কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কি বলগে ইন্টারনেট চালায়?
লিখেছেন লিখেছেন মায়িশাহ মুনাওয়ারাহ ১১ মার্চ, ২০১৪, ০১:২৯:০০ রাত
"ভাই একটা জিনিস জানার খুব ইচ্ছা। আপনি কি কোনো কওমি মাদ্রাসার ছাত্র?
আমি জতদুর জানি কওমি মাদ্রাসায় internet বা computer ব্যাবহার করতে দেওয়া হয়না। হেফাজত ইসলামের মতিঝিল আন্দলন এর সময় যখন তারা বলেছেন যে 'বলগ দিয়ে ইন্টারনেট চালায়' তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও কমে গিয়েছে। এর মাঝে আপনাকে দেখে একটু অবাক হচ্ছি। ভাই আপনি FB বা internet চালানো শিখলেন কিভাবে আর ভাই দেশের কওমি মাদ্রাসা এবং প্রযুক্তি শিক্ষার উপর কিছু যদি মন্তব্য করেন তাহলে কিছুটা খুশি হই। ধন্যবাদ।"
ভাইয়ের উত্তরে লেখা মন্তব্যটি নিম্নরূপ:
"প্রিয় ভাই, সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ আমি কওমী মাদ্রাসার একজন গর্বিত ছাত্র, এবং বর্তমানেও কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছি।
কওমী মাদ্রাসায় সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই, তবে এর অর্থ এই নয় যে, কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে না, বা করতে পারে না। কওমী মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র বর্তমানে ফেইসুবকসহ অন্যান্য সোশাল মিডিয়া ও ব্লগগুলোতে একটিভ। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ওয়েবসাইট খুলে অনলাইনে নিজেদের পদচারণা বাড়াচ্ছে কওমীর ছাত্ররা।
'বলগ দিয়ে ইন্টারনেট চালায়' - কথাটা একটা উদ্দেশ্যমুলক বিভ্রান্তি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষীয়ান শিক্ষকবৃন্দের অনেকেই কম্পিউটার ঠিক মতো চালাতে পারেন না, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানেন না। স্মার্টফোন দিয়ে যে কথা বলার চেয়ে বেশি আরো অনেক কিছু করা যায়, এটাও অনেকে জানেন না। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বর্ষীয়ান মানুষও কম্পিউটারের বিভিন্ন ব্যবহার ও ইন্টারনেটে ফেইসবুক ছাড়া অন্য কিছু করা তেমন পারেন না। অনেকে শিখছেন বৃদ্ধ বয়সে।
এই না-জানাটা কোনো দোষ নয়। ইন্টারনেট সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে খুব বেশি দিন হয় নি। বছর পনেরর মতো হবে, ইন্টারনেটের সয়লাব হয়েছে। আর আমাদের দেশে এর ব্যবহার বেড়েছে বড় জোড় গত পাঁচ-সাত বছরে।
ঠিক তেমনি, কওমী মাদ্রাসার একজন বর্ষীয়ান শিক্ষকের কাছেও বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়। অথচ নতুন প্রজন্মের আলিমরা স্মার্টফোনে মাকতাবা শামেলার মতো ডিজিটাল লাইব্রেরী নিয়ে ঘুরছেন, যা বর্ষীয়ানদের কাছে এখনো আশ্চর্য।
তো, মিডিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খুঁজে খুঁজে ওই শিক্ষকদেরই সাক্ষাতকার নিয়েছে, যাদের কাছ থেকে এমন কথা বের করতে পারবে, "বলগ দিয়ে ইন্টারনেট চালায়"। আমাদের মতো সারা দেশে হাজারো কওমী শিক্ষার্থী/ আলেম তখনো ছিলেন, আর এখন তো বেড়েছে আরো অনেক বেশি। কিন্তু মিডিয়া তাদের খুঁজে পায় নি (বা খুঁজে নি!)।
যাহোক, গত বছরের পর থেকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কওমী মাদ্রাসাগুলো আরো যত্নশীল হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে দশটি কম্পিউটার বিশিষ্ট একটি কম্পিউটার বিভাগ খোলা হয়েছে, ইফতা বিভাগে কম্পিউটার রয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ সহই, অনলাইনেও ফাতওয়া দেয়া হচ্ছে। জামিয়াতুল আস'আদেও ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রতিনিয়ত ফাতওয়া দেয়া হচ্ছে। জামিয়া রাহমানিয়াও অনলাইনে ফাতওয়া দিচ্ছে। হাটহাজারী মাদ্রাসা সম্প্রতি নতুন আঙ্গিকে অনলাইনে এসেছে। অনেক আলিম ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট করে সামনে আসছেন। ফেইসবুকে তো সক্রিয় আছেনই। ফেইসবুকে সারা দেশের কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরশক্ত প্লাটফর্ম রয়েছে। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে রানা প্লাজার আহত-নিহতদের পরিবারদেরকে সাহায্য করা হয়েছে, শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে, সম্প্রতি সেখানে সীরাত এ্যাপ ও ওয়েবসাইট বিনির্মাণ পরিকল্পনার প্রতিযোগিতা চলছে। কওমী মাদ্রাসায় কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু সেমিনারও আয়োজিত হয়েছে ও হচ্ছে।
সবশেষে বলবো, কওমী মাদ্রাসাগুলো মজলুম। যাদের ব্যাপারে একটি বারও সামান্যতম অন্যায়ের প্রমাণ পাওয়া যায় নি, তাদেরকে বারবার বিভিন্নভাবে জঙ্গী বলে সমাজের কাছে হেয় করা হচ্ছে। বলগ দিয়ে ইন্টারনেট চালানোর বক্তব্যের বিষয়টা এমনই।
আপনি চাইলে কওমী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে পারেন, অন্যদেরকেও জানাতে পারেন। একই সাথে বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায় প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে পারেন, বা প্রদানে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। অনেক মাদ্রাসার কম্পিউটার প্রয়োজন, ইন্টারনেট মডেম প্রয়োজন। স্কুলগুলোতে নানা উপায়ে বিভিন্ন সময় কম্পিউটার আসে, ল্যাপটপ আসে। কিন্তু কওমী মাদ্রাসাগুলোতে আসে না। কাজেই আমাদের দ্বীনী ভাই-বোনদেরকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।
কৃতজ্ঞতায়ঃ ইউসুফ সুলতান ভাইয়া। আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২০১৪ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ ওনাকে এবং আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক।
এই বেআক্কেলডা বোধ হয় এসব শুধু স্বপ্নেই দেখে। তারাতারি চোখের চিকিৎসা করো । মাতায় গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি হয়েছে।
ভাই লাঠীপেটা : আপনার প্রতি সম্মান জানিয়েই বলছি, আপনি কয়টা কওমী মাদরাসাকে চেনেন? কয়টা মাদরাসায় আপনার করা মন্তব্য অনুযায়ী জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালিত হতে দেখেছেন? না কি চিলে কান নিয়ে গেলো কেউ বলেছে, আর আপনি সেটা শুনেই যা খুশি মন্তব্য করা শুরু করেছেন?
আপনাদের সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমি নিজেও একজন কওমী মাদরাসার ছাত্র। আমাদের লেখাপড়ার শিডিউল এত বেশি কমপ্যাক্ট থাকে যে, বাজে কাজ করা কিংবা কারো গীবত করতে যাবার মতো কোনো ফুরসত থাকে না। যাদের বিশ্বাস না হয়, একদিন কষ্ট করে এসে যে কোনো কওমী মাদরাসায় পরীক্ষা করলেই দেখতে পারবেন যে তারা কত কষ্ট করে। ডাইনিং এ কত কষ্ট করে খায় এবং কত কষ্টে থাকে। এরপরও তারা পড়াশুনার প্রতি আন্তরিক। কেননা তাদের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর পথে থাকার জন্য এলেম শিক্ষা করতে হবে।
আপনি কোনো কওমী মাদরাসার ছাত্র পাবেন না যারা তাদের উস্তাদের সাথে বেয়াদবী করেছে বা অসম্মান করেছে। কেননা তাদের আকিদা আর সাধারণের আকিদার মতো নয়। সেখানে সত্যিকারের শিক্ষা প্রদান করা হয়।
এখন বলি "সাদাকাপড় এ যদি একটা দাগ পড়ে তথাপি সেটা সবার নজরেই আসে কিন্তু কালো কাপড়ের দাগগুলো স্টাইল হিসেবেই চলে যায় বলে বাস্তব জীবনে দেখেছি।
হা এটা ঠিক সবার ইন্টারনেট জানতে হবেনা বা ব্লগ জানার প্রয়োজন নেই কিন্তু যে বিষয়টা নিয়ে তুমি আন্দোলন করছো কিঞ্চিৎ তো তোমার জানা উচিৎ। জানোনা দরকার নেই । কিন্তু না জেনে তুমি কেনো চুপ থাকলেনা? কেনো ভুল উত্তর দিলে? তোমার একটি ভুলে সবাই ঐ সাদাকাপড়টার দিকে আঙুল তুলে দিয়েছে।
যতই সমর্থন করুন আপনারা আমি এই উত্তরকে ভুল হিসেবেই জানি। এবং এ বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই। এটাকে সমর্থন করার কিছুই নেই। হা এটা ঠিক এ বিষয় থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
কওমি মাদ্রাসায় আমি পড়িনি তবে আমার সমস্ত ভালোবাসা কওমী মাদ্রাসাকে ঘিড়ে।
তাই এটা বলি কম্পিউটার ইন্টারনেট মালিবাগের মত মাদ্রাসায়ই মানায়। কিন্তু এটা যদি অনুপযোগী যায়গায় চলে আসে ক্ষতিই বাড়বে। কিছু কথা চাপিয়ে রাখি যেগুলো বলা অনুচিৎ। তবে এটা বলতে পারি উপযুক্ত মাদ্রাসা গুলোতেই ইন্টারনেট এর সুবিধা দেয়া উচিৎ।
আল্লাহ কওমী মাদ্রাসাকে হেফাজত করুন।
সুন্দর পোষ্ট আবারো ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন