স্মৃতি রোমন্থন

লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৪৭:৩২ সকাল

দিল পাষান হয়ে গেছে, মরে গেছে, বোধ হয় পাপ্টা বেশিই করে ফেলেছি। নিশি রাত্তিরে নৈশ ইবাদতে আশে পাশের সবাই আল্লাহর কাছে দু হাত তুলে তাদের মনের কথা গুলো ব্যাক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও আমার পাষান হৃদয় গলেনি।

স্তুপীকৃত পাপ রাশি স্মরণ, জাহান্নামের কঠিন আজাবের ভয়, কিছুতেই পাষান হৃদয় কোমল হচ্ছিলনা।ইসলামী আন্দোলনের একজন নগন্য কর্মী হিসেবে যখন আন্দোলনে সম্পকৃক্ত ভাইদের জন্য দোয়া করার নিমিত্তে আল্লাহর কাছে নিজেকে হাজির করলাম, তখনি মনে পরে গেল হলে ভাইদের উপর নির্মম নির্যাতনের মহাযজ্ঞ। মুহুর্তেই পাষান হৃদয় মোমের মত গলে গেল, ধেয়ে আসা চোখের পানি কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকল।

মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা, আমি তখন কারাগারে, মনটা খুব আনচান করছিল, বেশ কিছু দিন হল হল থেকে কেও দেখতে আসেনা, সবাই কি ভুলে গেল? ভাবতেই মনটা অভিমানী হয়ে উঠল, আবার এটা ভেবেও আশংকা হচ্ছিল যে, হলে কোন সমস্যা হয়নিত? কোন বিপদ হলনাতো? এমনি অভিমান, আশংকা আর উৎকন্ঠার মাঝে দেখতে এলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যান সম্পাদক, পারস্পরিক খবরা খবর নেয়ার পর জানালেন, হল সভাপতি এবং সেক্রেটারি দুজনেই এখন হাস্পাতালে, শুনেই বুকটা ধক করে উঠল, বুঝে গেলাম কেন এতদিন তারা আসেনি।

তিনি আরও জানালেন, হল সভাপতি আর সেক্রেটারি কে মেরে রক্তাক্ত করে পুলিশে দিয়েছে, সাথে একজন সাথী ভাইকেও প্রচন্ড মেরেছে। বাকি প্রায় ৩০জন টের পেয়ে সাথে সাথে হল থেকে বের হয়ে যায়। আর কথা বলতে পারছিলাম না, গলা ধরে আসল, বিদায় নিয়ে রুমে চলে গেলাম, মনটা বিষাদে ভরে গেল, ঘুমাতে পারিনি, বারবার চোখে অত্যাচারের বিমূর্ত দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছিল, খেতে পারিনি, গলা দিয়ে ভাত নামছিলনা।

একদিন ভাই অত্যাচারের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন এইভাবে- এক্তা রুমে ডেকে নিয়ে পালা ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন কথা আদায় করতে না পেরে রড দিয়ে এলোপাতারি মারতে শুরু করল, থেকে থেকে মারতে লাগ্ল, কখনও বুত জুতা দিয়ে সজোরে লাথি মারলতে লাগে, আঘাতের চোটে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে তালা বন্ধ করে চলে গেলে আমি জানালা দিয়ে চার তলা ত্থেকে দুই তলার ছাদে লাফিয়ে পড়ি, যাতে আমার একটা পা ভেঙ্গে যায়, অসহ্য ব্যথায় নড়া চড়া করতে পারছিলাম না, তবু গায়ের সমস্ত শক্তি খরচ করে নিচে লাফিয়ে পড়ি, খুড়িয়ে খুড়িয়ে হল গেইটে গেলাম, অভাগা যে দিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়, আমার হল সে দশা, অন্য সময় অনেক রিকসা থাকলেও সেদিন একটা রিক্সাও ছিলনা, কি করা, গেলাম, রেজিস্টার ভবনের সামনে, সেখানেও কোন রিক্সা নেই, এতক্ষনে তারা আমাকে খুজতে বেরিয়ে গেছে, গাড়ির নিচে লুক্যে পড়লাম, কাজ হলনা, তারা এসে টেনে গাড়ীর নিচ থেকে বের করে এনে আবারও মারতে শুরু করল যা যার ইচ্ছে মত। সেক্রেটারিকেও একি ভাবে মেরে রক্তাক্ত করে দিল।

এই ঘটনার ৩/৪মাস পর আবারও কিছু ভাইকে সারারাত ব্যাপী নির্যাতন করে পুলিশে সোপর্দ করে।আল্লাহ্র কাছে কেঁদে কেঁদে বললাম, হে আল্লাহ, আমার ভাইদের সুস্থ স্বাভাবিক করে দাও, উল্লেখ্য যে, সভাপতি এখনও বুকের ব্যথায় খুব কষ্ট পান, পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটেন, উনার কথা একটু বেশি মনে পড়ে, কান্না থামাতে পারছিলাম না, শপথ নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পর গ্রেফতার হলাম, আমার জন্য পাগলের মত থানা, কোর্ট, কারাগারে ছোটাছুটি করলেন।

আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলাম, ইসলামী আন্দলনের ভাইরা সব রকমের অত্যাচার জুলুম সহ্য করেছেন শুধু তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তোমার কাছ থেকে বিনিময়টাও যেন সর্বোচ্চ পরিমানের হয়।

- আমিন

বিষয়: বিবিধ

১১১০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

199105
২৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৪১
চুতিয়া লিখেছেন : সেরাম পুষ্ট পুষ্টাইছেন।
199162
২৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৩০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File