চা স্টল এবং গীবত
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫১:৫৬ সকাল
রাগের বশত অথবা হিংসা বশত কারও সম্পর্কে বদনাম করাতে দারুণ মজা, তাতে রাগ থাকলে হালকা হয়, নেতিবাচক কথা বলে তৃপ্তি লাভ করা যায়। তাই কখনো কখনো কারও বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে আমরা এতো দূর পর্যন্ত চলে যাই, মনেই থাকেনা আমরা যা বলছি তা গীবত, যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে সে শুনলে মনে কষ্ট পাবে।
একদিন কারাগারে বসে রাগের মাথায় একজনের বিরুদ্ধে বিশোধগার করতে থাকি, পাশে বসে থাকা আমাদেরই এক ভাই বললেন, আল গিবাতু আসাদ্দু মিনাজ্জিনা' শুনে থতমত খেয়ে গেলাম, সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলাম, বুঝতে পারলাম আমি গীবত করছি, লজ্জা পেয়ে গেলাম।
মাঝে মাঝে আমরা বন্ধুরা মিলে যখন গল্প করতে বসি, নিজেদের অজান্তেই কারও সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বার্তা শুরু করে দেই, কিন্তু আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে এই আলোচনা বেশিক্ষণ চলতে পারেনা, আমাদের কেও একজন সতর্ক করে দেয়, এই আলোচনা এখানেই বন্ধ রাখতে হবে, কারণ এটা নিঃসন্দেহে গীবত, বাস, প্রসঙ্গ বদলে ফেলি।
গীবত সম্পর্কে আল্লাহ্ রাব্বুল আল আমিন কোরআন মাজিদে বলেন-
'হে ইমানদার লোকেরা, তোমরা অনেক ধারনা পোষন করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কোন কোন ধারণা পাপ হয়। তোমরা একে অপরের গোপন বিষয়ে খোঁজাখুঁজি করোনা। আর একে অন্যের গীবত করোনা। তোমাদের মধ্যে এমন কেও কি আছে যে মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? তোমরা নিজেরাইত উহার প্রতি ঘৃণা পোষণ করে থাকো। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ্ খুব বেশি তাওবা কবুলকারী এবং দয়াবান।
-( হুজরাত-১২)
এই আয়াতটি অধ্যয়ন এবং অনুধাবন করার পর গীবত থেকে আমাদের একশ হাত দূরে থাকা উচিৎ। যখনই নিজের অজান্তেই গীবত শুরু করে দেই, তখনই এই আয়াতটি মনে করার চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে গীবত করার সহজাত প্রবণতা দূর হয়ে যাবে আশা করা যায়।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে কারও পিছনে কিছু বলা মানেই সবসময় গীবত হয়ে যাবেনা, আসুন একটু পরিষ্কার হয়ে নেই বিষয়টি সম্পর্কে। কোন লোক যদি কারও দ্বারা জুলুমের স্বীকার হয়, তখন মাজলুম ব্যক্তি জুলুমকারির বিরুদ্ধে কারও কাছে বলতে পারবে সুবিচার পাওয়ার জন্য, তাতে গীবত হবেনা। যেমন- কোন স্ত্রী স্বামীর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে/ নেশাগ্রস্ত স্বামীকে অনেক চেষ্টা করেও সংশোধন করতে না পেরে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য এমন কোন ব্যক্তির কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে বলে, যে কিনা তার স্বামীকে আল্লাহ্ চাহেতু সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারবে, সে ক্ষেত্রে গীবত হবেনা। এই সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন-
'আল্লাহ মন্দ কথা পছন্দ করেন না, তবে কারও উপর জুলুম করা হয়ে থাকলে অন্য কথা। - (নিসা-১৪৮)
বাংলাদেশের চা দোকান গুলোতে জম্পেশ আড্ডা বসে, আলোচনার প্রধান বিষয় হয় গীবত। এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাতে বিড়ি, বিড়ি শেষ হয়ে, চা ঠাণ্ডা হয়ে যায় সে দিকে কোন খেয়াল নেই, হা করে তাকিয়ে গীবতের অমৃত সুধা পানে ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে রাজনৈতিক আলোচনা প্রাধান্য পেলেও গীবতের বিষয়টাই মুখ্য থাকে।
কার বউ কতটা সুন্দর, কার বউ পরকীয়া করে, কার মেয়ে পালিয়ে গেছে, কার মেয়ে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পরেছে, কার ছেলে আর কার মেয়ে ইটিশ পিটিস প্রেম করে বেরাচ্ছে এই সবি আলোচনার বিষয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চায়ের দোকানে কাটিয়ে দেয়, অন্যের বদনাম নিয়ে মহাব্যস্ত, আর বাড়িতে বউ ঝি কি করছে, পর্দা করে চলছে কিনা, নাকি তারাও স্বামী/ বাবার ঘরে না থাকার সুবাদে শয়তানের প্ররোচনায় পরে খারাপ কিছু করে অন্য চা দোকানের গল্পের রশদ জোগাচ্ছে, সে ব্যপারে কোন খেয়াল থাকেনা।
গীবতের পরিণাম সম্পর্কে মানুষ খুব অসচেতন, যখনই আমাদের সামনে কেও কারও গীবত করবে, আমাদের দায়িত্ব হয়ে পরে সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করা, তা যদি সম্ভব না হয়, সে স্থান ত্যাগ করা। মসজিদ গুলোতে এই ব্যপারে কার্যকর আলোচনা এবং পদক্ষেপ নিতে পারে।
গীবত সম্পর্কে হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সঃ) বলেন- হজরত আবু সাইয়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেন- গীবত হল ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক। সাহাবাগন বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, গীবত কি করে ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক? উত্তরে তিনি বললেন, কোন ব্যক্তি যিনা করার পর তাওবা করলে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেন, কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে সে যদি ক্ষমা না করে আল্লাহ্ মাপ করবেননা। - ( বায়হাকী)
সুতরাং, আসুন সচেতন হই, গীবতের পরিণাম সম্পর্কে উপলব্দি করি, আর গীবত থেকে দূরে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন