ইসলামে নারীর মর্যাদা ও স্বাধীনতা
লিখেছেন লিখেছেন মায়িশাহ মুনাওয়ারাহ ০৮ মার্চ, ২০১৪, ০১:১৫:১৮ রাত
স্বাধারণ থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নারীর মর্যাদা ও স্বাধীনতার দাবিতে সবাই সোচ্চার। ইসলাম নারীদের যে প্রাপ্ত মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে তা তাদের কাছে যথেষ্ট ও ন্যাহ্য মনে না হওয়ায় বর্তমান নারীবাদীরা নারীর সম্মান,অধিকার এবং স্বাধীনতা চাইছেন। কিন্তু নারীদেরকে তারা স্বাধীনতা দেয়ার নাম করে মূলত নারীদেরকে ভোগ্য পণ্য রুপে পরাধীনতার জালে আবদ্ধ করছেন। আজ দেখা যায় এক শ্রেণীর নারী সমাজ স্বাধীনতার নামে নারীকে ঘর থেকে বের করে তাদের কে ভোগ্য পণ্য রুপে ব্যবহার করছে। এমনকি পুরুষের ব্যবহৃত বস্তুর বিজ্ঞাপণেও আজ নারীদেরকেই মডেল রুপে উপস্থাপন করা হচ্ছে। শেভিং ক্রিম, মোবাইল,ল্যাপটপ,মোবাইল ফোন, সেন্ট,গাড়ির বিজ্ঞাপণেও নারীদেরকেই আবেদনময়ী রুপে দেখানো হচ্ছে। আর নারীরাও নিজেদেরকে মডেল হিসেবে পরিচিত হওয়াকেই প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা বলে মনে করছেন। কিন্তু এতে কি রয়েছে নারীর প্রকৃত সম্মান? এতে কি আছে নারীর প্রকৃত মর্যাদা?
জাহেলী যুগের অনুকরণে বর্তমান আধুনিক, সভ্য তথাকথিত কিছু নারী লোভী যারা বিভিন্ন প্রকার রসালো,ও আকর্ষণীয় শ্লোগানের মাধ্যমে নারীদের কে ঘর থেকে বাইরে এনে নারী স্বাধীনতার নামে যা কিছু করছে, তাকে কখনো নারী স্বাধীনতা বলা যায়না। বরং তা নারীর সম্ভ্রম হরণ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। নারীরা আজ মাঠে, ময়দানে, হাটে বাজারে,নগরে বন্দরে,গলির মোড়ে আকর্ষণীয় রুপে খোলামেলা চলাফেরা করছে। তারা পর্দাকে তো দূরে নিক্ষেপ করে দিয়েছেই, তাদের পোশাকের দৈর্ঘ-ও প্রস্থ ও দিনে দিনে কমতে কমতে শরীরের মধ্যভাগে এসে পৌছেছে। ফলে এর দ্বারা যারা নারী লোভী তারা আনন্দ উপভোগ করছে।যে নারীর হওয়ার কথা ছিল তার স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী, এখন তাকে পথে ঘাটে অন্য পুরুষের সর্বাঙ্গিনী হয়ে চলতে হচ্ছে। কিন্তু কেন? কেন আজ এই নারীর এই অধঃপতন? যে নারীর অঙ্গপ্রতঙ্গ বোরকা ও হিজাব দ্বারা আবৃত থাকার কথা ছিল, সে নারীকে এখন সুন্দরী প্রতিযোগীতার নাম করে দু টুকরো কাপড় ছাড়া আর কিছুই পড়তে দেয়া হয়না।নারী স্বাধীনতার নাম করে নিজের সৌন্দর্য অন্য পুরুষকে দেখানোর মাঝেই কি নারীর সম্মান নিহিত? এ সকল বেহায়াপনার জন্য নারীদের জীবন আজ দূর্বিসহ হয়ে উঠছে। যার কারণে আজ নারীরা সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারীকে যেখানে সেখানে নির্যাতন করা হচ্ছে, ইভটিজিং করা হচ্ছে, লান্ঞ্ছিত করা হচ্ছে। নারী হচ্ছে পুরুষের লালসার স্বীকার। কিংবা হত্যার স্বীকার। আত্মহত্যার স্বীকার। তাই বলা যায় আধুনিক সভ্যতা নারীকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। নারীর প্রকৃত মর্যাদা, ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে আলোচনা, ও সমালোচনার শেষ নেই। অথচ নারীর প্রকৃত মর্যাদা কে দিয়েছেন? কে নারীকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করে মহিমান্বিত করেছেন তা এখনো অনেক নারীরা অবগত নন। ফলে তারা স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভয়াবহ বিপদের দিকে অগ্রসর হচছে। প্রকৃত নারী স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায় তা ইসলামের সর্বশ্রেষ্ট মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ই নারীজাতিকে দিয়েছেন। ইসলাম পূর্বযুগে নারীদেরকে মানুষরুপে গণ্য করা হতোনা। স্ত্রী হিসেবে তারা ছিল চরম অবহেলার স্বীকার। মা, বোন, কন্যা কারো প্রতি ছিলনা সম্মান, শ্রদ্ধা। ছিলনা নারীদেরকে মানুষরুপে দেখার মন মানসিকতা। কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করাকে সমাজের কলঙ্কের বোঝা মনে করে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। সমাজে নারীর জন্ম গ্রহণকে অভিশাপ মনে করা হতো। ইসলামের আগমনে নারীর প্রতি এ অন্যায়,অত্যাচারের অবসান ঘটে। অন্ধকার যুগের সকল অন্যায় ও নির্যাতনকে নির্মূল করে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নারীর প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। ইসলাম আগমনের মাধ্যমে,নারীজাতি নিজেদের ধর্মে, শিক্ষাক্ষেত্রে, ব্যক্তি স্বাধীনতায়, পারিবারিক ক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, এভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে নারী ফিরে পেয়েছে তার প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার। ইসলাম নারীকে দিয়েছে ইজ্জত আব্রু সহকারে সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার পূর্ণ নিরাপত্তা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা পুরুষদের জন্য ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ ও শান্তির যে মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন, তা নারীদের জন্য ও করেছেন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ঈমানদার পুরুষ হোক, অথবা নারী, যে সত্ কাজ করবে আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো। তাদের পুরস্কৃত করবো তাদের উত্তম কাজের বিনিময়ে। ( সূরা নাহল, আয়াত ৯৭)
কুরআনের আলোকে হুজুর (সাঃ) পুরুষদের কে পরিবারের কর্তা, এবং পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষণের জন্য দায়িত্বশীল নির্ধারণ করেছেন।এবং নারীদের কে ঘরের রক্ষনাবেক্ষণ, ও সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন।
জাহেলী যুগে নারীদের জন্য শিক্ষার দ্বার বন্ধ ছিল, কিন্তু নবী করীম (সাঃ) বলেন ইলম অর্জন করা প্রত্যেক নারী পুরুষের উপর ফরজ। ( বুখারী)
তাই আমাদের সকল নারীদের কেই ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য। কারণ ইসলাম সম্পর্কে জরুরী ইলম অর্জন না করলে কেউ ইসলামের সৌন্দর্যতাকে কখনো অনুভব করতে পারবেনা। একমাত্র ইসলাম নারীকে এত মর্যাদা দিয়েছে যে, পৃথিবীর অন্য কোনো সমাজে তার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ইসলাম নারীদের কে যে স্বাধীনতা দিয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে দেয়নি। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে নারী স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, সীমালঙ্গন নয়।
সভা সমিতিতে, বক্তৃতা দিয়ে, বা মিছিল করে শ্লোগান দিয়ে নারীর স্বাধীনতা ও মর্যাদা পাওয়া যায়না। বরং নিজ অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে, নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে মা, স্ত্রী, বোন, ও কন্যা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মানটুকু আদায় করতে পারলেই আমাদের এই নারী আন্দোলনের প্রচেষ্টা সফল হবে। তাই ইসলামে প্রথম নির্দেশ "ইকরা" পড়। পড়ার মাধ্যমে, দ্বীনের প্রকৃত জ্ঞান লাভের মাধ্যমে আমরা যদি নিজেদের অধিকার, অবস্থা ও স্বাধীনতার সীমারেখার ব্যাপারে সচেতন হই, তাহলে আমরা নিজেরাও এই সুন্দর পৃথিবীতে সম্মানের সাথে জীবনযাপন করতে পারবো, এবং অন্যদেরকেও আগামীর জন্য আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলামের হুকুম অনুসারে জীবনযাপন করার তৌফিক দান করুন।আমীন।
বিষয়: বিবিধ
২৪০৭ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলোকিতো নারী
মুলঃ মাওলানা তারিক জামিল
অনুবাদঃ যায়নুল আবেদিন ।
আপনার পোষ্টটি পড়ে সেই বইটির কথা মনে পড়ে গেলো।
অনেক ধন্যবাদ আপু। জাজাকাল্লাহু খাইরান সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
আপনারা মুসলিম মেয়েরা কি পারবেন এই যে এত কথা বললেন তা দিয়ে সমাবেশ করতে ? ডিরেইলড নারীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে উনাদের মত প্রচেষ্টা চালাতে ?
এটা আজকের প্রথম আলোতে দিয়েছে । আপনি কি এই ৮৯% পুরুষের কথার সাথে এক মত ?
@হতভাগা ভাই আপনার কাছে জানতে চাই এ ধরনের সমাবেশ করায় ইসলামের হুকুম কি?
আর আপনি নিজেই কোনো একটি কমেন্টস এ বলেছেন যে নারীরা বাইরে না যাওয়াই ভালো।
তাহলে এই একই এবং আপনান স্ববিরোধী মন্তব্য বেশিরভাগ যায়গায় করা বেমানান না কি??
ব্লগে মায়িশাহ আপু একদম নতুন।
তাকে এরকম এটাকিং প্রশ্ন কি পড়ে করা যেতোনা?
কই নবীনদেরকে উৎসাহ দিবেন তা না ভড়কে দেয়ার চেষ্টা করেন।
নারীরা কি ঘরের বাইরে বের হয় না বোরকা - হিজাব করে ? ফিলিস্তিন , মিশর - এসব দেশগুলোতে কি আমরা নারীদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে দেখিনি ইসলাম বিরোধী নেতাদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ?
বাংলাদেশের মুসলিম মেয়েরা ওদের থেকে ভিন্ন কিছু ?
পশ্চিমা মেয়েরাও তো মাস খানেক আগে কোন এক মুসলিম মেয়ে হিজাব করার কারণে ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার হলে তার সমর্থনে একদিনের জন্য হিজাব পরিধান করেছিল ।
আমাদের ইসলাম মনঃষ্ক আপুরা এরকম একটা করে দেখাক না ।
গান , নাচ , অভিনয়ের প্রতিযোগিতায় তো জানপ্রাণ দিয়ে ফেলে । পড়াশুনা , চাকরি এসবের জন্য বাইরেই যাতায়াত করে ।শাহরুখ / অক্ষয় এলে তো তাদের সাথে নাচতে স্টেজে পর্যন্ত চলে যায় । ঘরেই আটকে রাখা যায় না ।
শুধু মাত্র ইসলামের জন্য নামতে বললে তখন ঘর খুব আপন হয়ে যায় ।
কেন ভাই , আমি প্রথম আলোর যে অংশ আন্ডারলাইন করে দিলাম সে ব্যাপারটা কি মিথ্যা ?
সত্য কথা বলাটা কি এটাকিং হয়ে যায় ? নাকি সত্যের মুখোমুখি হওয়াকে আপনারা এটাকিং বলে মনে করেন?
অনেক সুন্দর লিখেছেন খুব ভাল লাগল.
সব দলিল উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে কীভাবে নারী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলো এবং আজকের নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং এর জন্য কারণ কী? কীভাবে এসব থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।
বইটি পড়ে দেখার আমন্ত্রণ রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন