মেয়ে সহপাঠী এবং শিক্ষিকাদের ছাত্ররা যেভাবে দেখে…….. একটি ক্লিয়ার কাট পর্যালোচনা

লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৫৯:২০ রাত



একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাছ থেকে ছাত্র ছাত্রীরা ভাল মানুষ হয়ে ওঠার দীক্ষা নিবে, এটাই তো হওয়া উচিৎ, কিন্তু সে শিক্ষা-দীক্ষা নিতে পারছে কোথায়! একজন শিক্ষিকা যদি উত্তেজক পোশাক পরে ক্লাস নিতে আসে, নিত্য নতুন বাহারি সাজে উঠতি বয়সী কিংবা যৌবনে পদার্পন করা ছাত্রদের সামনে হাজির হয়, একজন পুরুষ শিক্ষক যদি লেকচারের সময় মেয়েদের উপর থেকে দৃষ্টিটাকে সমান ভাগে ভাগ করে ছেলেদের উপর দিতে না পারে, তাহলে শুধু শিক্ষক পড়াবে, ছাত্র ছাত্রীরা জ্ঞান অর্জন করবে, কিন্তু সে জ্ঞান দিয়ে ভাল মানুষ কোন দিনও হতে পারবে না, পড়ার পাশা পাশি শরীর মেপে যাবে, তাছাড়া আর কিছু না।

যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, তখন আমাদের ক্লাস নিতেন দুজন ম্যাডাম, ইংলিশ মিডিয়ামে যাদের বলে মিস, আর ইউনিভার্সিটিতে ম্যাম, যাই হোক। একজন শাহানা, অন্য জন কলি ম্যাডাম। শাহানা কিছুটা যোগ্যতাসম্পন্ন হলেও কলি ম্যাডামের যোগ্যতার চেয়ে অযোগ্যতাই ছিল বেশ পোশাকও পরত নানা ঢঙে। তাই আমাদের বিরক্তিরও শেষ ছিল না। একদিন এক ছাত্রকে কলি ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করে, বলতো, প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন কত? ঝটপট উত্তর, ম্যাডাম আপনারটার আয়তন কত? ম্যাডাম রাগে দুঃখে, ক্ষোভে একটা শব্দও করেন নি, মাথা নিচু করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন!

তারপর আসি ইউনিভার্সিটি প্রসঙ্গে। ম্যাডামগুলো যখন ক্লাসে প্রবেশ করে, তখন অধিকাংশ ছাত্ররাই লেকচারের দিকে মনোযোগ না দিয়ে শরীর মাপতে শুরু করে। অবশ্য পোশাকে আশাকে এমন আকর্ষণীয়া করে রাখে নিজেদের, চোখ স্বভাবতই ঐ সব দিকে চলে যায়। উপায় নেই। একজন আরেক জনের সাথে বলে, ম্যাডামকে একদিন, শুধু একদিনের জন্য বিশেষভাবে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে ব্যক্ত করে। কিসের লেকচার কিসের কি!

এক ম্যাডাম ক্লাসে শাড়ি পরে, লেকচারের ফাকে ফাকে বারে বারে দুহাত তুলে চুল বাঁধে, আর তাতে ছাত্রদের সন্ধানী চোখগুলো অত্যন্ত সচেতন হয়ে ওঠে, যেন এই মুহুর্তটার জন্যই পুরো ক্লাসে অপেক্ষা করে থাকা! ম্যাডামও হয়তো ছাত্রদের চাহিদা বুঝে, তাই 'আলগা কর গো খোপার বাধন'। আলগা করে বারে বারে।

আরেক ম্যাডাম, কথা বলার আগেই হেসে দেয়, বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে পুরো গালে সে কি হাসি! ম্যাডামের রূপ লাবন্য দেখে পেট মন ভরে যায়, লেকচার আর পেটে ঢুকেনা। বন্ধুরা হলে এসে বলে, "ওহরে, মাথা পুরাই গেছে, আজকে ম্যাডাম যা দেখাইল, ইয়া বড় বড়…….. সারাক্ষণ চোখে ভাসে, ওহ, এমন ম্যাডামকে যদি বউ হিসেবে পাইতাম, আমার আর বেহেস্ত দরকার পড়তনা"।

আর ক্লাসের মেয়েদেরকে নিয়ে ছেলেরা যা ভাবে মন্তব্য করে, তা যদি মেয়েরা শুনত, কি হত? কিছুই হত না, মেয়েরা সবি শুনে, আমার তো মনে হয় ভালই লাগে। একদিন একটা মেয়ে ক্লাস থেকে বের হচ্ছে, তখন একটা ছেলেও পিছে পিছে যাচ্ছে, তাকে ধরে বললাম, এই, তুই কই যাস? দুহাত দিয়ে বড় বড়…….. দেখিয়ে বলল, আরে রাখ, যেতে দে, সিস্টেম করে আসি!

মীমের টা এতো বড়, সালমার ফিগার বারুত, নাজমা তো একটা খাসা…….. , ঐ দেখ, অমিরটা কত বড়, ভারে হাটঁতে পারে না! এইভাবে চলে মন্তব্য, খাওয়া পাওয়ার জ্বালা যন্ত্রণা, হতাশা। মেয়েদের নিয়ে ভাবনা, কথা, মন্তব্যে পরিচ্ছন্নতা দেখা যায় না খুব একটা। আর মেয়েরাও নিত্য নতুন সাজে প্রতিদিন এমন ভাবে হাজির ক্লাসে ক্যাম্পাসে, তা দেখে মন্তব্যের সৌন্দর্যও বেড়ে যায়।

সহ শিক্ষার এই এক মজা। চাইলেই করতে পারা যায় প্রেম, তারপর অনেক কিছু, সুযোগ বুঝে সদ্বব্যবহার। প্রেম করতে না পারলেও মেয়েদের দেখে ছেলেদের ভাবনাজুড়ে থাকে শুধু মেয়েরাই। মেয়েদের খবর বলতে পারিনা, তারাও কি ছেলেদের মত বিপরীত লিঙ্গ নিয়ে এমন মহৎ করে ভাবে, বলে, আক্ষেপ করে!

এখন নারীরা শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিচ্ছে, এটাকে অন্যসব চাকুরী থেকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ নাগরিককে শিক্ষিত করে তোলার প্রয়াসে, কিন্তু তারা শিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই, তবে ম্যাডামদের শরীর মেপে অন্য দিকে খুব অস্থির, বেপরোয়া, বিকৃত মানুসিকতায় সমানভাবে পাকা হয়ে উঠছে।

যেখানে, শিক্ষিকাকে মায়ের আসনে কিংবা বড় বোনের আসনে বসানোর কথা, সেখানে তাদের একটা শয্যা সঙ্গী ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না! কেন?

সবাই কিন্তু এইরকম নয়। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রদের সামনে একজন শিক্ষিকা একজন নারীই। প্রাপ্ত বয়স্কা ছাত্রীদের সামনে একজন পুরুষ শিক্ষক একজন পুরুষই, প্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রদের প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে সহপাঠী একজন মেয়েই, এবং এটাই প্রধান পরিচয়, তারপর শিক্ষিকা/শিক্ষক, অভিভাবক, গুরু, বাবার সমতুল্য, মায়ের মত, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই কার সাধ্য ছেলেদের মন থেকে তাদের শিক্ষিকা এবং মেয়েদের সহপাঠীদের নিয়ে এদিক ওদিক ভাবনা দূর করবে!

তাহলে উপায়? আমার কারো মনপূত নাও হতে পারে, তবুও বলি। একজন নারীর যদি সুযোগ থাকে, তবে তিনি মহিলা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদিতে চাকুরী নেবেন, ইউনিভার্সিটিতে যদিও সম্ভব না, সেখানে করা যেতে পারে, কিন্তু ছাত্রদের ম্যাডামকে নিয়ে এডিক ওদিক ভাবা, এটা ওটা মাপা থেকে ম্যাডামরাই নেবে, আমি নয়। আবার মহিলা স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা থেকে সব পুরুষ শিক্ষকগুলোকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে হবে, তবে বৃদ্ধ পুরুষ শিক্ষকদের রাখা যেতে পারে। মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইয়াং অথবা পৌঢ় পুরুষ শিক্ষকরা সাধু বাবা হয়ে থাকবে, এটা আমি বিশ্বাস করিনা। তাই তাদের চরিত্রকে শতভাগ পিউর রাখতে হলে চলে যাওয়াই উচিৎ।

বাংলাদেশে সরকারীভাবে বাধ্য বাধকতা আছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার, কিন্তু আপনি, আমি, তুমি, এমনি করে একজন ব্যক্তি যদি পুরুষ হয়ে মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না যাই, একজন মেয়ে হয়ে পুরুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না যাই, তাহলে কার বাপের ক্ষমতা, আমাকে আপনাকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবে। আমি ই তো হা করে থাকি, একটা চাকুরী হলেই হল!

আমার উপর এতোক্ষণে হয়তো অনেকে অনেক রাগ জমিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, ছেলে এবং মেয়ে ক্লাসমেইটরা ভাই বোনের মত হলেও কখনোই ভাই বোন নয়, তাইতো তারা যখন মনে চায় প্রেম করতে পারে, এবং করেও। শিক্ষিকা মায়ের মত হলেও কখনোই মা নয়, তাই শিক্ষিকার শরীর মাপে ছাত্ররা। শিক্ষক বাবার মত হলেও কখনোই বাবা নয়, তাই শিক্ষক বাবাই কখনো কখনো ছাত্রীকে ধর্ষণ করে, কেউবা বিয়ে করে।

আবার কোন মেয়ের যদি শিক্ষকতা করাই লাগে, তাহলে পর্দা মেইনটেইন করলে ছেলেদের মনে কুচিন্তা অনেকাংশে লাঘব করা গেলেও যেতে পারে। তবে তাতে কুচিন্তাকে শতভাগ দমানো যাবে না, একননা সেওতো একজন নারীই!

বিষয়: বিবিধ

৩৭৩০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360121
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৫৪
আফরা লিখেছেন : লিখাটা পড়তে আমার খুব খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই বাস্তব ----
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:৪১
298485
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ লিখেছেন : আমি দুঃখ প্রকাশ করছি....আপনার খারাপ লাগার কারণও বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এইরকম খোলামেলা ভাবে লিখতে হল।
360136
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:৫৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

আমরা স্কুল লাইফে এবং কলেজ লাইফে বেশ কিছু ম্যাডাম পেয়েছিলাম যারা ছিলেন পোশাকে অত্যন্ত জাহিলি আধুনিকা! যদিও উনাদের সাথে স্টুডেন্টরা দূরত্ব বজায় রেখেই সুশীল আচরন করতো!

সেদিন আমাদের স্কুলের রি- ইউনিয়ন এর ছবি দেখছিলাম, অবাক হয়ে দেখলাম দু একজন ম্যাডাম ছাড়া বাকি সবাই হিজাব করছেন, কেউ বোরখাও শুরু করেছেন আলহামদুলিল্লাহ! এতো ভালো লেগেছে !

সহশিক্ষার পক্ষে আমি কখনোই ছিলাম না!
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৯
298509
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম.
আপনার মন্তব্যটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো.

আরো ভালো আপনার প্রাক্তন স্কুলের শিক্ষিকাদের পরিবর্তনের কথা শুনে.
360140
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৪:২৫
জনগনমন লিখেছেন : সত্য কথাগুলো সঠিক ভাবে বলার জন্য ধন্যবাদ। মা ও বোনেরা বিশ্বাস করুন একজন পুরুষ হয়ে বলছি এখানে একবিন্দুও মিথ্যা নাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য, সঠিক ও সুন্দর পথে চলার তৌফিক দান করুন।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৫২
298510
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই.

আপনার দোয়া আল্লাহ কবুল করুন আমিন.
360181
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৪৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, একদম খাটি কথা, এতে এক বিন্দুও মিধ্যে নেই। সহ শিক্ষা ইসলাম হারাম। বর্তমান যুগে প্রাইমারীতেও এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশের মোটা মাথাওয়ালারা কি এসব বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখে? মহিলা প্রতিষ্ঠানে মহিলা শিক্ষিকা, পুরুষ প্রতিষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষক এটাই একমাত্র সমাধান, বিকল্প চিন্তাও করা যায় না।

অনেক অনেক ধন্যবাদ সত্য কথাগুলো তুলে ধরার জন্য।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৭
298511
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম.

আপনি ঠিকই বলেছেন, মোটা মাথার লোকেরা এইসব বিবেচনায় নেয়না আর আরেক দল আছে সুক্ষ্ম মাথায় আমার আপনার ব্রেইন ওয়াশ করে যায়।
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য.
360326
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৫৯
হতভাগা লিখেছেন : ছেলেরা চায় নারী আর মেয়েরা চায় টাকা । চাহিদার জন্য একজন আরেকজনের কাছে ঠ্যাকা।
360677
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:১৪
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : শুনতে খারাপ শোনালেও চরম সত্যিটাই তুলে ধরেছেন। আমার স্ত্রীও কলেজটিচার। আলহামদুলিল্লাহ, সেখানে খুব শালিন ড্রেসকোড আছে। মেয়েদের জন্য ফুলস্লীভ জামার সাথে হিজাব বাধ্যতামূলক, ছেলেদের জন্য টুপি। শিক্ষিকাদের জন্য হিজাবের সাথে বাড়তি হিসেবে এপ্রোন আছে।
এমন পরিবেশে কুচিন্তাটা কম আসে। সব প্রতিষ্ঠানে যদি এমন ড্রেসকোড থাকতো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File