শিক্ষা ও কাংখিত শিক্ষাব্যবস্থা: একটি পর্যালোচনা
লিখেছেন লিখেছেন সফেদ শিশির ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৩:৫৫ সকাল
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কোন একটা জাতি বা জনগোষ্ঠীর জীবন-দর্শনের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। কোন জাতি বা জনগোষ্ঠী যদি হয় ধর্মহীন কিংবা ধর্মের প্রতি উদাসীন তাহলে বৈষয়িক কিংবা জাগতিক উন্নতিকে সে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করবে এবং তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সে আলোকেই গড়ে তুলবার চেষ্টা করবে। আবার কোন জাতি যদি হয় ধর্মপরায়ন (Pious) তাহলে সে জাতি তার ধর্ম বিশ্বাসের আলোকে তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তুলবার চেষ্টা করবে। আবার কোন জাতি ধর্ম পরায়ন হওয়া সত্ত্বেও সে জাতির ধর্মটি যদি সন্ন্যাসবাদী (Asceticism) বা বৈরাগ্যবাদী তাহলে জগৎ সংসারের প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি এবং আত্মার মুক্তি বা মোক্ষ লাভই হবে সে জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য। পক্ষান্তরে ধর্মটি যদি হয় পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা (A complete code of life) তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে জগৎ ও জীবনের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ সামগ্রিক বিকাশ। যে কোন জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা সে জাতির বিশ্বাস, জীবনাচার ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে, পরিচর্যা করে এবং প্রজন্মকে বিশ্বাস ও আদর্শের আদলে গঠন করে। তাই যদি জাতি হিসেবে আমাদের শিক্ষা দর্শন বলি কিংবা শিক্ষানীতি যা-ই বলি না কেন সে নীতিটা আমাদের সমাজ ও বাস্তবতার নিরিখে কোন ধরনের হওয়া উচিৎ সে বিষয়টি যৌক্তিকভাবে প্রতিপাদন করা প্রয়োজন।
শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণায়ন:
বাংলা “শিক্ষা” শব্দটি সংস্কৃত “শাস” ধাতু থেকে উদ্ভুত হয়েছে। এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো শাসন করা, নিয়ন্ত্রণ করা, নির্দেশ বা উপদেশ দেওয়া। শিক্ষার সমার্থক হিসেবে “বিদ্যা” শব্দটিও ব্যবহার করা হয় সেটিও সংস্কৃত “বিদ” ধাতু থেকে উদ্ভুত। যার অর্থ হলো জানা বা জ্ঞান অর্জন করা। শাব্দিক অর্থে “শিক্ষা” বলতে বিশেষ কোন জ্ঞান অর্জনে বা কৌশল আয়ত্ত্ব করাকে বোঝায়। এটাই শিক্ষার সংকীর্ণ (Narrow)অর্থ যা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক জ্ঞান আহরণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অপরদিকে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে বোঝায় জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর সব রকমের সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করাকে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষার লক্ষ্য হলো যে শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবনের সুষম বিকাশ সাধন করা, এর ব্যাপ্তি দীর্ঘকালব্যাপী, ইহা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠানের আওতায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বাঞ্ছিত পথে মানুষের ব্যবহারের যে পরিবর্তন তাই শিক্ষা। অভিজ্ঞতা বা পারিপার্শ্বিকের প্রভাব সমাজ কর্তৃক কাঙ্খিত পথে মানুষের ব্যবহারের যে পরিবর্তন তাই শিক্ষা।(Adjustment is the best education) পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টাই বড় শিক্ষা। শিক্ষা ও জীবন অভিন্ন পরস্পর পরস্পরের সম্পূরক Life is education and education is life “দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষাকাল” ক্রমাগত শিক্ষায় জীবন ধরে মানুষের অভিজ্ঞতা তথা শিক্ষার পরিবর্তন পূর্ণগঠন ও নিয়ন্ত্রণ (Education and reeducation) চলতে থাকে।
শিক্ষা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো “Education” যাহা ল্যাটিন শব্দ Educare, Educure & Educatum থেকে এসেছে। এ শব্দগুলির অর্থ হলো বাহির করা, প্রশিক্ষণ দেয়া, লালন করা,পরিপুষ্টি সাধন করা,পরিচালিত করা ইত্যাদি। Educure – To lead up নিষ্কাশন করা এই অর্থে শিক্ষা হলো “Pack the information in & draw the Talent out” অর্থাৎ ব্যক্তির প্রতিভা বা প্রবণতাকে বের করে আনা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ। Educatum – to control নিয়ন্ত্রণ করা। আর এখানেই এসে আমরা শিক্ষার সংস্কৃত “শাম” ধাতু এবং Education এর মূল ল্যাটিন Educatum এর মাঝে অর্থের মিল খুঁজে পাই। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে সকল প্রকার অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে নিয়ন্ত্রণ বা শাসন করাকেই বুঝানো হয়। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত (Etimologicas) অর্থে আমরা “Education” শব্দটিরও দুটি অর্থের কথা বলতে পারি। একটি হচ্ছে পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে জীবনোপযোগী কৌশল বা দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা এটি সংকীর্ণ অর্থে Education -কে নির্দেশ করে। অপরটি হলো পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো যা ব্যাপক অর্থে Education -কে নির্দেশ করে। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত অর্থের ভিত্তিতে আমরা শিক্ষার একটা সংজ্ঞা দাঁড় করাতে পারি এভাবে যে শিক্ষা হলো একটি পদ্ধতি/প্রক্রিয়া যেখানে জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলা হবে এবং সাথে শিক্ষার্থীর মাঝে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে সেটাকে বিকাশ সাধনে সহায়তা প্রদান করে। জীবনের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার ফলে কিছুটা জ্ঞাতে কিছু অজ্ঞাতে মানুষের ব্যবহারের যে পরিবর্তন তাকে অপ্রত্যক্ষ শিক্ষা বলা যায়। আর যুগ যুগ ধরে সমাজ যে জ্ঞান সঞ্চয় করেছে, যে কৌশল আয়ত্ব করেছে এবং যে অভ্যাস ও চারিত্রিক গুণাবলীকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছে তা নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মধ্যে বিতরণের যে চেষ্টা তাকেই শিক্ষা বলে।
Oxford Advanced Learner’s Dictionary তে Education শব্দের অর্থ করা হয়েছে, Knowledge, Abilities and the development of character and mental powers.
সক্রেটিসের মতে, মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিস্কার। প্লেটো বলেছেন, শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছুই প্রয়োজন,তা সবই শিক্ষার উদ্দেশ্যের অর্ন্তভূক্ত।
এরিষ্টটলের মতে, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করা।
জন লকের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন প্রতিপালনের নীতিমালা আয়ত্বকরণ।
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির উদ্ভাবক ফ্রোবেলের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য পবিত্র জীবনের উপলব্ধি।
জন ডিউই বলেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য আত্ম উপলব্ধি। সাহিত্যিক হাক্সলি শিক্ষাকে ভেবেছেন ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া হিসেবে।
রবীন্দ্রনাথ শিক্ষাকে ভেবেছেন পরশ পাথর হিসেবে যা মানুষের মনে জ্বালে আশার আগুন।
অর্থনীতিবিদ এডাম স্মির্থ শিক্ষাকে দেখেছেন এমন একটা শক্তিরুপে যা মানুষের অন্তরে নিহিত র্যা সানালিটিকে জাগিয়ে তোলে এবং এ্যানিম্যালিটিকে নিয়ন্ত্রনে করে।
ইকবালের মত ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে শিক্ষা হলো সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য মানুষের অন্তরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলা।
বিখ্যাত কবি মিল্টনের বক্তব্যে; তিনি বলেন “Education is the Harmonious development of body, mind and soul.” অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে দেহ,মন এবং আত্মার সমন্বিত উন্নয়নের নাম।
Education এর অর্থ হচ্ছে, Edu-Earn Discipline & Unknown Knowledge. Ca-Control Animality & Attitude. Tion-Trimming Idealism, Obedience & Nobility. এডুকেশন শব্দটির প্রতি অক্ষরে কাঙ্খিত শিক্ষার স্বরুপ তথা নৈতিকতারই বর্ণচ্ছটা ফুটে উঠে।E-(ইকুইটি) সকল কাজে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়নতা।D-(ডিইটিফুলনেস)মানবতা,দেশ জনগন,পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের জন্য সদা কর্তব্যপরায়ন।U-(ইউনিটি) সত্য ও সুন্দরের জন্য এক্যবদ্ধ।C-(কারেজ) সত্য সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহসিকতা।A-(একাউন্টিবেলিটি) মেধা,সময় ও জাতীয় সম্পদের সম্যক ব্যবহারের দায়বদ্ধতা।T-(ট্রান্সপারেন্সি)আচার-ব্যবহার ও সকল কাজে সততা, জবাবদিহিতা।I-(ইনভেস্টিগেশন) নবদিগন্তের উন্মোচন বা উদ্ভাবন।O-(ওবেডিয়েন্ট)জাতির প্রতি কর্তব্যবোধ ও আনুগত্যপরায়নN-(এনথেসিয়াস) মহৎ কাজের প্রতি আসক্তি ।
একদল আমরেকিান শিক্ষাবিদ ১৯৪৫ সালে লিখেন, “শিক্ষা এমন এক সুসংবদ্ধ উপায়/কৌশল বা সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তির সর্বাধিক কর্মক্ষমতা, ধ্যান ধারণা রুচি ও স্বভাবের পরিবর্তন সাধান করে এবং যে পরিবেশে, বিশেষ করিয়া সে স্কুল পরিবেশে যে বাস করে তাহার মধ্যে হইতে সামাজিক সর্বোচ্চ যোগ্যতা ও ব্যক্তিগত উন্নতি আনয়ন করাই শিক্ষা”। র্অথাৎ বলা যায় মানুষকে মানুষ করাই শিক্ষা যা আত্মোপলব্ধিতে সাহায্য করে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা
সমাজের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় এই শিক্ষার কিছু জাতীয় উদ্দেশ্য বিদ্যমান,এগুলো হলোঃ-১।যোগ্যতানুসারে প্রতিটি মানুষের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন।২।পারস্পরিক সমঝোতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব সৃষ্টি।৩। জাতীয় মূল্যবোধ তথা কর্তব্যজ্ঞান,ন্যায় পরায়নতা,শৃঙ্খলাবোধ শিষ্টাচার ও একাত্মবোধ সৃষ্টি।৪।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে দক্ষ ও সৃজনশীল জনশক্তি প্রস্তুতকরণ।৫।শিক্ষার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদাবোধ সৃষ্টি এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে সবাইকে অনুপ্রাণিত করা।৬।মেধা ও প্রবনতা অনুসারে জীবিকা অর্জনের জন্য যথারীতি প্রশিক্ষণ প্রদান।৭।প্রয়োজনীয় বস্তুর উদ্ভাবন এবং সত্য মিথ্যা চিহ্নিতকরণ।
শিক্ষার উদ্দেশ্যই হল ভালত্ব ধারণার উপলব্ধি, আত্মার উন্নয়ন ও চেতনার সমৃদ্ধি। শিক্ষা ন্যায়কে উদ্ভাসিত করে। ব্যক্তিকে তার কর্তব্য ও দায়িত্বপালনে সম্পূর্ণ উপযুক্ত করে তোলে। প্রকৃত শিক্ষা নারী পুরুষ সবাইকে সামাজিক অর্থনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিকভাবে যোগ্য করে তোলে। শিক্ষা মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে মূলোৎপাটন করে। একটি প্রদীপকে পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার যেমন গ্রাস করতে পারেনা তেমনি যিনি শিক্ষিত তাকে অন্যায় অপকর্ম গ্রাস করতে পারে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য মহৎ হলেও বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আচার আচরণ ও কার্যক্রমে মহত্ত্বের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। শিক্ষার উদ্দেশ্য এখন বলা যায় পুরোটাই বাণিজ্যিক। শিক্ষা নিয়ে চলছে এখন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। যার ফলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোচিং , প্রাইভেট স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। যে কারনে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগত যোগ্যতাকে অর্থনীতিক আয়ের একটা মাধ্যমে হিসেবে মনে করে। নৈতিক ও মানবিক মুল্যেবোধহীন শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে, তখন তার মধ্যে নিজ স্বার্থ সিদ্ধি ছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্য গৌণ হয়ে যায়। এজন্যই স্বার্থসিদ্ধিতে একজন কর্মকর্তা নীতিবহির্ভূত যেকোন অন্যায় করতেও দ্বিধা করে না।
শিক্ষার সঠিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে অভিহিত করতে হবে। শিক্ষার্থীকে নৈতিকতা, ত্যাগ, জনকল্যাণ, উদারতা, মহানুভবতা এবং সততা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক মহোদয় গণ শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেদেরকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করবেন। শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে পরিশুদ্ধ মানুষ তৈরি করা। নৈতিক এবং মানবিক মূল্যেবোধ সমূহ (যেমন-সততা, ন্যায়, মায়া, মমতা, সহিষ্ণুতা, পরোপকার, ত্যাগ) শিক্ষার্থীর চরিত্রে এসব গুণ প্রতিফলিত হল কিনা তা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার সাথে সাথে এসব বিষয়ের উপর নির্দিষ্ট নম্বার রাখা যেতে পারে। শিক্ষার্থী কোনো অনৈতিক এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ড করলে তাকে শারীরিক শাস্তি প্রদানের সাথে সাথে ব্যবহারিক বিষয় থেকে নম্বার কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে সত্যিকার অর্থে একজন শিক্ষার্থী সৎ এবং নৈতিকতা সম্পন্ন হতে পারে।
শিক্ষার প্রকারভেদ:
ব্যাপক অর্থে শিক্ষাকে আমরা দুভাগে ভাগ করতে পারি। অপ্রত্যক্ষ শিক্ষা (Informal education) এবং প্রত্যক্ষ শিক্ষা (Formal education)। প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা। অবশ্য বর্তমানে প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয় ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠানও স্থাপিত হচ্ছে। শিক্ষাবিদগণ শিক্ষার্জনের উপর ভিত্তি করে শিক্ষাকে ৩টি ধারায় বিভক্ত করেছেন।১। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ২। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ৩। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা
১। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাঃ শিক্ষার প্রথম ধারা হল অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এর মাধ্যমে শিক্ষার সূত্রপাত হয়। এই প্রক্রিয়া সারাজীবনব্যাপী অব্যাহত থাকে। জন্ম থেকে শুরু করে মৃর্ত্যু পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে দেখে, শুনে, কাজ করে, অনুসরণ করে চেষ্টা ও ক্রটি বিচ্যুতি এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও নিজ নিজ পরিবেশের প্রভাবে যে শিক্ষা লাভ করা হয় তাকেই অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বলা হয়। কামার, কুমার, তাতি, সুতার, স্বর্ণকার, জেলে, ধোপা, নাপিত, গোয়ালা ও মুচি ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত পরিবারের ছেলে মেয়েরা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্ব-স্ব পেশায় শিক্ষা প্রাপ্ত হয়।
২। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা:আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত সুচিন্তিত ও সুসংগঠিত বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচী যার অধীনে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী স্বল্প সময়ে উপযুক্ত শিক্ষা লাভে সক্ষম হয় তাহাই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। গণশিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, জনসংখ্যা শিক্ষা,সঞ্জীবনী শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, শস্য উৎপাদন, মৎস্যচাষ ও পশু পালন, হাঁস মুরগীর খামার, নার্সারী, খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণ, বেসিক ট্রেডসমূহ যেমন অটোমেকানিক আর্কওয়েল্ডিং এন্ড গ্যাস ওয়েল্ডিং, মেনটেন্যান্স, বিল্ডিং এন্ড অর্কিটেকচারাল, ড্রাফটিং, কম্পিউটার অপারেটর, ইলেকট্রিক্যাল হাউজ ওয়্যারিং, ফার্ম মেশিনারী, ফার্নিচার এন্ড কেবিনেট মেকিং, প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং এন্ড টেলিভিশন সার্ভিসিং ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কর্মশালা এবং বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ ইত্যাদি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয় সমূহ। দেশের উন্নয়নে বিপুল সংখ্যক দক্ষ ও উৎসাহী কর্মী সৃষ্টির জন্য অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সীমিত ভূমিকা পালন করে বিধায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার উদ্ভব হয়েছে।
৩। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা:উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির সাথে জনগণের জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত হয়। সেই সঙ্গে আর্থ সামাজিক কর্মকান্ডেরও প্রসার ঘটে এবং নতুন নতুন সাংস্কৃতিক উপাদান এসে ভীড় জমায়। মানব সমাজের জ্ঞান ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ, ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মধ্যেও তা বিতরণ ও উৎকর্ষসাধন এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি বা বিশেষজ্ঞ সরবরাহের জন্য অত্যন্ত সুসংগঠিত ভাবে স্কুল কলেজের মাধ্যমে যে শিক্ষা কর্মসূচী উদ্ভাসিত এবং প্রবর্তিত হয়েছে সেটাকেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলে নামকরণ করা হয়েছে। স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন ইনষ্টিটিউটের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে নির্দিষ্ট বয়সে, নির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম অনুযায়ী স্তরে স্তরে যে শিক্ষা অর্জন করতে হয় তাকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলে।
শিক্ষার আর একটি দিক হলো কর্মমুখী শিক্ষা। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত যে শিক্ষা কর্মসুচীর মাধ্যমে শিক্ষার্থী প্রাত্যহিক জীবনে ছোট খাট কাজ সম্পাদনে নিজেই সচেষ্ট হতে শিখে এবং বিদ্যালয়, গৃহ,ক্ষেত-খামার,কল-কারখানা, ইত্যাদিতে কায়িক শ্রমের দ্বারা উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে তাকেই কর্মমূখী শিক্ষা বলে। যে শিক্ষা দ্বারা শিক্ষার্থীর দেহ, মন ও বাস্তব কর্মের মধ্যে সমন্বয় ঘটে তাই কর্মমুখী শিক্ষা। কায়িক শ্রমের দ্বারা পেশার পূর্বদক্ষতার বিকাশ সাধন উপযোগী যে অংশটুকু আনুষ্ঠানিক সংযোজিত তাই কর্মমূখী শিক্ষা। একটি দেশ ও জাতির প্রধান সম্পদ হল এর দক্ষ জনশক্তি। পরিকল্পনা ছাড়া জন সাধারণকে দক্ষ শক্তিতে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমেই শিক্ষাকে যথার্থ শিক্ষায় রূপান্তর ঘটানো যেতে পারে এবং জনগনকে জনসম্পদে পরিণত করাও সম্ভব হয়। এই দৃষ্টি কোন থেকে কর্মমুখী শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত। একটি হচ্ছে সাধারণ শিক্ষা আর অন্যটি হচ্ছে ধর্মভিত্তিক শিক্ষা বা মাদরাসা শিক্ষা। মাদরাসা শিক্ষারও অনেকগুলো ধারা রয়েছে যেমন: আলিয়া, কওমী, ক্যাডেট-মাদরাসা ইত্যাদি। সাধারণ শিক্ষা হলো তাই যে শিক্ষায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠদান করা হয়। নৈতিক মূল্যবোধ বর্জিত শিক্ষা পদ্ধতিতে মানুষ যতই উচ্চ শিক্ষিত হোক অনৈতিক কাজ করতে সে দ্বিধা করবে না। এ প্রসঙ্গে Russell B. কর্তৃক স্যামুয়েল বাটলারের খ্রিষ্টান ধর্ম প্রবর্তিত “The way of all Flesh” উপন্যাসের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। এখানে ঔপন্যাসিক দেখিয়েছেন যে, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুতি ঘটলে মানুষের অধঃপতন ঘটে সে সকল প্রকার হীন ও ঘৃণ্য কাজ করতেও দ্বিধা করে না। উপন্যাসের নায়কের ক্ষেত্রে যেমনটি ঘটেছে উপন্যাসের নায়ক খ্রিষ্ট ধর্ম থেকে বিচ্যুত হওয়ার ফলে তার গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণ করতে প্রলুব্ধ হয়েছে। এই ঘটনাটি থেকে বলা যায় যে যদি ধর্মীয় মূল্যবোধ তার মাঝে থাকত তাহলে ধর্ষণের মতো অনৈতিক কাজ করতে সে প্রলুব্ধ হতোনা।
শিক্ষাক্ষেত্রে কুদরত-এ-খুদা কমিশন,শামসুল হক কমিশনসহ অনেক কমিশন গঠিত হয়েছে। পাঠ্যক্রম পাঠ্যসূচীসহ পরীক্ষা পদ্ধতিতে এসেছে নানা বৈচিত্র্য কিন্তু শুধু কমিশনের পর কমিশন কিংবা নতুন নতুন সিলেবাস প্রণয়ন করলেই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হাসিল হবেনা যদি না এগুলোর পাশাপাশি বিশেষ বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এগুলোর পাশাপাশি নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের আলোকে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি তৈরি করতে হবে। আমদানীকৃত ভাড়া করা পশ্চিমা সংস্কৃতির শিক্ষাব্যবস্থা কখনো আমাদের সংস্কৃতির জাতি গোষ্ঠীর শান্তি বয়ে আনতে পারে না।
মাদ্রাসা শিক্ষা
মাদ্রাসা শিক্ষার মানে ইসলামভিত্তিক শিক্ষা। দেশে সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধ বিশ্লেষণ করলে নি:সন্দেহে মাদরাসা ছাত্রদের সম্পৃক্ততা অতটা চোখে পড়বেনা। শিক্ষার হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মাদরাসার অবদান সিংহভাগ। শিক্ষার আলো জ্বালানোর ক্ষেত্রে মাদ্রাসাগুলোর রয়েছে অসামান্য অবদান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাবসায়ী, মিডিয়াকর্মী তথা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসর থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারীরা আছেন যারা শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক সময়গুলো মাদ্রাসাতেই কাটিয়েছেন। এমন দৃষ্টান্ত অনেক।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাম থেকে ’মুসলিম শব্দ, কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ’ইসলাম‘ শব্দ জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মুসলিম’ নামটি বাদ দেয়া হয়। ঢাবির কুরআন যুক্ত মনোগ্রাম পবির্তন করে হিন্দু ঐতিহ্যর সাথে মিল রেখে শাপলা প্রতীক ব্যবহার করা হয়। জাবি প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ২০ টি নতুন বিভাগ চালু করা হলেও আরবী সাহিত্য, ইসলামী স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাসসহ ইসলাম বিষয়ক কোন বিভাগ খোলা হয়নি। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে প্রখ্যাত মুসলিম সাহিত্যক ও দার্শনিকদের বই নেই। প্রেসিডেন্ট এরশাদ ১৯৮৫ ও ১৯৮৭ সালে দাখিল ও আলিমকে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি এর সমমান প্রদানের সময় থেকেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুরোতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থানসহ মেধাতালিকায় গুরুত্বপূর্ন অবস্থান দখল, অধ্যায়নকালীন সময়েও ঈর্ষনীয় সফলতা লাভ করেছে।এখন বাংলা ও ইংরেজিতে ২০০ নম্বরের শর্ত থাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী এদেশের বৃহত্তর জনগণকে খুশী করার জন্য কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজ মাদরাসা থেকে ভাল মানের কোন ইসলামী ব্যক্তিত্বতো তৈরি হচ্ছেই না বিপরীত পক্ষে আধুনিক শিক্ষিত ও যুগোপযোগী আলেমও বের হচ্ছে না। তাই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়েও নতুন করে ভাববার সময় এসেছে।
সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা ও মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা
বসনীয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম আলীয়া আলী ইজেতবিগোভিচ বলেছেন-সভ্যতা মানুষকে শিক্ষিত করে, সংস্কৃতি (ধর্ম) মানুষকে আলোকিত করে। একটির প্রয়োজন জ্ঞানার্জন অপরটির প্রয়োজন ধ্যান বা প্রার্থনা। ধ্যান নিজেকে জানার এবং পৃথিবীতে নিজের স্থানকে বুঝে নেওয়ার অন্তর্নিষ্ঠ প্রচেষ্টা যা জ্ঞানার্জন, শিক্ষা কিংবা বাস্তব উপাত্তসমূহ সংগ্রহ প্রচেষ্টার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। নৈতিকশিক্ষা ও বস্তুবাদী শিক্ষার তুলনা চলে পৃথিবী বিখ্যাত দুই ব্যক্তির মাধ্যমে। টলস্টয় তার সারা জীবন অতিবাহিত করেন মানুষ ও মানুষের নিয়তি বিষয়ে চিন্তা করে অপরদিকে ইউরোপীয় সভ্যতার প্রবাদপুরুষ গ্যালিলিও সারা জীবন নিজের চিন্তাকে বেঁধে রাখেন একটি বস্তুর পতনজনিত সমস্যার সাথে। আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক দাশনিক সক্রেটিস, প্লে¬টো, এরিস্টটল তাঁদের দর্শন চিন্তায় সত্যিকারের সৎ ও নিষ্ঠাবান নাগরিক তৈরি করতে নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন বলেছেন।
শিক্ষানীতি ও সংকট
বাংলাদেশে আজ অবধি অনেকগুলো শিক্ষাকমিশন তৈরি হয়েছে। যার উপর দায়িত্ব ছিলো একটি শিক্ষানীতি তৈরির কিন্তু কমিশনের শিক্ষানীতি বিষয়ক রিপোর্টের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশ আমলে গঠিত শিক্ষা কমিশনগুলো হচ্ছে-১.১৯৭৪:বাংলাদশে শিক্ষা কমিশন(সভাপতি:কুদরাত-এ-খুদা)২.১৯৭৯: অন্তবর্তীকালীন শিক্ষানীতিঃজাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশ(সভাপতি:কাজী জাফর আহমদ/আব্দুল বাতেন)৩.১৯৮৩:শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থাপনা কমিশন(সভাপতি:মফিজউদ্দিন আহমেদ)৫.১৯৯৩:প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক টাস্ক ফোর্স(সভাপতি:আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন)৬.১৯৯৭:জাথীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি (সভাপতি:মোহাম্মদ শামসুল হক)৭.২০০০:জাতীয় শিক্ষা কমিটি ৮.২০০২:শিক্ষা সংস্কার বিশেষজ্ঞ কমিটি(সভাপতি:ড. মুহম্মদ আব্দুল বারী)৯.২০০৩ জাতীয় শিক্ষা কমিশন(সভাপতি:মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা)১০.২০০৯:জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ তৈরির জন্য গঠিত কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিটি।
পাকিস্তান আমলে হয়েছিল-মাওলানা আকরাম খান শিক্ষা কমিটি(১৯৪৯-৫১),পূর্ববঙ্গ মাদরাসা শিক্ষা উপদেষ্টা আশরাফুদ্দিন চৌধুরী কমিটি-১৬৫৬),পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সংস্কার(আতাউর রহমান খান)কমিশন-১৯৫৭,জাতীয় শিক্ষা(এস এম শরীফ)কমিশন রিপোর্ট ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে,(হামুদুর রহমান)কমিশন রিপোর্ট ১৯৬৬ খৃষ্টাব্দ,পাকিস্তানের নতুন(এয়ার মার্শাল এম নূর খান শিক্ষানীতি ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দ),পাকিস্তান সরকারের নতুন (শামসুল হক কমিটি) শিক্ষা ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে ।
ব্রিটিশ ভারতে ১৭৯২ সালে সর্বপ্রথম চার্লস গ্রান্ট শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়।প্রায় দুশ বছরের শাসনামলে ব্রিটিশরা মোট নয়টি কমিশন রিপোর্ট প্রদান করে।যেমন-১.১৭৯২:চার্লস গ্রান্ট শিক্ষা কমিশন ২.১৮১৩:কোম্পানি সনদ ৩.১৮৩৫:লর্ড ম্যাকলে কমিটি ৪.১৮৩৮:উইলিয়াম অ্যাডামস কমিটি ৫.১৮৫৪: উডস এডুকেশন ডেসপাচ ৬.১৮৮২:ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার শিক্ষা কমিশন।৭.১৯১৯:এম ই স্যাডলার শিক্ষা কমিশন ৮.১৯৩৪:সা প্র“ শিক্ষা কমিশন ৯. ১৯৪৪: জন সার্জেন্ট শিক্ষা কমিশন।
সংকট নিরসনে করণীয়
সংবিধান কতৃক দেয়া শিক্ষা সংক্রান্ত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সরকারকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ (১৫)ক এ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ (১৭)ক একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের জন্য নির্ধারনী স্তর র্পযন্ত সকল বালক বালিকাকে তা বৈজ্ঞানিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান। অনুচ্ছেদ (১৭)খ সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও সদিচ্ছায় প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টি। অনুচ্ছেদ (১৭)গ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষতা দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। অনুচ্ছেদ ২৮(৩)কোন নাগরিককে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনরূপ অক্ষমতা বাধ্যবাধকতা,বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না।তাই জনগণের সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য সরকারকে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়ঃ- ১.শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ।২.সময়ের সাথে সংগতিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ।৩.পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা সংগঠন পালন।৪.শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনা ও পরামর্শ দান।৫.পরিকল্পনা অনুযায়ী গৃহীত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ।৬.শিক্ষার সমসুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ।৭.সময়োপযোগী শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলা।৮.শিক্ষা তথ্য সরবরাহ ও গবেষণা কর্ম পরিকল্পনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা।৯.বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশী ও বিদেশির সাথে শিক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন।১০.শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও যুক্তকরণ।
উপসংহার:
শিক্ষার উদ্দেশ্য দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করা।এ সম্পর্কে সিজার বলেন,"Three kinds of progress are significant, There are progress in knowledge and technology. Progress in socialization of man & progress in spirituality. The last one is the most important"শিক্ষার উদ্দেশ্য যাই থাকুক আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যে এধরনের মানুষ বের হচ্ছেনা এটা খুবই ভাবনার বিষয়।নেপোলিয়ন বলেন, আমাকে ভাল মা দাও, আমি তোমাদিগকে ভাল জাতি দিব। তিনি খুবই শিক্ষিত মায়ের কথা বলেননি বরং বলেছেন চরিত্রবতী,ধৈর্য্যশীলা ও ন্যায়বান এক মায়ের কথা। চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে এমন মা আমরা কেন পাচ্ছিনা? এর মূল কারণটি দার্শনিক Stanly Hall বলেছিলেন “If you teach your children the three R’s ( Reading,Writing and Arithmatics) And leave the fourth `R’(Religion) you will get fifth `R’(Rascality). তাই এটিই সত্য যে কাংখিত মানের সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির জন্যে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন জরুরী আর সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থাতেও ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্তকরণ প্রয়োজন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন