আপনার শিশু সন্তান টিভিতে কি দেখছে? সচেতন হোন, উদাসীনতা সন্তানের খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে!
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:১৫:০৭ সকাল
আমাদের প্রত্যেকের ঘরে একটা টিভি না রাখলেই নয়। শত ব্যস্ততার মাঝে নিজে এবং সন্তানদের চিত্ত বিনোদনের জন্যই যন্ত্রটি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সন্তানরা চিত্তবিনোদনের সুস্থ অংশটা গ্রহণ করছে নাকি অসুস্থ অংশটাকে গোগ্রাসে গিলছে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ আছে তো? যদি আপনার সেদিকে খেয়াল এতো দিন না পড়ে থাকে, তাহলে আজকেই ওদের পাশে বসুন, এবং দেখুন রিমোট কন্ট্রোলটা কোন কোন চ্যানেলে আটকে যাচ্ছে, ছোট্ট নিষ্পাপ চোখগুলো কিভাবে দূষিত হচ্ছে। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, হয় কার্টুন চ্যানেল নয়ত হিন্দী গান অথবা মুভি দেখছে, এবং ঘুরে ঘুরে এসবেই ডুবে থাকে।
আমার বেশ কিছু আত্মীয় ঢাকায় থাকাতে তাদের বাসায় অনেকবার অনেক দিন থাকার সুযোগ হয়েছে, আমি দেখেছি, অভিভাবকরা বাচ্ছাদের পড়াশোনা, হাউজ টিউটর রেখে ভালো রেজাল্ট করানোসহ সার্বিক যত্ন নেয়াতে অনেক বেশি সচেতন, কিন্তু টিভিতে বাচ্ছারা কি দেখছে, সে বিষয়ে কারো মাঝে সচেতনতা লক্ষ করি নাই। বাচ্ছারা হিন্দী গান, ফিল্ম দেখে যাচ্ছে তো দেখেই যাচ্ছে। ভাত খাইতে বসছে কিন্তু টিভিতে চোখ সরাতে পারছে না। বারবার ডাকাডাকি করেও ভাত খাওয়াতে পারছে না, এ যেন এক কঠিন নেশা।
এভাবেই তারা অভ্যস্ত হচ্ছে অসুস্থ বিনোদন, পরিচিত হচ্ছে অশ্লীল দৃশ্যের সাথে, এবং তাদের চোখ অভ্যস্ত হচ্ছে এসব দেখতে, তাতে করে অশালীন পোশাকে চালচলন, অসামাজিক কাজ কর্ম নিজে করলে এবং অন্যদেরকে করতে দেখলে তার কাছে পাপ মনে হচ্ছে না, সব কিছুই স্বাভাবিক মনে হয়। বরং এসব করতে বাধাগ্রস্থ হলেই তার কাছে অস্বাভাবিক লাগে।
আপনারা হয়তো বলবেন, এখানেও ভারত বিদ্বেষ! আসলে বিষয়টা তা নয়। হাতে গোনা দু চারটা ছবি ছাড়া বাকি সব ছবিতেই অশ্লীলতায় ভরপুর, অশ্লীলতা না থাকলেও সংলাপে থাকে অশ্লীল ইঙ্গিত, জঘন্য সব প্রেম কাহিনী। বলিউডের ছবিগুলোতে অশ্লীলতা ছাড়া শেখার মত কি আছে যা বলিউডের ছবি দেখার কারণ বা যুক্তি হিসেবে দেখাতে পারেন?
একেবারেই যে নেই তা নয়, আছে, কিছু ছবিতে ভালো কিছু মেসেজ থাকে, তবে ছবিতে অশ্লীলতার ভীড়ে সে সুন্দর মেসেজটা অনেক সময় ম্লান হয়ে যায়।
আমরা যারা হিন্দী ছবি দেখি, তারা নানা কারণ দেখাই, যেমন বিদেশি ভাষা শেখা, তাদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়া, ভালো কোন বার্তা দিলে সেটা গ্রহণ করা, তাদের কাহিনী সংলাপ ইর্ষণীয়, আর চিত্ত বিনোদন ইত্যাদি কারণে। তবে যত কারণই দেখাই না কেন, স্বীকার করি অথবা না করি, সত্য এটাই যে, সুন্দর কাহিনী আর সুন্দর সংলাপের সাথে চোখ শীতল করা, হৃদয় মনকে অস্থির করে তোলা অশ্লীল অথচ আকর্ষণ করার মত দৃশ্যগুলো আছে বা থাকে বলেই হিন্দী ছবি নিয়ে পড়ে থাকা। কোন ছবিতে যদি অশ্লীল দৃশ্য নাও থাকে, গানের মধ্যে থাকাটা অবশ্যম্ভাবী।
হয়তো বলবেন, বাঙলা সিনেমাতেও তো খারাপ দৃশ্য থাকে, খারাপ দৃশ্যের জন্যই যদি হিন্দী ছবি দেখা, তাহলে বাঙলা নয় কেন? এর জবাব হল, বাঙলা ছবিতে খারাপ দৃশ্য থাকলেও কাহিনী, সংলাপ, নায়িকা, অথবা খারাপ জিনিসটাকেই উপস্থাপনে অদক্ষতাই হিন্দী পাগল দর্শকদেরকে বাঙলা ছবি টানতে পারে না।
যাই হোক, বলছিলাম, শিশুরা যে টিভির সামনে বসে থাকে, এটা ওটা দেখে, মজে থাকে, কিসে মজে থাকে, তা দেখা কি অভিভাবকের দায়িত্ব নয়? আমাকে একজন বলেছিল, অশালীন পোশাকে মেয়েদের দেখলে যদি পুরুষ কর্তৃক ধর্ষণ, ইভ টিজিং, যৌন হয়রানী ইতাদি বেড়ে যায়, তাহলে তো তাদের বেশি বেশি পর্নো ছবি, অশ্লীল, গান, ছবিতে অশ্লীল দৃশ্য বেশি দেখা উচিৎ, এবং মেয়েদেরও বেশি বেশি ওইসব পোশাক পরানো দরকার, কেননা ইউরোপ আমেরিকাতে ছেলেরা মেয়েদের এভাবেই দেখে অভ্যস্ত, কই তারাতো মেয়েদের দেখলে বাংলাদেশিদের মত এতো উত্তেজিত হয়ে যায় না।
আমি জবাবে বললাম, ইউরোপ আমেরিকাতে ধর্ষণের হার কম নয়, যদিও মেয়েদের উত্তেজক পোশাক তাদের চোখ সয়ে গেছে, কিন্তু তাদের ধর্ষণের হাত থেকে মেয়েরা মুক্তি পায়না, তবে সেখানে ধর্ষণের ধরণটা আলাদা, এই যা। আচ্ছা, ধরে নিলাম, ইউরোপ আমেরিকার মত অভ্যস্ত করতে হলে লাইফ স্টাল তাদের মতই হওয়া উচিৎ, কিন্তু কেউ ধর্ম মেনে থাকে, তাহলে তো তাকে অশ্লীলতা পরিহার করতে হবে, অশ্লীলতা তাকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে বিরত রাখে নাকি আরও বেশি নিমজ্জিত করে, তার চেয়ে বড় কথা এটা আল্লাহর নির্দেশ, সুতরাং মানতে হবে।
শিশুরা টিভিতে নিয়মিত দেখতে থাকলে বড় হয়ে তারা কাউকে ধর্ষণ হয় তো করবে না, করার দরকারও হবে না, তবে তারাই তাদের মাঝে পরস্পরের সম্মতিতে অবাধ যৌনতা চালিয়ে যাবে। তাহলে আফটার অল রেজাল্ট কিন্তু একই।
তাহলে অভিভাবকরা কি করবেন? টিভি বন্ধ করে রাখবেন, রিমোট লুকিয়ে ফেলবেন, কড়া ভাষায় বকা দেবেন? না, এসব করতে হবে না। টিভি যখন ঘরে এনেছেন, না দেখিয়ে পারবেন না। তাই তাদের পরিচত করান এমন সব প্রোগ্রামের সাথে যা তাদের মন মগজে প্রভাব বিস্তার করে উত্তম মানুষরূপে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
বাঙলাদেশি চ্যানেল গুলোতে যইও আজে বাজে আয়োজনে ভরপুর, তবুও ভালো জিনিস যে একেবারে পরিবেশন করে না, তা কিন্তু নয়। যেমন ইসলামী সঙ্গীত, কোরআন তেলওয়াত, কুইজ প্রতিযোগিতা, ছোট্টদের অনুষ্ঠান, ভালো মানের কার্টুন ইত্যাদি। আরও অনেক রুচিশীল অনুষ্ঠান, প্রোগ্রাম থাকে, যা আপনি ঘাঁটলেই পেয়ে যাবেন।
অভিভাবক হিসেবে আপনার গুরুদায়িত্ব সকাল বিকেল পড়তে বসা, নিয়মিত খাওয়ানো, তাদের জন্য শপিং করাতেই সীমাবদ্ধ রাখবেন না। তার চলন, বলন, রুচি, অভ্যাসসহ সার্বিক বিষয়ে আপনার থাকবে তীক্ষ্ণ নজর, সতর্কতা, সচেতনতা। যখন শাসনের প্রয়োজন শাসন করে, আর কখনো আদর ভালোবাসা দিয়ে তাকে উত্তমরূপে প্রতিপালন করুন।
এমন সন্তানের দিকে তাকিয়ে বুকটা খুশিতে ভরে যাবে না বলুন! অবশ্যই এমন সন্তান হবে আপনার চক্ষু শীতলের কারণ। তাহলে মা-বোনদের একটু কষ্ট তো করতে করতেই হবে। বাবাদের বাদ দিয়ে দিলাম, তাই না! না, বাবারাও শিশু সন্তানের সব বিষয়ে মনোযোগী হবেন, নিশ্চয় হবেন।
আমি কিন্তু অবিবাহিত, তাই শিশু সন্তানদের টিভিতে চলা অশ্লীল বিনোদন থেকে আরও কি কি উপায় অবলম্বন করা যায়, যদি পরামর্শ দিতেন, তাহলে পাঠকরা উপকৃত হতো।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পিচ্চিপাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করুন তাহলে এসব থেকে বহুলাংশে বের হয়ে আসা যাবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন