ছাগলের আপত্তি
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ০১ মার্চ, ২০১৪, ১২:১৫:০২ রাত
অনেক দিন হল, বাহিরের আলো বাতাস চোখে পড়েনা, ক’ টা দিন শরীরের উপর যা ধকল গেছে, সন্তান জন্মদান, এতো কষ্টের আগে জানলে মা হওয়ার সপ্ন দেখতাম না। শুয়ে বসে থাকতে থাকতে কোমরে ব্যাথা হয়ে গেছে, বাহির থেকে কিছু সময় ঘুরে আসা দরকার, যাই বাচ্ছাদের পৃথীবির আলো বাতাস দেখিয়ে নিয়ে আসি।
ছাগীঃ ওরে আমার সোনামনিরা এখনও ঘুম শেষ হয়নি? কেমন নবাব দেখ, দশটা বেজে গেছে, এখনও উঠার কোন লক্ষন নেই, এই আমার জাদু মনিরা উঠো, বাহিরে যাব।
বিল্লুঃ মা সকাল সকাল এতো চেচাচ্ছো কেন?
ছাগীঃ উঠো বাবা তোমাদের আজ বাহিরে নিয়ে যাব।
ডলিঃ তাইনাকি! হুররে, কি মজা, এই মাল্লু ভাইয়া উঠ, বাহিরে যাব।
মাল্লুঃ আমরাতো এখানেই ভাল আছি, বসে বসে খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, কোথায় আবার যেতে হবে?
বিল্লুঃ হা, ভাইয়া ঠিকি বলেছে, আমাদের বাহিরে যাওয়ার কি দরকার?
ডলিঃ দূর আসলে গাধাই রয়ে গেলি!
মাল্লুঃ আপু এটা কেমন কথা, আম্রাতো ছাগলছানা, গাধা হতে যাব কোন দুঃ খে
ডলিঃ আরে, এতো কথার কথা, চল কথা না বাড়িয়ে বাহির থেকে ঘুরে আসি।
ডলিঃ উহ দারুন, কি সুন্দর সবকিছু, সবুজ মাঠ, সবুজ ঘাস, আমার আর ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছেনা, আপন মনে ঘুরে বেড়াব দূর দুরান্তরে…
মাল্লু বিল্লুঃ আপু আমাদেরো ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছেনা।
ছাগীঃ তোমরা আজ প্রথম দিন বেড়িয়েছ, তাই তোমাদের কিছু সদোপদেশ দেয়ার দরকার। আমার প্রতিটি কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনবে। তোমরা পরের হক নষ্ট করবেনা।
মাল্লুঃ পরের হক কি মা?
ছাগীঃ পরের হক হল, অন্যের ফলবান বৃক্ষে মুখ দিবেনা, কারো ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে হাটবেনা, কাচা আইলের উপর হেটে নষ্ট করবেনা, শাক সবজি ক্ষেতে ঢুকবেনা, ছোট ছোট চারা গাছে মুখ দিবেনা, অন্য ছাগল ছানাদের সাথে ঝগড়া করবেনা।
বিল্লুঃ মা, তুমি কিন্তু খুব নিষ্ঠুরের মত কথা বলছ, তাহলে খাবটা কি? না খেয়ে মরব নাকি!
ডলিঃ আরে ভাই মায়ের কথা এখনও শেষ হয়নি, একটু ধৈর্য ধরে সব কথা টুকু আগে শোন।
বিল্লুঃ আচ্ছা ঠিক আছে বল
ছাগীঃ না বাবুরা তোমাদের না খেয়ে মরতে হবেনা, বিভিন্য ধরনের আগাছা আছে, তা খেয়ে তোমাদের পেট ভরে যাবে, এইবার যাও, ঘুরে আস, তবে বেশি দূর যাবেনা। কথাগুলো মনে থাকে যেন।
বিল্লুঃ চল ঐ দিকটাতে যাই, কুচ কুচে কি সুন্দর ঘাস
মাল্লুঃ আহ! আরো আগে কেন বের হলাম না
বিল্লুঃ ভাইয়া, তোমরা থাক, আমি একটু ঘুরে আসি,
ডলিঃ কোথায় যাচ্চিস, বেশি দূর যাবিনা কিন্তু
একটু পর-
মাল্লুঃ ভাইয়া, আপু, বিল্লু, পিটুনি খেয়েছে, হাট তে পারছেনা।
ডলিঃ বলিস কি! কে মেরেছে আমার ভাইকে, কোথায় আমার ভাই, আমাকে নিয়ে চল
ডলিঃ কি হয়েছে বিল্লু, কে তুর এই অবস্থা করেছে?
ছাগীঃ ওরে আমার কলিজার টুকরা, কে তুর এই সর্বনাশ করেছে, কে তুকে এমন রক্তাক্ত করেছে, আয় খোকা আমার বুকে আয়, বল কে এমন করেছে?
বিল্লুঃ ঘাস খেতে খেতে হঠাত একটি ধান ক্ষেতের দিকে নজর পড়লে সেদিকে যাই, লোভ সাম্লে রাখতে না পেরে ধান গাছে মুখ দেই, মুখটা স্বাদে ভরে গেল, কি নরম নরম পাতা , আপন মনে খেয়ে যাচ্ছি। হঠাত কিছু বুঝে উঠার আগেই ধুম করে পড়ল পিঠে বারি, সে কি লাঠি, আর সে কি বারি, মাগো মনে পড়লে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায়।
ছাগীঃ আমি এতোবার না করলাম, তবু গেলি। ঠিক আছে ভুল থেকে শিক্ষা নাও, আর যেওনা।। আর মানুষ জাতি কেমন গো, আমার মাছুম বাচ্ছাটা না হয় একটা ভুল করেছে, তাই বলে এমন করে মারতে হবে! মানুষের কাছে আমরা ছাগলি রয়ে গেলাম!
মাল্লুঃ আচ্ছা মা , আমাদের বাবা কোথায়? তাকে দেখছিনা যে
ছাগীঃ কেনরে দুঃখের কথা স্মরণ করাইলি, জানিনা, তোদের বাবা কোথায় আছে
বিল্লুঃ আমি জানি, আমাদের বাবা কে
ডলিঃ তুমি জান কেমন করে, তুমি কি মায়ের বিয়ে দেখছন নাকি?
বিল্লুঃ দূর ছাই, আমার জন্মইত হয়নি, কেমন করে দেখব
মাল্লুঃ তাহলে বল আমাদের বাবা কে
বিল্লুঃ সহজ , মা যদি ছাগী হয়, বাবা তবে ছাগল
ছাগীঃ যা, কি সব আজে বাজে বকছিস তোরা, আসলে আমাদের সমাজে পুরুষ ছাগল একি দিনে দশ বিশটা বিয়ে করে, পরে আর বউদের কোন খোজ খবর নেয়না। এই ব্যপারটা আমাদের সমাজে খুবি স্বাভাবিক মনে করা হয়। যত জ্বালা মায়েদের, স্বামী বিচ্ছেদ, সন্তান গর্ভে ধারণ, লালন পালন সব মায়েরাই করে থাকে।
বিল্লুঃ পুরুষ ছাগল্রা অনেক খারাপ হয় তাইনা মা?
ছাগীঃ হয়তবা, ওরা সাংসারিক ঝামেলায় যেতে চায়না, সংসার মানে ওদের কাছে খাচায় বন্দী জীবন। তাদের যখন প্রয়োজন হয় তখন আসে, প্রয়োজন শেষে চলে যায়। আমরা যাদের মানুষ বলে জানি তাদের মাঝেও কিছু দুশ্চরিত্র লোক আছে যারা দশ বিশটা বিয়ে করে, বাচ্ছা জন্ম দেয়, ছাগলের বাচ্ছার মত ফেলে দিয়ে চলে যায়, আর কোন হদিস থাকেনা।
বিল্লুঃ তাহলে মানুষ আর ছাগলের মাঝে কি পার্থক্য?
ছাগীঃ ছাগল ছাগলি, ছাগল কখনও মানুষ হয়না, আবার মানুষ ছাগল হয়না। যারা এমন সব কাজ করে তার মানুষ নয়, মানুষরুপি ছাগল। দুঃখ করিস না, আমি তোদের মা, আমিই তোদের বাবা
বিল্লুঃ ঠিক আছে মা, আমাদের এমন বাবা দরকার নেই
মাল্লুঃ যা ডান বাট থেকে খা, আমি বাম বাট খাচ্ছি।
বিল্লুঃ এই যা, আমি একটু মাত্র খেলাম, বিরক্ত করিস না, বাম বাট থেকে খা, মাল্লু অনেক খেয়েছে, এবার তুই দুধ বেশি করে খা।
ডলিঃ তোমরা দুজন কি শুরু করলে, ডানে খাইতে গেলে বল বামে যা, বামে খাইতে বল ডানে যা। তোমাদের ঠ্যালাঠ্যেলিতে আমার আর দুধ খাওয়া হয়না। তাহলে কি আমি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্ছাই রয়ে গেলাম?
ছাগীঃ বাবুরা ঝগড়া না করে সবাই মিলেমিশে খাও।
ডলিঃ মানুষ মানুষকে কি আর এম্নিতে বলে, তুই একটা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্ছা। জন্মের পর থেকে দেখেছি ভাইয়া আর বিল্লু পেট ভরে দুধ খায়, আর আমার পেট ভরে লাথি গুতা খেয়ে। তিন নম্বর জন্মই আমার কাল হল!
মানব সমাজে তিন নম্বর বাচ্ছা তাকেই বলে, যে কিনা দুই সুবিধাভোগীর মাঝখানে পড়ে গলা ফাট্যে চিতকার করে, সুবিধা কানাকড়িও পায়না।
বিল্লুঃ মানব সমাজে কিন্ত আমাদের নিয়ে অনেক আলোচনা হয়
মাল্লুঃ কি রকম আলোচনা হয় বলত শুনি
বিল্লুঃ এই যেমন, একজন অন্য জন কে বলে, তুই একটা ছাগল, তারপর বাংলা ব্যকরনে পড়ানো হয়, পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়’ , আরো বলা হয় ছাগ্লামি করিস্না তো, ইত্যাদি ইত্যাদি
ছাগীঃ ঠিক বলেছ, মানব সমাজে আমাদের নিয়ে আলোচনা হয়, তবে এই আলোচনা আমাদের জন্য মোটেও আনন্দের নয়। মানুষ এই সব কটাক্ষ করে বলে। যেমন- তুই একটা ছাগল মানে তুই ছাগলের মত খারাপ, বাংলা ব্যকরনে পাগলের সাথে ছাগলের তুলনা করা হয়, তিন নম্বর ছাগলের বাচ্ছা বলে গালি দেয়া হয় , অথচ প্রানীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি নিরীহ, শান্ত শিষ্ট , আমরা তাদের মাঝে অন্যতম।
ডলিঃ আমার মনে হয় আমাদের এই ব্যপারে গণ সচেতনতা সৃস্টি করা দরকার। পশু পাখিদের মধ্যে যারা নিরীহ, আমরা তাদের অন্যতম, তাহলে মানুষ কেন আমাদের খারাপ উদাহরন দিতে গিয়ে টেনে নিয়ে আসবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের দাবী একটাই , এই সব অপবাদ থেকে মুক্তি চাই।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন