেন আমার আল্লাহ আমার সাথে আছেন, তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।
নবী রাসূল গণ কি জীবনে কম কষ্ট পেয়েছেন? সব চেয়ে বেশি বেদনা তো তারাই পেয়েছেন, তবু তারা হতাশ হয়ে পড়েন নি,হাল ছেড়ে দেননি। আল্লাহর প্রতি ভরসা ও বিশ্বাস ছিল তাদের জীবনে কানায় কানায় পূর্ণ।
তাই বলি বন্ধু জীবনে হতাশাকে স্থান দিওনা। সব ব্যথা বেদনা পৃথিবীর কারো কাছে বলোনা, কেউ সমাধান দিতে পারবেনা,কেউ কিচ্ছু করতে পারবেনা একমাত্র তিনি ছাড়া।
তাঁকে ডাকো। সেজদায় নিজেকে বিলিয়ে দাও তাঁর কাছে। পরম মিলনের, ও সুখের সান্নিধ্য যদি পেতে চাও তাঁকে আপন করে নাও। ছিন্ন করে দাও সকল সম্পর্ক। এবং নিজের অস্তিত্ব কে তাঁর সমীপে বিলীন করে দাও। তোমার অস্তিত্বের ধ্বংশস্তুপ থেকে গড়ে উঠবে তাঁর জ্যোতির্ময় আসন।
নিজেকে বিসর্জন করে দাও তাঁর জন্য, তিনি তোমাকে বরণ করে নিবেন, তোমাকে আলিঙ্গন করে নিবেন। তার জ্যোতির্ময়তায় তুমি হবে উদ্ভাসিত। নিজেকে অন্ধকার থেকে তাঁর আলোয় বের করে নাও। অন্ধকার থেকে বের হতে যদি না পারো তাহলে আলোর দেখা কিভাবে পাবে?
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন