সরল স্বীকারোক্তি : অবৈধ ফোনালাপ, চটি পড়া, পর্ণ দেখাসহ যেসব পাপ কাজে কম বেশি আমরা সবাই নিমজ্জিত ........
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:০৯:৫৩ রাত
আমার আজকের লেখাটা হয়ত অনেকে পড়তেই চাইবেন না, আবার কেউ পড়লেও মন্তব্য করবেন না, আর যদি মন্তব্য করেও থাকেন, হয় তো আমাকে আচ্ছা মত বকা দিতে একটুও কার্পণ্যতা করবেন না। আমি মানুষটাকে যদি এতো রোগে আক্রান্ত করে, তাহলে আমার মত ঠিক একই মাটিতে গড়া অন্যরা কেন এইসব রোগ থেকে মুক্ত থাকবে? আমি প্রেম করেছি, পার্কে গিয়েছি, শরীর নিয়ে খেলেছি, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া উশৃংখল উর্বশীদের বিশেষ অঙ্গ গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখিছি, চুরি করে সিনেমা হলে গিয়েছি, খুব ছোট বেলায় খেলা ধুলা করতে গিয়ে খেলার সাথীদের সাথে সহবাস করেছি, যদিও তা পূর্নাঙ্গ ছিলনা, তবুও চেষ্টা করেছি, উলঙ্গ নারীর নগ্ন মূর্তী ভিউ কার্ডে দেখেছি, বড় হওয়ার পর পর্নোতে আসক্ত হয়েছি, ফুটপাত থেকে চটি সাহিত্য কিনেছি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে কথা বলেছি, বেশি মেসামাল হয়ে গেলে স্বমেহন করেছি ইত্যাদি।
তা, আমি একাই বুঝি সব করেছি, অথবা আমার মত সব খারাপ মানুষেরাই শুধু এইসব করেছে? জি না, বর্তমান সময়ে ভাল খারাপ অধিকাংশ মানুষেরাই এইসব রোগে আক্রান্ত। আমি একা হলে, এ নিয়ে লিখতাম না, কিন্তু স্ববাই আক্রান্ত বলেই সরল স্বীকারোক্তি নিয়ে লিখার সাহস পাচ্ছি।
আমি জানি, পাপ করে পরে তা লোকের কাছে বলে বেড়ালে আরও বেশি পাপ হয়। তাই আপনারা আপনাদের পাপের লিস্ট হাজির করার দরকার নাই। তবে আমি যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরব, সেসব বন্ধে অথবা এসবের হার কমাতে পরামর্শ তো দিতে পারেন।
আপনি এইসব করেন না তো কি হয়েছে, হয়তো আপনার সহজ সরল, ভদ্র, ধার্মিক ভাই-বোন-বন্ধুটিই এমনসব পাপাচারে লিপ্ত, যা কেউ দেখে না, দেখার সুযোগও নেই, তাই সবার কাছে ভাল। যেমন, মোবাইলে অথবা কম্পিউটারে দরজা বন্ধ করে, ফোল্ডার লক দিয়ে, অথবা এমন সিম দিয়ে মোবাইলে মেয়েদের সাথে প্রেম করছে কথা বলছে, যার নাম্বার আপনারা কেউ জানেন না, শুধু তারা দুজনেই জানে, ওয়াশরুমে অথবা অন্ধকারে করে যাচ্ছে নিত্যদিন স্বমেহন, তাহলে পরামর্শটা তো আসা উচিৎ।
এইতো ক’বছর আগেও আমি যখন রাস্তা দিয়ে হাটঁতাম, মেয়েদের পেছন অথবা সামনের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতাম, তারপর কিছু করার নেশা পেয়ে বসত, যদিও করা হতো না। এইভাবে দেখেই যেতাম। আর হ্যাঁ, এই তাকানো কিন্তু সব মেয়ের দিকে ছিল না, শুধই অস্থির পোশাকে অস্থির মেয়েদের দিকে। এখন ভুলেও ওভাবে তাকাইনা, কিন্তু অন্যদের তাকানো দেখি, দেখে আমার সেইসব দিনগুলোর কথা মনে পড়ে আর ভাবি, খারাপ আমি একা নই।
এখন দেখি জোয়ান, পৌর, বৃদ্ধ, এমন কি মৌলভীরাও মেয়েদের বিশেষ বিশেষ অঙ্গগুলোর দিকে এমন ঘেট ঘেট করে তাকিয়ে থাকে, দেখে না হেসে পারিনা। খুব মানুষ আছে, যারা নিজেদের চোখকে হেফাজত করে অথবা করতে পারে।
আমরা যখন বাচ্ছা ছিলাম, তখন এক সাথে খেলাধুলা করতাম, মাঝে মাঝে বউ জামাইও খেলতাম, তখন বড় মানুষের মত করেই পরস্পরের সাথে সহবাসের চেষ্টা করতাম, এমন খেয়াল, বুদ্ধি ছোট্ট বয়সে আমাদের কোথা থেকে এসেছিল, এখনো তা রহস্য। তবে এতোটুকু অনুমান করতে পারি, আমাদেররই কারো বাবা-মা অথবা বড়রা আমাদেরই সামনে সহবাস করেছে, ছোট্ট মনে করে নিজেদের আড়াল করেনি, যা আমরা শিখে নিয়েছি। আমি বাংলাদেশের ছেলে, এবং সভ্য সমাজের অংশ, এমন স্থানেই জন্ম গ্রহণ করেছি, তাই আমি বা আমাদের ছোট্ট সার্কেলটা যদি তখনি এতো বদ হয়ে থাকি, অন্যেরা কেন নয়?
আমার খুব মনে পড়ে, একদিন বাড়ির ছাদের উপরে কয়েক জন মিলে খেলা করছি, বয়স তেরো চৌদ্দ হবে, নিচ দিয়ে এক মেয়েকে যেতে দেখে বলি, এই তুমি কি আমার সাথে এইসব...। করবে। মেয়েতো রেগে মেগে আগুন, এটা বাড়ির মালিক দেখে ফেলেছে। ছি ছি ছি কি লজ্জা! অনেক বছর পরে আমাদেরই বাড়ির এক পিচ্ছি চাচাতো ভাই যখন পিচ্ছি একটা একটা মেয়ের সাথে রাস্তার পাশে এইসব করা শুরু করেছে, তখন অন্য এক মহিলা তা দেখে ছেলেটার মায়ের কাছে নালিশ করেছে। আমি শুনে ভাবলাম। হায়রে ছোট্টো বেলায় বদ শুধু আমরা একাই ছিলাম না, এখনো আছে, বধ করি সব সময় থাকবে!
মহিলারা যখন পুকুর ঘাটে গোসল করতো, চুপি চুপি আমি দেখতাম। শুধু কি আমি একাই? না না না, এমন অনেককে দেখেছি মহিলাদের গোসল দেখতে বা উঁকি ঝুকি দিতে অথবা চলার পথে ফাঁকে ফাঁকে মহিলা ঘাটের দিকে তাকাতে, তাদের কিন্তু সবাইকে কিন্তু লোকে ভাল বলেই জানত।
আগে বাজারে কার্ড বিক্রি হতো, যেগুলোতে মেয়েদের নগ্ন ছবি থাকতো, এক দুইটাকা দিয়ে কিনে কিনে সেগুলো দেখতাম। শুধু কি আমি একাই? না না না, দল বেঁধে কিনতে বের হতো সবাই। তারা সবাই কি নীচ বংশ, অশীক্ষিত পরিবার থেকে পয়দা হয়েছে, না, অধিকাংশই ভদ্র সভ্যো ফ্যামিলির ছেলে পেলে।
আমি কিছু দিন আগে ল্যাপটপে সমস্যা থাকায় সাইবার ক্যাফেতে যাই কিছু জরুরী কাজ সারার জন্য। সেখানে দেখলাম অনেক মাদ্রাসা ছাত্র ঢুকছে, বাইর হচ্ছে, জোয়ান, পৌর, নানান বয়সের মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আমার কৌতূহল হলে চার পাঁচটা কম্পিউটারের হিস্ট্রি ঘেঁটে দেখি, সব গুলোতে পর্নো ছবির তালিকা, যা কিছু আগে এই ভদ্র মানুষগুলো দেখে গেছে! তারপর অনেক বন্ধু বান্ধব কে দেখি হেদায়েত বাণী ছাড়তে, অথচ ওদের কম্পিউটারেও এসবে ভরা। তাহলে আমি একাই খারাপ নই! খারাপটা সবাইকেই ঝেঁকে বসেছে।
বন্ধুদের একজন হঠাৎ করেই বলে বসল, দোস্ত, স্বমেহন কিন্তু জায়েজ আছে! কিভাবে? আল্লামা ইউসুফ কারযাবী এটাকে জায়েজ বলেছেন। আরেক জন বৈঠকে আলোচনার মাঝে হঠাৎ বলতেছে, স্বমেহন কিন্তু জায়েজ নেই, যদিও তা নিয়ে কোরআন হাদীসে স্পস্ট কিছু লেখা নেই। আরেক জন আমাকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা, স্বমেহন করা কি ঠিক? এই মানুষগুলোর সবাই ইসলামকে খুব অনুশীলন করে। তাহলে এটা ভাবা বেশি হবে না যে, তারা সবাই কম বেশি স্বমেহন করে বা করেছে। যদি না করে থাকে তাহলে এটা নিয়ে কেন এতো জিজ্ঞাসা।
এটাতো এমন এক বিষয়, যা ব্যক্তি ব্যতিত আর কারো জানার কথা নয়। কেননা এই কাজটা ব্যক্তি ওয়াশ রুমে বা এমন জায়গায় করে তাতে দ্বিতীয় কারো জানার কথা নয়, এবং নিজের এই লজ্জার বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করাও ইম্পসিবল। প্রেম ভালোবাসার কথা সবাই শেয়ার করে কিন্তু স্বমেহনের কথা শেয়ার সম্ভব নয়। তাহলে বুঝা গেল রোগটা সবাইকে ভালভাবেই আক্রমণ করেছে।
নিষিদ্ধের জিনিসের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ আমি খুব কমই অগ্রাহ্য করতে পেরেছি। জানতাম, শিখেছিও সিনেমায় ছবি দেখা ভাল নয়, পাপ হয়, মাদ্রাসার ক’জন মিলে সিনেমা হলের কাছে পাঞ্জাবীটা খুলে টুপিটা পকেটে নিয়ে গেঞ্জি পরে ঢুকে পড়তাম, আবার এটাও মনে হতো, মানুষের বলতো, “হুজুররা টুপিটা খুলেই সিনেমায় ঢুকে যায়’, কথাটা যে মিথ্যে নয়, আমি এবং আমরাই যার প্রমাণ। কেউ ভুল বুঝবেন না, আমি নিজেও মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। তবুও হেদায়েত হতে পারিনি।
আমার অনেক বন্ধু বাজারে বাসা নিয়ে বা হোস্টেলে থাকত, যারা দল বেঁধে পর্ণ ভিডিওর সিডি ক্যাসেট নিয়ে অনেক মজা করে দেখত। আমি যদিও তখন এইসবে খুব একটা সাহস ছিল না, কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে এসে পুরাই পাকা হয়ে গেলাম। বন্ধুরা শিখিয়ে দিতো অথবা সামনেই চটি সাহিত্য এবং পর্নো ভিডিও দেখত।
ইউনিভার্সিটির ছাত্রাবাসগুলোতে সরকার ফ্রী ওয়াফাই দিয়েছে, আর তাতে অধিকাংশ ছেলেরাই, যাদের স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ ছিল, পর্নো দেখে সময় কাটাতো। হয়তো বলবেন, আপনি একা খারাপ বলে সবাই কি খারাপ হয়ে গেছে। অনেককেই দেখেছি, খুব ভাল ছেলে, মেয়েদের সাথে কখনো মিশে না, কিন্তু পর্নো গার্লদের সাথে নিয়মিত দেখা না হলে চলেই না।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে, প্রেম করে না, কিন্তু মোবাইলে মেয়েদের সাথে কথা বলে, আবার কেউ মোবাইলে কথা বলে, প্রেম করে কিন্তু বা হোটেলে যায় না, তবে ফোন সেক্স করে যোউন ক্ষুধা ঠিকই মিটিয়ে নেয়। এই রোগে আক্রান্ত সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়।
যারা অনেক বছর ধরে স্ত্রী থেকে দূরে থাকে, বোধ করি, তারাও কম বেশি পর্নো দেখে, স্বমেহন করে, অথবা নিজের বউয়ের সাথে ফোন সেক্স করে, কেননা এই নিয়ে অনেকেই মাওলানাদের প্রশ্ন করে, হুজুর, আমি দূরে থাকি বলে বউয়ের সাথে সহবাস করতে পারিনা তাই ফোনে অথবা কম্পিউটারে আমরা পরস্পরকে বিষেষভাবে দেখি এবং স্বমেহন করি, তা কি জায়েজ আছে? বুঝেন অবস্থা!
আসলে ভালোটা কে? কেউ কি নেই ভালো? আছে, অবশ্যই, তবে উপরে উল্লেখিত সব গুলো রোগ থেকে মুক্ত মানুষের সংখ্যা এতোই নগন্য যে, তাদের দূরবীক্ষণ দিয়ে খুঁজে নিতে হবে। কেউ একদিকে ভালো হলে অন্যো দিকে ঠিকই নষ্ট। কেউ পার্কে শরীর দেয় না প্রেমিককে, কিন্তু স্কাইপিতে ঠিকই দেখায়। কেউ দশ টা প্রেম করে না ঠিক, কিন্তু একটা করে এবং এটাকে জায়েজ করে নিয়ে বিয়ের আগেই এটার সাথে কাম সারা। কেউ হোটেলে যায় না কিন্তু ফোনে সব করে নেয়।
কেউ মোবাইলে কথা বলে ঠিকই, কিন্তু ফেসবুক বা অন্য সোশাল মাধ্যমে ম্যাসেজিং করে। কেউ ভরা যৌবনের জ্বালায় শারীরিক মেলামেশা করে না কিন্তু স্বমেহন করে জ্বালা মেটায় এবং এটাকে জায়েজ মনে করে বা করে নেয়। এইভাবে আমি, আমরা নানান রোগে আক্রান্ত, এইসব থেকে বের হতে পারছিনা। স্বীকার করেন আর না করেন, স্রল স্বীকারোক্তি শিরোনামটি আমি এমনি এমনি, দেইনি, আমি আমরা করি বলেই এইসব কথা আমি বলছি।
এইবার আপনারা কমেন্টে আমাকে জানান, এসবের কি৯ সমাধান হতে পারে। আপনাদের কমেন্টের পরেই আমি চেষ্টা করবো কিছু সমাধান বের আমার লেখাটি এডিট করে তার সাথে সংযুক্ত করে দিতে।
আর, হ্যাঁ, এই সবি আমার অতীত। এখন আমি সম্পূর্ণ না হলেও অনেকটাই এইসব থেকে মুক্ত। আপনারাও মুক্ত হবেন, এই কামনা করছি।
বিষয়: বিবিধ
৯০৩১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি বলবো
অনেক অনেক অনেক সুন্দর একটি লিখা …
এই ধরনের লিখা লিখার সাহস সবার থাকে না …
আল্লাহ আপনাকে , আমাকে , আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং সঠিক দ্বীনের পথে চলার তৌফিক দিন …আমিন
সুন্দর মূল্যায়নের অনেক ধন্যবাদ ভাই বিবর্ন সন্ধ্যা
আমিন আমিন আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন