1st story

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য্য গ্রহণ ২৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:১৮:১৯ রাত

খুব সকাল বেলা জেগে গেলাম। জেগে যাওয়াটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিলও। খুব সকালে জাগার কারণটা হল তীব্র কলিংবেলের আওয়াজ। চশমাটা চোখে বসিয়ে কোনোমতে টলতে টলতে গেটের কাছে গেলাম।

-তাজ?

-হুম্

-আপনার একটা পার্সেল

-পার্সেল!

-হুম্। এখানে সাইন করেন। ডেটটাও

-এখানে?

-হুম্। আর ওই পেজে নামটা

-আচ্ছা।

একটা পার্সেল। বক্সের উপরে নাম আর ঠিকানাটা কাগজে লিখে টেপ মারা হয়েছে। খুলতে বেগ পেতে হল না। খুলতেই এক রাশ ঝলকানি চোখকে ঢেকে দিল। বক্স ভর্তি ছোটো রঙ্গীন কাগজের টুকরো। ভিতরে একটা বৈ। বইটা শেক্সপিয়ারের "রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট". কাগজে শুধু একটাই লেখা, "তুই।" ইতিমধ্যে প্রায় ৮টা বেজে গেছে। বইটা টেবিলে রেখে বক্সের কাগজগুলো কাঁচের বোলে রেখে অফিসের জন্য তৈরীই হচ্ছি।

*****

-তুই চলে যাবি?

-হ্যাঁ রে

-আর আসবি না?

-আসবো তো।

-কবে?

-জানি না

-আমেরিকা তো অনেক দূরে, তাই না?

-হ্যাঁ তো। ম্যাপ দেখিস

-তুই যা। আমি ম্যাপ দেখবো না

-আচ্ছা

নদীর পাড়ে বসে দুটো ছেলেমেয়ে কথা বলছিলো। অপরিপক্ব। বন্ধুর অভাবটা কিছুদিনের জন্য মেয়েটার মন দখল করবে হয়তো। ছেলেটা অনিশ্চয়তায় ভুগছে। আর দেখা হবে কি ??

*******

সারা দিনটা ব্যাস্ততায় কেটে গেলো। রাস্তার জ্যাম, লেট হওয়ায় বসে ঝাড়ি, ফাইল আর ফাইলে একটা দিন কিভাবে কেটে যায় তা বুঝা যায় না। বাসায় আসতে আসতে এগারোটা বেজে গেলো। বাসায় কারেন্ট নেই। জানালার কাঁচ ভেদ করে একদলা চাঁদের আলো রুমে প্রবেশ করছে। আমার ডায়েরির সেই আর্কাইভটা বের করার সময় এসেছে।

ডায়েরির প্যাকেটটা খুলে উল্টো করতেই অনেকগুলো চিঠি। চিঠিগুলো রঙ্গীন কাগজের। চাঁদের আলোতে রংগুলো উজ্জ্বল হয়ে আছে। সবগুলোতে একটাই লেখা "কবে আসবি?"

********

মেয়েটার যাওয়ার সময় এসে গেছে। নিজের ঘরে বসে ব্যাগটা বারবার চেক করছে সে। একটা কাঁচের বোলে কিছু রঙ্গীন মার্বেল ভরে ছেলেটার হাতে দিলো মেয়েটি।

-তুই যা

-কেনো?

-আমি এখন চলে যাবো

-আমিও আসবো তোদের সাথে

-কিন্তু আমরা তো অনেক দূরে যাবো রে

-আমি বাবার কাছে থেকে কিছু টাকা নিয়েছি। আমারও আছে কিছু। সব মিলিয়ে হবে হয়তো

-হবে না

মেয়েটা দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ছেলেটা কাঁচের বোলটা সাবধানে ধরে গাছের ডালে উঠলো। অন্য কোনোদিন হলে মেয়েটা সাথে থাকতো। অ্যাজ নেই, কালো থাকবে না। পরশুও না। আর থাকবে কিনা নিশ্চিত না। ছেলেটার চোখে আবারো অনিশ্চয়তা।

*******

আজকে সকালে বইটা নতুন কেনা নয়। নতুন বইয়ের ঘ্রাণটা অন্যরকম হয়। এই বইটার ঘ্রাণটা খুব পরিচিত। খুউব পরিচিত। জানালার পাশে বসে বইয়ে নাক ডুবিয়ে বসে আছি। মগজের গ্রে ম্যাটারস আর হুয়াইট ম্যাটার্সে বারবার আদেশ পাঠাচ্ছে স্নায়ু। এর ম্যাচ চাইই চাই।

চাঁদের আলো হয়তো মগজের গতি কমিয়ে দিয়েছে। বইয়ের সেই অদ্ভুত পরিচিত ঘ্রাণটা মাদকতায় ডুবিয়ে রেখেছে আমাকে। কাউকে খুব মিস করতে ইচ্ছে করছে। ১৫টি বসন্ত শেষে আজ আবার সেই পুরোনো অনুভূতিটা জেগে উঠছে।

********

১০ বছরের ছেলেটি আজ গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছে, বাবা-মার সাথে। ভ্যানে বসে সেই গাছটার দিকে তাকাচ্ছে বারবার। সেই পুকুর, সেই দোলনা, রাস্তা, মাঠ-ঘাঁট সবই খুব পরিচিত। কিন্তু পরিচিত এই পরিবেশকে ছাড়ার দুঃখকে ছাপিয়ে আরেকটা দুঃখ বালকের দশ বছর বয়সী মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। কিন্তু অপরিপক্ক তো, তাউ বুঝছেও না, সৈছেও না। ধীরে ধীরে গ্রাম ছেড়ে টাউন অঞ্চল, তারপর শহরে। হাতের বোলটা একমুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেয়নি ছেলেটি।

ছেলেটুই আজ ২৫ বছরের যুবক। এই বয়সে শতটা প্রেম করলেও করা যায়। কিন্তু পরিপক্ক হয়েও কোনো কারণে সে কাউকে বন্ধু বানাতে পারছে না। ভয়টা, ছেড়ে যাওয়ার ভয়। কাঁচের বোলটা এখনো আছে। রুমে একটা জানালার পাশে। যাতে চাঁদের আলো পরে পুরো ঘরটা উজ্জল হয়।

পঁচিশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষায় কাটিয়েছে সে শুধু একজনের অপক্ষায়। যখনই সে একা বোধ করে তখনই কাঁচের বোলটার দিকে তাকিয়ে থাকে। এক-আধটু পাগলামি তার ভালবাসাকে এখনো বাঁচিয়ে রাখেছে।আজ তার অপেক্ষা শেষ হওয়ার কথা।

*********

মাথাটা ভারী ভারী লাগছে। কিছু বুঝতে পারছি না। আজ কিছু ঘটেছে। আজ কিছু ঘটার কথা। ঘ্রাণটা আমাকে পুরোনো কিছু মনে করাতে চাচ্ছে। সেই অতি প্রিয় ঘ্রাণটা।

-তুই আমার হাতটা ছোঁ

-কেন?

-ছোঁ বলছি

-আচ্ছা

-আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবি

-কিরে? আজকে দরদ উথলে পড়ছে কেন?

-ধরনা একটু। এই শেষ, আর হয়তো পারবি না

হুম্। সেই হাত ছোঁয়া। তার হাতের স্পর্শ। তার শরীরের শেষ ঘ্রাণ। তার হাতের ছোঁয়ায় হৃদয়ের প্রথম অতিমানবীয় অনুভূতি পেয়েছিল আমার কিশোর মন। আমি তাহলে কিছু ফিরে পেতে যাচ্ছি !!! আজ হোক, কাল হোক। আমি সেই হাতের স্পর্শ ফিরে পাবো, সেই শরীরের ঘ্রাণ। ওইটাই শেষ ছিল না। তাই হয়তো সবচেয়ে অপছন্দনীয় "রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট"এর বইটাও আমার মনকে মাদকিয়তায় ডুবিয়ে রেখেছে। চাঁদের আলোয় ঠোঁতের কোনায় দশ বছরের ছেলেটার সেই হাসি ফুটে উঠছে।

বিষয়: বিবিধ

১০২৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

212990
২৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:২১
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে আপনার প্রথম গল্প, আপনার সাহিত্যমান ভাল, সাহিত্যমানের সাথে নৈতিকতার সংযোগ ঘটানোও জরুরী। শুভেচ্ছা রইল।
২৫ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
161251
সূর্য্য গ্রহণ লিখেছেন : এটাই প্রথম। আমাকে যাতে একটু দিক প্রদর্শন করে তাই ব্লগে লিখলাম। ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File