ঝুম-হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যুবার্ষিকীতে লেখা
লিখেছেন লিখেছেন সূর্য্য গ্রহণ ০৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:০৭:৪২ রাত
খুব সকালে ঘুম ভাঙাটা অসহ্যকর। কানের পাশে তখন অল্প কোনো শব্দকেও তীব্র মনে হয়। হালকা চোখ মেলে থাকলে আলো চোখে পড়ে, এই আলোয় চোখ জ্বালাপোড়া করে। এই ঘোলা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখি সামনে এক ব্যাক্তি বসে আছে। ব্যাক্তির গায়ের রঙ হলুদ।
-ভাই, উঠছেন?
-জি
-ও ভাই। থ্যাঙ্কু। অনেকক্ষণ ধইরা বইসা ছিলাম।
-ও দুঃখিত। আমার কাছে কি মনে করে এসেছেন ভাই? আর আপনার গায়ের রঙ এমন কেনো?
-ভাই, একটা কাম আছিল। আর গায়ের এইডা কালার। জিনের বাদশারে কইসিলাম কালার এইডা দিতে না, তাও দিছে।
-বিষয় পরিষ্কার করেন, আপনি কে?
-আমি জ্বিন ভাই, গল্পের বইয়ের জ্বিন।
-ও। কেনো আসছেন?
-আজকে ফ্রি টাইম, তাই আপনেরে নিয়া ঘুরবো। আপনের সময় হবে?
-আচ্ছা। আপনি বসুন। আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।
লোকটা আমার কথায় আশ্বস্ত হয়েছেন। এই আশ্বস্ত হওয়ার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি আমার বালিশের উপরে উঠে বসেছেন। আর সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছেন।
হাত-মুখ ধুয়ে এসে দেখি তিনি ফ্যান বন্ধ করে ওখানে ঝুলে আছেন। আমি জানতাম না জ্বিন সম্প্রদায় ঝুলতে পছন্দ করে।
-ভাইজান কি নাস্তা করেছেন?
-না। জ্বিনসাহেব, আপনি ব্যাবস্থা করতে পারবেন?
-ভাইজান, জ্বিন হিসেবে আমার অবস্থা খুবই গরীব। অন্যসময় চায়ের দোকান থেকে রুটি-চা চুরি কইরা খাইতাম। ভাই, চায়ের কথা মনে পড়েছে, চায়ের ব্যাবস্থা করতে পারবেন? খুব সকালে চা না খাইলে আমার হবে না।
-আচ্ছা, আমি ব্যাবস্থা করছি। আপনি কি আর কিছু খাবেন?
-না থাক।
আমি আমার নাস্তা আর চা নিয়ে এলাম। আমার এক কাপ চা কে দুইটা কাপে ঢেলে নিলাম। জ্বিনসাহেব ব্যাপক ভাবে চা খোর। চায়ের কাপ দেখে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। জ্বিনসাহেবের স্বাস্থ্য তেমন ভাল না। চিকনচাকন, রোগা আর লম্বাটে। তবে জ্বিন হিসেবে একটাই বৈশিষ্ট্য, তার গায়ের রঙ ক্যাটক্যাটে হলুদ।আমার হাত থেকে কাপটা নিয়ে চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলেছে। আর ধীরে ধীরে আমার নাস্তার প্লেটের থেকে একটা পাউরুটি চাবাচ্ছে।
-ভাইজানের কাছে বিড়ি হবে?
-না
-সিগারেট হলেও চলবে
-না নেই। আমি খাই না।
-ও। আমার আবার চায়ের পর বিড়ি না টানলে হবে না। বিড়িতে হেব্বি পিনিক।
-ও আচ্ছা।
-ভাইজানের মন খারাপ?
-না, মন ভাল আছে।
-মন ভাল থাকলেই ভাল। বুঝছেন ভাইজান, আইছিলাম ঘুরতে। কিন্তু বিড়ি না খাইলে শরীরে জোর পাই না। ঘুম আইতাসে। ভাইজান, আপনার এইখানে ঘুমানো যাবে?
-আচ্ছা, ঘুমান।
-আপনি আমাকে এত আদর যত্ন করলেন, আপনের একটা ইচ্ছা পূরণ করব। বলেন কি ইচ্ছা?
-সত্যই?
-হুম। চাইয়া দেখেন। তবে বেশি বড় কিছু দেওয়ার সামর্থ্য আমার নাই। ছোটখাটো কিছু চান
-আমার ইচ্ছা নাই।
-ভাইজান, আপনে আদর কইরা চা খাওয়াইলেন, ঘুমাইতেও দিতাসেন। একটা কিছু তো করবই। ভাইজান, আপনে চাইলে বৃষ্টি নামাইতে পারি। নামাবো?
-নামান।
আমি আমার চায়ের কাপটা নিয়ে জানালার পাশে বসলাম। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সব ঘোলা হয়ে গেছে। জ্বিনসাহেব আমার প্লেটের বাকি তিনটা পাউরুটি খেয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়া আছেন। আমারও ঘুম আসছে। সব ঘোলা ঘোলা। দৃষ্টি অপরিষ্কার। হঠাৎ দেখি জানালার পাশে হুমায়ুন স্যার। কেমন শিশুর দৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখছেন। আমার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি হাসলেন। আমার চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। হুমায়ুন আহমেদের ব্যাপারটা সত্য নয়, তবুও সত্য হিসেবে আমার মস্তিষ্ক উপস্থাপন করছে। ঘোরে ঘোরে থেকে হুমায়ুন আহমেদকে দেখা সুখকর নয়। তাই আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
বিষয়: সাহিত্য
১১৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন