বড় লোকের জামাই বিপ্লব

লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:৪৮:১৪ সকাল

বিপ্লব গরিব ঘরের সন্তান, শিশুকালে বাবা মারা যায়, বাবা মার একমাত্র সন্তান সে, মায়ের স্বপ্ন তাকে সে পড়াশোনা করাবে, বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হবে। স্বামী মারা যাওয়ার পর চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন, কিভাবে সংসার চালাবেন, কিভাবে ছেলেকে পড়াশোনার করানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন যেখানে তিন বেলা খাবার জোগার করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবু হাল ছাড়েন না।

স্বামী রেখে যাওয়া একটি গাই গরু ছিল, তার দুধ এবং গরুর গোবর রোদে শুকিয়ে লাকড়ি বানিয়ে বিক্তি করে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতেন, অন্যদিকে নিজে পরের বাড়িতে ঝীএর কাজ করে কোনরকমে সংসার চালাতেন।

দেখতে দেখতে ছোট্ট বিপ্লব আজ অনেক বড় হয়েছে, পড়াশোনা শেষ, কলেজে থাকাকালে এক সুন্দরিতমার সাথে love relation build up করে, মেয়ের বড়লোক বাবা মায়ের পচ্ছন্দে মেধাবী বিপ্লবের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারা দুজন স্থির করে গ্রামে গিয়ে মায়ের পায়ের ধূলা নিবে। উল্লেখ্য যে, বিয়ের খবরটি বিপ্লবের মাকে জানানো হয়নি।

যখন গ্রামে গেলেন, মা তখন গোবর রোদে শোকাচ্ছিল, বিপ্লব নববধুকে বলল মাকে সালাম করতে, ছেলের বউকে বুকে জড়িয়ে নিতে যাবে, হঠাৎ বউ তিনহাত পিছনে গিয়ে বলল এই আমাকে নোংরা হাতে ধরবেন না, শোন বিপ্লব, আমি এই নোংরা মহিলাকে সালাম করতে পারবনা আর এই নোংরা পরিবেশে থাকতেও পারবনা। ঢাকা চল, আর এক মুহুর্ত নয় এখানে।

মায়ের এতো আদরের বিপ্লব বউয়ের রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করতে করতে ঢাকা চলে আসে। দুখীনী মা, কষ্টে বুক ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়, তবু পথ চেয়ে থাকে, বিপ্লব আসবে, মা তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খাবে, পুত্র বুধু তাকে মা বলে ডাকবে।কিন্তু বিপ্লব আসেনা......

এক মাওলানার ওয়াজের ক্যসেট গ্রামে খুব চলত, তিনি তার একটি ওয়াজে গল্পটি বলতেন কেঁদে কেঁদে, কাঁদতেন কাঁদাতেন, মা চাচী, বড় ভাই, বড় বোন, (চাচাতো মামাতো খালাতো ফুফাতো) ভাবীরা শোনে কেঁদে কেঁদে চোখের জলে একাকার হয়ে যেত, কাঁদার মত একটি গল্প বটে, মাগার আমার কান্না আসতনা, কারণ দেখতাম যতক্ষণ তারা ওয়াজটি শোনত, আবেগ উথলে উঠত, শোনার পর বাস্তব কোন প্রয়োগ তাদের মাঝে দেখতাম না

আবার তারাই কেও বউকে বেশি প্রাধান্য দিত, মাকে অবহেলা করত, কেও শাশুরির বিরুদ্ধে বউকে উস্কে দিত। আমার মনে খটকা লাগত, যে ওয়াজ চোখের পানি ঝরায়, মন কে বরফে পরিণত করে, বাস্তব অনুশীলনে মানুষ কে অভ্যস্ত করাতে ব্যর্থ হয়, সে সব ওয়াজ শোনে কাঁদার কিছু নেই।

আমার তখনি উপলব্দি হয়, শুধু ওয়াজ নয়, নিজেরাই নিজেদেরকে বদলে নেয়ার বদলে দেয়ার মন মানুসিকতা লালন করি প্রায়গিক ভাবে ইসলামী জীবন ব্যাবস্থায়, যার ভিত্তি হবে সম্পূর্ণ কোরআন হাদিস।

সবশেষে পিতামাতার হক সম্পর্কে আল্লাহ কি বলেন, তা এনেই শেষ করব-

'আর আমি মানুষ কে তার পিতা-মাতা সম্পর্কে আদেশ করছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে তাকে গর্ভ ধারণ করেছেন। দুই বছর পর্যন্ত তাকে স্তন্য দান করেছেন। এই মর্মে যে, তোমরা আমার এবং তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমার দিকেই প্রর্তাবর্তন করতে হবে। -----(লোকমান -১৪)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাবা মায়ের হক সঠিকভাবে উপলব্দি করার তাওফিক দান করুন। আমিন ।

বিষয়: বিবিধ

২৪০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File