হিজাব পড়বে, অপকর্মও করবে, কেন???
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২৩ জুন, ২০১৪, ০৫:৫২:১৬ বিকাল
হিজাব অপকর্ম থেকে বিরত থাকার রক্ষা কবচ, কিন্তু হিজাব পড়ে অপকর্ম করে কেন? এই প্রশ্নটা সবার মনে কম বেশি ঘুরপাক খায় এবং প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক বটে। প্রায়শই দেখা যায়, হিজাবধারী কোন নারী পার্কে বসে আপত্তিকর কাজ করছে, পকেটমার, রাস্তায় যৌন ঔষধ বিক্রি করে বোরখা পড়ে, পতিতা পতিতা বৃত্তি করে হিজাব পড়ে, এতোসব দেখেও কেন মানুষ প্রশ্ন তুলবেনা হিজাব পড়ে আবার অপকর্ম কেন করে। প্রশ্ন তোলায় স্বাভাবিক। তারা বলবেই হিজাব অপকর্মের সহায়ক, বিরত রাখার রক্ষাকবচ নয়।
আমার মনেও প্রশ্ন জাগে আমি উত্তর খুঁঝে বেড়াই, কেন হিজাব পড়ে অপকর্ম করে যাবে? হিজাবের কাজ তো যৌনাচার থেকে রক্ষা করা নিজেকে,কিন্তু তার উল্টাটা কেন হচ্ছে? হিজাবের লক্ষ ও উদ্দেশ্য অতি উত্তম, যদি না সে নারী হিজাব পড়ে উত্তম উদ্দেশ্যে নয় বরং অপরাধ ঢাকার উদ্দেশ্যে, সহজে লোকের চোখে ধুলা দিয়ে নিজেকে ধরা ছোয়ার বাইরে রাখতে। হিজাব নিয়ে আমার এক আত্বীয়ার বিরম্বনা-----
উনি পড়েন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকেই হিজাব পরিধান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হিজাব নিয়ে পড়লেন নতুন ঝামেলায়। ক্লাস শিক্ষক প্রায় বলে থাকেন, তোমরা হিজাব পড় ভাল কথা, তাই বলে ক্লাসে কেন? আমিতো তোমাদের শিক্ষক, ওরা তোমাদের ক্লাসমেট বন্ধু, আমাদের সামনে মুখ ঢেকে রেখোনা, মুখ খোলা রাখ,চিন্তে বুঝতে সুবিধা হবে। উনার কথা শোনার পর অনেক হিজাবধারী মেয়ে সাথেই সাথেই স্বানন্দে মুখ থেকে কাপড় সরিয়েন, অবস্থাটা এমন দাড়াল, মেয়েগুলো যেন এতো দিন সারের বলার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আমার আত্বীয়া সহ চার পাঁচজন সারের কথা শোনেন নি।
কোর্সের উপর একটা ফীল্ড স্টাডি হবে, তাই সবাইকে বললেন, টি শার্ট পড়ে আসতে এবং তা বাধ্যোতামূলক। যারা হিজাব পড়ে আছে তাদের জন্যও একি নির্দেশ। শোনেই হিজাবধারী মেয়েগুলো চিন্তায় পড়ে গেল, ব্যক্তিগতভাবে কেও বললে হয়ত অপোজ করা যেত, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছাপিয়ে দিলেতো মুশকিল। সারের কাছে গেল, অনেক বলে কয়ে সারকে রাজি করাতে পারলেন না, সারকে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা টি শার্ট পড়ব, কিন্তু তার উপরে উড়না জড়ায়ে নেব, সার রাজি হলেন।
ক্লাসের মেয়ে বন্ধুরা উনাকে বলে, “এই তুইসহ আমরা কালকে without হিজাব পড়ে আসব” । তার উত্তর “জীবন গেলেও সম্ভব না, হিজাব পড়েই আসব।বন্ধুরা বলে, ‘আরে একদিনের জন্য বোরখা না পড়লে কিছু হবেনা।“ অবশেষে বিষন্ন মনে একটা টি শার্ট নিয়ে আসলেন, কেটে সাইজ বড় করে নিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, পর্দা পালনের উনার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।
এখন আসি কেন হিজাব পড়েও অপকর্ম করে বেড়ায়। কারণ অনেক মেয়ে হিজাব পড়ে পারিবারিক চাপের কারণে, বাবা মা ধর্মকর্ম পালন করে, মৌলভী বাড়ী, অনিচ্ছা সত্বেও সবার কাছে ধার্মিক পরিচয় পাকাপোক্ত করার জন্য হিজাব পড়ে, মাদ্রাসায় পড়লে অঘোষিতভাবে চাপ থাকে মেয়েদের উপর হিজাব পড়ার, কেওবা অন্যের দেখাদেখি পড়ে, বাজারে নানা স্টাইলের হিজাব পাওয়া যায়,যা পড়লে সাধারণ জামা কাপড়ের চাইতে বেশি আকর্ষনীয় মনে হয়, তাই পড়ে। অধিকাংশ মহিলা পর্দার সঠিক বিধান, গুরুত্ব অথবা পালন না করার পরিণাম সম্পর্কে না জেনেই শুধু পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানি অথবা সামাজিক চাপের কারণে পড়ে থাকে। তারা তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে হিজাব পড়ে কিন্তু যখনি সুযোগ পায়, গা থেকে হিজাব খসে পড়ে। যেমন বাড়ি থেকে দূরে কোন বান্ধবীর বাসায়, বিশ্ববিদ্যালয়, বিয়ে বাড়ীতে গেলে হিজাবের নিশানা আর খুঁঝে পাওয়া যায়না।যেন একটা বন্দীদশা থেকে মুক্তি পায়।
যে মেয়ে বলে একদিন হিজাব পড়লে কিছু হয়না,সে আদতে জানেনা, একদিন কেন এক মিনিটের জন্য পর্দার বিধান শিথিল করার কোন সুযোগ নাই অথবা বিরুদ্ধাচারন করাই তার উদ্দেশ্য! যে শিক্ষক বলে ক্লাসে পর্দা করা জরুরী নয়, তিনি আদতে জানেন না, তার ছাত্রীর জন্য তিনি গায়রে মাহরাম কিনা অথবা পর্দার বিরুদ্ধাচারণ করাই তার উদ্দেশ্য! যে মেয়ে কোন গুরুজনের কথা শোনেই হিজাব খুলে ফেলে, সে আদতে হিজাব পড়তে চায়না অথবা হিজাবের অপমান করাই তার উদ্দেশ্য!হিজাব খুলেই মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ায়।
আমি খুব জোরের সঙ্গেই বলতে পারি, কোন মেয়ে যদি পর্দার শরয়ী বিধান সম্পর্কে আংশিক নয় বরং পরিস্কার জ্ঞান রাখে, বাস্তব জীবনে অনুশীলনের প্রচেষ্টা চালায়, উপলব্দি করে তা অবশ্য পালনীয়, তার দ্বারা অপকর্ম হতে পারেনা, তবে হতেও পারে তখনি যখনি সে শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়, অনুশীলনে শিথিলতা অবলম্বন করে থাকে।
হিজাব পতিতার পোষাক, চোরাচালনিদের পোষাক, অপরাধীদের পোষাক ইত্যাদি ঢালাওভাবে মুখে না আওড়ায়ে ভেবে নেয়া উচিত বুঝে নেয়া উচিত,সমস্যা হিজাবের নয়,ব্যক্তির।হিজাব পড়েও ব্যক্তির মনে শয়তানের প্ররোচনা কাজ করতে পারে, সবার আগে ভাবতে হবে, হিজাব ধারীও একজন মানুষ, অন্যান্য নারীদের মত তারও বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, একজন মানুষ একজন নারী হিসেবে তারও জৈবিক চাহিদা,তাড়না, শয়তান যা অবৈধ পন্থায় তাকে দিয়ে মেটাতে চায়, সে বিভ্রান্ত হয়। তবে শয়তানের জন্য একজন হিজাবধারী নারীকে বিপথগামী করা পাহাড়সম কঠিন হয়ে পড়ে যদি সে নারী হিজাব পড়ে পর্দা পালনের মহত উদ্দেশ্যে।
সে সব মা বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, যারা হিজাবের অপব্যবহার করে থাকেন, আপ্নারা উলঙ্গ হয়ে চলাপেরা করেন, আপনার শাস্তি আপনার জন্যই, আল্লাহ আপনার প্রতি কর্মের হিসেব রাখেন, এতা বুঝেও যদি বেপর্দায় চলেন তা আপনার ব্যাপার,কিন্তু হিজাব পরে হিজাবের পবিত্রতা নষ্ট করবেন না! যে হিজাব পড়ে আপনি নষ্টামি করছেন,সে হিজাব পড়েই কিছু মা বোন চরম প্রতিকুল পরিবেশে প্রাণান্তকর চেষ্টা সাধনাকরে যাচ্ছেন পর্দার বিধান পালন করতে।আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন, তারাও আল্লাহর নিকট অসামান্য পুরস্কার পেয়ে ধন্য হবে, আপনি বাদ থাকবেন কেন, আপনিও তাদের সাথে সামিল হোন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে নিজেদের ধন্য করুন।
উল্লেখ্য যে, হিজবা মানে শুধু লম্বা বোরখা হতে হবে তেমনটা জরুরী নয়, বরং লম্বা এমন যেকোন কাপড়,যা দিয়ে শরীরকে ভাল ভাবে ঢেকে দেয়া যায়।
বিষয়: বিবিধ
২৬১৪ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পার্ট। আশা করি এ সড়িয়ে ফেলবেন।
হবে। পিলাচ
একজন পুরুষ (মা-খালা-নানী-ফুপু-দাদী-স্ত্রী-কন্যা-পুত্রবধু) এদের ছাড়া পৃথিবীর কোন নারীর মুখ দেখতে পারবে কি?
ওমরা ও হজ্জের ক্ষেত্রে দেখেছি মেয়েরা মুখ খোলা রেখে আল্লাহর ঘর তওয়াফ করে, এটা করা যাবে কি?
যাদের সাথে বিয়ে করা হারাম এমন চৌদ্দজন ছাড়া অন্য সবার সাথে পর্দা করতে হবে।
মতামত রয়েছে,যারা ফতোয়া দেন তাদের মধ্যে অনেকে বলেন, একজন নারীর যেহেতু পুরুষ কে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে তাই মুখ ঢেকে রাখাই উত্তম।
হা হজ্জে ও ওমরায় মুখ খোলা রেখে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা যাবে।
যাদের সাথে বিয়ে করা হারাম এমন চৌদ্দজন ছাড়া অন্য সবার সাথে পর্দা করতে হবে।
মতামত রয়েছে,যারা ফতোয়া দেন তাদের মধ্যে অনেকে বলেন, একজন নারীর যেহেতু পুরুষ কে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে তাই মুখ ঢেকে রাখাই উত্তম।
হা হজ্জে ও ওমরায় মুখ খোলা রেখে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা যাবে।
ইসলাম কি আসলেই এতটা কঠিন যে পরিবারের সদস্যকে পরিচয়ের সার্থেও মুখ দেখানো যাবেনা?
০ এটাই সত্য ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন