প্রত্যাবর্তন
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০১:২৫:০৪ দুপুর
এটা হচ্ছে তোর রুম, এখন থেকে তুই এখানে থাকবি। তোর রুমমেইট সবাই বাহিরে আছে, তারা আসলে সবার সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলে পরিচয় হয়ে নিবি। আর এখানে কারও সাথে আপনি বা তুমি করে বলা চলবেনা। তুই তুকারি করে কথা বলবি। দুজন বড় ভাই আমাকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছিল, কথা শোনার ফাকে ফাকে রুমটার চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। গা কেমন যেন ছম ছম করে উঠল। জায়গায় জায়গায় সিগারেট পড়ে আছে, বিছানা এলোমেলো, ছন্নছাড়া অবস্থা।
হলে উঠার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলছি। তিনটা গ্রুপ আমাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে। আমি কোন দিকে যাব, কেন যাব বুঝতে পারছিলামনা। হলে নতুন ছাত্র আসলে এই রকম ভাবে টানাটানি শুরু করে দেয় নিজেদের দলে ভিরানোর জন্য, আপনাদের মনে হতে পারে, হলে কি সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান ফিরে আসল নাকি, না সে রকম কিছু নয়, যে দলটি বর্তমানে অবস্থান করছে, তাদের মধ্যেই অসংখ গ্রুপ রয়েছে, যা নতুনদের জন্য চরম বিড়ম্বনা । অনেক ভেবে চিন্তে একটি গ্রুপে উঠলাম।
প্রতি সপ্তাহে বিশেষ কিছু রুমে ডেকে নিয়েশুরু করে দেয় ওয়াজ নসিহত, বড় ভাইদের দেখলে সালাম, ( সব গুলো গাঞ্জাখুরের মত দেখতে, মন চাইত ঘুসি দিয়ে কেল্লাপথে পাঠিয়ে দেই, কি করা হলে থাকতে গেলেত এই ছাগুদের কে সালাম দিতেই হবে!), হেন্ডসেইক করবি, তবে এক হাতে দিয়ে, মনে থাকে যেন, দুই হাতে হেন্ডসেইক করে রগ কাটা পার্টি, কাওকে যদি দেখি দুই হাতে হেন্ডসেইক করসস, তাহলে মেরে আগে হাসপাতালে, তারপর হয় থানায় নয়ত বাড়িতে পাঠাব , হলে সবসময় বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করবি, মার খেয়ে আসা যাবেনা, মার দিয়ে আসতে হবে। আমাদের rules and regulation follow করতে হবে আরও হাজারও আদেশ , নিষেধ উপদেশের ঝুলি কাঁধে ঝুলিয়ে দিত।
মজার ব্যপার হচ্ছে আমরা সালাম দিতাম ঠিকি, কিন্তু সঠিক ভাবে নয়, বলতাম আসসামু আলাইকুম, মানে তোর মৃত্যু হোক। কি করবো, ঐ ছেলা গুলোরে দেখলেইত গায়ে জ্বালা ধরে যেত, তাও আবার সম্মান, সালাম! যতো সব থার্ড ক্লাসের দল!
টের ও পাইনি কখন এই সব Rules and Regulations এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করলাম। পূর্বের অবস্থার থেকে বর্তমানের অবস্থা এতই খারাপ হতে থাকলো যে নামাজ, কোরান অধ্যয়নের ব্যপারে এতই বেখেয়াল হয়ে পড়লাম, কখন আযান হয়, নামাজ হয়, জামাত, কত ওয়াক্ত নামাজ হল কিছুই বুঝতে পারতাম না। অথচ হলে আসার আগে আযান হলেই মন ছট পট করত নামাজ পড়তে। আর হলে- শুনেও শুনতাম না, বুঝেও বুঝতামনা, বিবেক যেন মৃত প্রায় হয়ে গিয়েছিল।
হলে লজ্জাশীলতার ব্যপারটা ছিল একেবারে নাজুক অবস্থায়। একদিন বাহির থেকে এসে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই চমকে উঠলাম, একি, কি হচ্ছে! আমাদেরি একজন সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ড্রেস পরিবর্তন করছে, আমাকে দেখেও একটু রেখে ঢেকে জামা পরিবরতন করার কোন লক্ষণ দেখলাম না। যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব! রুমে আরও কজন ছিল, তাতেও তার বাঁধেনি এই নির্লজ্জ কাজটা করতে!
এমনি নির্লজ্জ কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল বার বার , দেখে যাওয়া ছাড়া কিছু করার ছিলনা। আর কারও কারও ঘুমানোর শ্রী দেখে ঘেন্না ধরে যেত। কেও কেও এমন শক্ত করে............আগলে রাখত, যেন মহাপ্রলয় সব লন্ড ভন্ড করে দিলেও সে ছাড়বেনা, আর কেও কেও জামা কাপরের বেলায় এতটাই উজার ছিল যে, যেন এক একটা দোকানের ডিসপ্লে! আয় তোরা কে দেখবি, দেখে যা, মন চায়ত নিয়ে যা!
যে রকম পরিবেশ থেকে উঠে আসলাম, তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে তাল মেলাতে গিয়ে বার বার আমার অক্ষমতা প্রকাশ পেয়ে যেত, কখনো কখনো বলেও ফেলত, কিরে তুইত দেখসি, পুরাই হুজুর মার্কা লোক, শিবির টিবির করিস নাকি? ভাবসাব তো বেশি ভালনা। আমি তাদের কোথায় লজ্জায় পেলেও হেসে এরিয়ে যেতাম।
মাঝে মাঝে রুমে মদের আড্ডা বসাত, পারলে বসে থাকতাম, নয়ত বের হয়ে যেতাম। আর মাত্রই এইচ এস সি পাশ করা ছেলেগুলো, বয়স আর কত হবে, ভার্সিটিতে এসে এতো বেশি সিগারেট খেত, দেখে টাসকি খেয়ে যেতাম। সিগারেটের ধোঁয়ায় নাক মুখ বন্ধ হয়ে আসত। চোখে জ্বালা ধরে যেত।
হল রাজনীতি খুব খারাপ জিনিস। একটা শান্ত ভদ্র, মেধাবী ছেলেকে নষ্ট করতে বেশি সময় নেয়না। যে গুটি কয়েক ছাত্র হলে পরাশোনা করে, রাজনীতি করেনা, তাদের বলা হয় ধইন্সা, অকর্মা, ক্ষেত, নন পলিটিকেল। হলে যে যতো কম পরাশোনা করবে মারামারি করবে, বেয়াদবের মত আচরন করবে, সে তত বেশি স্মার্ট, High per Active Political Person.
এই একটিভ হতে গিয়ে, একটু ভালভাবে থাকতে গিয়ে নিজের স্বভাব বিরুদ্ধ অনেক কাজ করেছিলাম, করতে বাধ্য হয়েছিলাম। মনে শান্তি ছিলোনা, সুখ ছিলোনা, সারাক্ষণ অস্থিরতা। এই না প্রোগ্রামের ডাক পড়ে, এই মারামারি লেগে গেলো।
আলহামদুলিল্লাহ্, ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার আগেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার এই বিপথগামী বান্দাকে সরল সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন