সন্ধ্যারূপ ৪

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য্য গ্রহণ ০৬ জুলাই, ২০১৪, ০৫:০৮:৪০ বিকাল

মাঝেমাঝে ঘন জনস্রোতে গা ভাসাতে ভালো লাগে। ওইখানে সবার চোখে মুখে আলাদা আলাদা ভাবভঙ্গি থাকে। তার মাঝে মিল খুঁজতে খুঁজতে হাঁটা আনন্দের। মাথার উপর তাতানো সূর্য্য থাকলে রাস্তার পিচকে খুব চকচকে মনে হয়। এই রোদকে পিচগলা রোদ বলে। তাপে রাস্তার পিচ গলে আমার জুতোর তলে আটকে আসছে। ভারী ভারী পা ফেলে হাঁটছি।

-সূর্য্য, দাঁড়াও!!

হঠাৎ হঠাৎ ভড়কে যাওয়ায় অভ্যাস নেই। তবে রিনরিনে কন্ঠ শুনে অনেকটাই ভড়কালাম। কন্ঠটা অতি পরিচিত। কারণ এটা মিলির।

-এই, দাঁড়াতে বললাম না! দৌড়াচ্ছ কেনো?

-আমার জুতো ছিড়ে গেছে

-কই, ছিড়েনি তো!

-ও। তাহলে ভুল বুঝেছি।

-এখনও আমাকে দেখলে পালাও?

-এত রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে ভাল লাগছে না। এসো, চা খাই।

প্রসঙ্গ বদলানোর চেষ্টা করলাম। খুব কম মেয়েরাই প্রসঙ্গ বদলানোর কথা বুঝতে পারে। এদের কথা বলার সময় মন অনেক জায়গায় বিচরণ করে। এরা একইসাথে সিরিয়ালের নায়িকার কথা আর নিজের ছেলের স্কুলের কথা ভাবতে পারে। এটা পুরুষদের মাঝে কম।

-তোমাকে অনেক খুঁজেছিলাম, কিন্তু পাইনি। বাসাও ছেড়ে দিয়েছো। এমন কর কেনো তুমি?

-এত কিছু একসাথে বলা সম্ভব না যখন আমি নিজেই এর ঊত্তর জানি না। চা খাও, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

-তুমি আমার চিঠির ঊত্তর দেওনি!!!

-সময় ছিল না।

-আচ্ছা, বুঝেছি। বাদ দিলাম সব। এবার বল, কেমন আছ?

-শেষবার দেখা হওয়ার সময় যেমন ছিলাম।

-সোজা ঊত্তর দাও

-আমাদের মত মানুষরা খারাপ থাকে না মিলি।

-তাহলে ধরে নিব ভালোই আছ?

-হুম

-আমি এটাই জানতাম। তুমি জান আমি কেমন আছি?

-কেমন আছ?

-ভাল, খুব ভাল। তোমার সাথে না দেখা হওয়াতে আরো ভাল ছিলাম।

-ও, আচ্ছা।

মেয়েদের গুরুতর একটা সমস্যা তারা কথা বলার সময় খুব দ্রুত আবেগময় হয়ে পড়ে। কথা জড়িয়ে যায়। চোখের আশপাশ টলমলায়মান হয়ে থাকে। এতে চোখের কাজল ধুয়ে যায়। প্রেয়সীর কালিমামাখা চোখ তখনও প্রেমিকের কাছে ভাল লাগে। মিলির চোখ টলমল করছে। আগামী ঝড়ের আভাস। কথা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়।

-মিলি

-কিছু বলবে?

-হুম। তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?

-না!! আমার কেনো কষ্ট হবে?

-তাহলে ভাল। আমার এখন উঠতে হবে। তুমি তোমার ফোন নাম্বারটা লিখে দাও, আমি আগেরটা হারিয়ে ফেলেছি।

-সত্যিই তুমি আমার সাথে কথা বলবে?

-হুম

-নেও।

আমি উঠে এলাম কাগজটা নিয়ে। মেয়েটার চোখের টলমলানি কমেছে। এর বিপরীতে উচ্ছলতা ফিরে এসেছে। মাঝেমাঝে মিথ্যা কথা মানুষকে আনন্দ দেয়, মিথ্যা আশ্বাস আনন্দিত করে। আমার আশ্বাসে মেয়েটা আগের বেশ অনেক কিছু ভুলে গেছে। আমি হাঁটা শুরু করলাম।

মেয়েদের সাথে কথা হলে ছেলেরা সহজেই মায়ায় জড়িয়ে যায়। সহজেই আবেগে বেগ হারায়। মিলির কথাগুলো মাথায় এখনও ঘুরছে। হালকা মায়াময় করে গিয়েছে মেয়েটি সবকিছু। এই মায়ায় থাকা সম্ভব না। তাই ফোন নাম্বার টা শহরের ড্রেনের পানিতে ফেলে দিলাম। ফোন নাম্বারটা ভাসতে ভাসতে এগিয়ে যাচ্ছে, সাথে এখনকার সব স্মৃতিও। শহরে হাঁটার সময় স্মৃতিতে ডুবে থাকতে হয় না, নতুবা ড্রেনের পানিতে নিজেকে ভাসতে দেখা যায়।

বিষয়: বিবিধ

১০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File