দাদাদের যত আবদার
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:০৯:৩১ সকাল
‘বায়না’ এমন এক যাদুকরি শব্দ, যার ব্যাবহার অত্যন্ত ফলদায়ক। বায়না বা আবদার তার কাছেই করা হয় যার সাথে দহরম-মহরম। তাই আবদার উপেক্ষা করা অনেকের পক্ষে কঠিন।
বাবার কাছে আল্ট্রা মডার্ন মেয়ের আবদার, “বাবা, আমরা ক’জন বন্ধু মিলে দূরে কোথাও বেড়াতে যাব, সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করব, ঘুরব, তবেই ফিরবো, তুমি কিন্তু একদম না করবে না!” আদুরে মেয়ের আদুরে আবদার, তার উপর পিতৃস্নেহ, উপেক্ষা করা যায় না! অনুমতি দিলেন। তারপর সদা প্রাণচঞ্চল হাস্যোময় মেয়েটি বন্ধুদের দ্বারা ‘শিয়ালের কাছে মুরগীর সদ্ব্যাবহার’ পেয়ে বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে বাবার সামনে হাজির......
অফিসে ব্যাপক সুনাম, তিনি ঘুষ খান না। স্বজনপ্রীতি, চাটুকারি, লবিংকে প্রশ্রয় দেন না। একদিন ছোট বোনের ফোন- “ভাই, আমার ছেলেটা কোথাও চাকুরী পাচ্ছেনা, এখন তুমি একমাত্র ভরসা। ভাগনের জন্য তোমার অফিসেই কিছু একটা ব্যবস্থা কর”। বোনের আবদার মেটালেন, যে স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করলেন তাতে নিজেই জড়ালেন।
এমনি করে বাবা-মায়ের কাছে মেয়ের, ভাই বোনের কাছে, বোন ভাইয়ের কাছে, স্বামী স্ত্রীর কাছে , স্ত্রী স্বামীর কাছে, ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকের কাছে, বসের কাছে কর্মকর্তাদের ন্যায় অন্যায় আবদারের শেষ নেই। আবদার ন্যায় কে অন্যায় আবার অন্যায় কে ন্যায় বানায় তবু আবদার রাখতে হয়, রাখতেই হবে। তা না হলে যে সম্পর্ক নষ্ট হয়! নীতি কথার গোষ্ঠী কিলাই।
দাদা ভাইয়েরা এমনসব আবদার করেন, তাতে হৃদয়-মন শ্রদ্ধা ভালবাসায় গদ গদ করে উঠে। চাওয়া মাত্রই দুহাত ভরে দেই। ট্রানজিট, করিডোর, ছিটমহল, টিভি চ্যানেল অবাধ সম্প্রচার, সর্বশেষ হিন্দী সিনেমার দরজা উন্মুখ করে দিলাম। দিয়েছি আরো অসংখ্য জিনিস। আসছে ৬০টি সিনেমা হলে ‘ওয়ান্টেড’! শুধু তাই নয়, দেশীয় শিল্পীদের আপত্তি থাকায় সর্বোচ্ছ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ছবিটি দেখানো হয়। তারপর আসছে ‘ডুম থ্রী’ ‘তারে জামিন পার’ ‘থ্রী ইডিওটস’।
আমরা তবে কি পেলাম?
‘ত্যাগেই প্রকৃত সুখ, ভোগে নয়’। ব্যাঙের ছাতার মত টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের বিপরীতে আমাদের একটাও দাদাদের বাড়িতে সম্প্রচার করতে পারিনি। আরেকটা কারবালা সৃষ্টি হলেও তিস্তার জল ঢেলে তৃষ্ণা মেটাতে পারিনি। সীমান্তে গরীব দুঃখী মানুষের করুণ মৃত্যুর মিছিল দেখে যাচ্ছি, থামাতে পারিনি। দাদাদের ন্যাংটা সংস্কৃতিকে আদর্শ ভেবে নিজেদের পরিধেয় বস্র খুইয়েছি। দাদাদের কাছেই সবচেয়ে বড় বানিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছি। আরো পেয়েছি শত পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা, যেসব পণ্য আমার দেশে উৎপন্ন হয় না, পেয়েছি সস্তা দামে চোখ ধাঁধানো জামা কাপড়, যাতে দেশীয় পণ্যের বাজার খেয়েছে হুমকী। পেয়েছি আরো হাজার কিছু, লিখতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা চলে যাবে তাই ক্ষান্ত দিলাম।
তবু যদি অবুঝ মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যি পেয়েছি কী? তাহলে দৃপ্ত স্বরে বলব, “যা পেয়েছি, দিয়েছি তার চাইতে হাজার গুন বেশি, তবু ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছি”!
বিশেষ সতর্কীকরণঃ আবদার শুনুন, রাখুন, সম্পর্ক অটুট থাকুক। আগ পিছ, সুবিধা অসুবিধা ভেবে তবেই।
বিষয়: বিবিধ
১৯৬০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন