একটি নির্জন দুপুরে একটি ভালোবাসার উপাখ্যান
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্ন নীল ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৫৮:৩৯ সকাল
বর্ষার প্রকৃত রূপ ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে।সারাটা সকাল লাগামহীন বৃষ্টিকে বর্ষার আসল রূপই বলা যেতে পারে। এই ভর দুপুরে রাস্তায় তেমন মানুষ নেই।সবাই যার যার বাসায় সময় কাটানোতে ব্যস্ত। নতুন দম্পতিরা চক্ষু লজ্জা উপেক্ষা করে দরজায় খিল লাগিয়ে কাথামুড়ি দিয়ে খুনসুটিতে ব্যস্ত, তরুন-তরুনীরা প্রিয়জনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলাতে ব্যস্ত।
এরকম একটা সময়ে কোন তরুণ-তরুণী রাস্তায় পাশের চায়ের দোকানে বসে থাকলে তা কিছুটা আগ্রহ-উদ্যেগ হয়। চায়ের দোকানদার মফিজ মিয়া আগ্রহ ভরা মুখে তাদের দিকে চেয়ে আছে। ৬ ঘন্টা যাবত বসে আছে এই তরুণ-তরুণী যুগল। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বৃষ্টি থামলেও তাদের উঠার কোন নাম নেই। ১০ মিনিট পর পর চায়ের অর্ডার দিচ্ছে ওরা, আর তরুণটি একের পর এক সিগারেট ফুকে যাচ্ছে, একই সাথে তরুণীটির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে যাচ্ছে। “কত কিসিমের পোলাপাইন যে দেখমু এই জীবনে” আপন মনে বিড়বিড় করল মফিজ মিয়া।
বৃষ্টির ফোটাগুলি ধীরে ধীরে নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে, হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটা ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নীরা। বৃষ্টির ধারা হাতে পড়তে পড়তে কেমন যেন অন্যমনষ্ক হয়ে পড়েছিল নীরা। সাব্বিরের হাতের ছোঁয়ায় সাব্বিরের দিকে ফিরলো নীরা । এ ছেলেটাকে সে এত ভালবাসে কেন? কি আছে ছেলেটার? মুখভর্তি দাড়ি, কাধ পর্যন্ত নামানো চুল, চোখে চশমা, সবসময় উদাস ভাবে বসে থাকে। ক্যাম্পাসে তো একে সাব্বির বলে খুব কমই ডাকে। সবাই ডাকে রবীন্দ্রনাথ নামে। হঠাৎ হাসি পেল খুব নীরার। কিন্তু সে যেরকমই হোক নীরা তাকে কোন কারণ ছাড়াই প্রচন্ড রকমের ভালবাসে। “নেন মামা আপনের সিগারেট” মফিজ মিয়ার থেকে সিগারেট নিয়ে ধরিয়ে বেশী করে ধোঁয়া ছাড়ল সাব্বির।
নীরা হঠাৎ সিগারেট কেড়ে নিল সাব্বির থেকে। এই,অনেক হয়েছে, আর কয়টা খাবে? নীরা বলল।যতক্ষণ এই হৃদয় নিকোটিনের তৃষ্ণায় রাহজানী করবে, সাব্বির বলল।নাহ আর খেতে হবে না । শুধু সিগারেটেই আছো নাকি অন্যকিছু ধরেছো? নীরা রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো। ‘নাহ, আপাতত এগুলাতেই আছি’। নীরা বিরস মুখে তাকিয়ে রইল সাব্বিরের দিকে। ও আবার বিড়বিড় শুরু করেছে। “এ হাত ছুয়েছি নীরার হাতে এ হাত দিয়ে আমি কিভাবে পাপ করতে পারি” নাহ! এ ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না, দীর্ঘশ্বাস ফেললো নীরা।
বৃষ্টিটা কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়েছে। পিচ্চি পিচ্চি কিছু ছেলে-পুলেকে দেখা যাছে। তারা মনের আনন্দে ফুটবল সাদৃশ্য কোন বস্তু নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। সাব্বির এ অর্থহীন দৃশ্য গভীর আনন্দ নিয়ে দেখছে। ব্যাপারটাকে নীরা খুবই বিরক্তবোধ করলেও সাব্বির নীরার দিকে তাকাচ্ছে না।আর কতক্ষণ তাকিয়ে থাকবে ওইদিকে? তোমার পাশে কেউ বসে আছে ওটা ভুলে গেছ মনে হয়? নীরা বিরক্ত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
ওদের খেলার সবথেকে ইন্টেরেস্টিং পার্ট কি জান, এদের কোন গোলবার নেই, একজনের পিছনে একজন দৌড়াদৌড়ি করাই এদের মূল উদ্দেশ্য।এসব ছাড়ো তো! আমার দিকে তাকাও।একটু বসো। খেলার শেষটা দেখে নি।আই এম সিরিয়াস নাও। তুমি আমার সাথে ওই ব্যাপারে কথা বলতে কি ভয় পাচ্ছো? সাব্বির ফিরলো নীরার দিকে। কথা বলছো না কেন?চা খাবে? সাব্বির বলল।তোমার সমস্যাটা কি? তুমি কি কখনোই আমাকে বোঝার চেষ্টা করবে না??সাব্বির কথা বলল না। চশমার গ্লাস মুছতে লাগলো ব্যস্ত ভঙ্গিতে। ‘আচ্ছা আজকে কি তোমার সাথে আমার শেষ দেখা?’ সাব্বির হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো।
নীরা সম্ভবত এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল। তার শরীর কাপতে লাগলো, চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কয়েক মূহূর্তের নিরবে সামলে নিল নীরা। ‘আমার উঠা উচিত, দেরি হয়ে যাচ্ছে’ বলে তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়লো নীরা। বৃষ্টির ঠিক পরের উগ্র রোদে মাখানো পিছলে পথে হেটে যেতে লাগলো সে।দোকানের বিল মিটিয়ে পিছন পিছন এসে নীরাকে থামালো সাব্বির, ‘কোথায় যাচ্ছো?’ পিছন ফিরলো না নীরা। সে সাব্বিরের কাছে তার দূর্বলতা দেখাতে পারল না। কোথায় যাচ্ছো বললে না তো? সাব্বির আবার জিজ্ঞেস করলো।
‘আর ৬ ঘন্টা পর আমার বিয়ে। আর কোথায় যেতে পারি আমি? তুমি এতটা নির্দয় কেন? আমার উপর কি তোমার কোন অধিকার নেই?’ নীরা ফোপাতে ফোপাতে বলল।‘অধিকার থাকবে না কেন। তুমি তো আমার নীরা।’ যথাসম্ভব স্বাভাবিক থেকে বলল সাব্বির।“আমার বিয়ে আজকে। তুমি শুধু একবার ডাকো আমি তোমার কাছে চলে আসবো। তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না আমি।”ফোপাতে ফোপাতে বললো নীরা।আমার কাছে এসে থাকবা, খাবা কই। আমার নিজের থাকার ব্যবস্থা নেই। সাব্বির বলল ।‘তুমি যেখানে রাখবে আমি সেখানে থাকবো, তুমি যা খাওয়াবে আমি তা খাবো। শুধু একবার বলো, আমি সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে তোমার কাছে চলে আসবো।’ কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল নীরা। সাব্বির কোন কথা বললো না। একমনে রাস্তার পাশের আম গাছটির দিকে তাকিয়ে থাকলো।বুঝেছি, চলি আমি, আর কোন কথা না বলে হেটে গেল নীরা। এবার আর ডাকলো না সাব্বির। নীরার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে বিড়বিড় শুরু করলো।
“গ্রহন শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস,,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”
হাতের উলটো দিকে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া নোনাজল মুছলো সাব্বির।
বিষয়: সাহিত্য
১১৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন