Blog=5

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য্য গ্রহণ ১৩ মার্চ, ২০১৪, ১১:৩৩:১১ সকাল

আধা-সন্ধ্যা। এই সময়টা শহরের সব চেয়ে নিশ্চুপ সময়। সবাই নামাজ পড়তে মসজিদে যায়, তাই রাস্তায় মানুষ কম থাকে। আমি বেরোলাম। পকেটে সম্পত্তি বলতে একটা মোবাইল, আর দুই টাকা। সামনে দেখি তিন জন পুলিশ। বুকের ঢিপ-ঢিপ শব্দটা শোনা যাচ্ছে।

-কোথায় যাও?

-হাওয়া খেতে

-মানে? কোথায়?

-লেক

-লেক যাবা না। এখন আমাদের সাথে যাবা।

*******

থানায় বসে আছি। বসে বলতে ঠিক চেয়ারে না, ফ্লোরে। আমার সামনে টেবিলে জনাব আক্তার আলি ও.সি। ভয়ঙ্কর চাউনিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে কিছুটা বিব্রত। আক্তার সাহেব এখন একটা পান খাবেন। সাথে এক কাপ চা। সিগারেটও খেতেন, কিন্তু আমি তার বয়সে অনেক ছোটো হওয়ায় আমার সামনে খেতে লজ্জা পাচ্ছেন।

-ওই, চা খাবা?

-হুম্

-আফজাল, দুই কাপ চা লয়া আয়।

আফজাল মিঁয়া থানার সামনের চায়ের দোকানদার। আমার সাথে পরিচিত। আমাকে পুলিশের কাছে দেখে তিনি রীতিমতো ভড়কে গেছেন। আমি কিছুটা ভীত অবস্থায় আছি। এই অবস্থায় ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তা না হলে ভয় জিনিসটা আছে কি করতে?

আমরা চা খেলাম। ও.সি সাহেব একটা পান খেলেন। পান খেয়ে তিনি খেয়াল করলেন তার পাশে বাস্কেট্টা নেই। তাই মেঝেতেই পিক ফেললেন। আমার দিকে তাকালেন। অনেক্ষণ তার দৃষ্টির অগোচরে ছিলাম।

-নাম কি?

-সূর্য্য

-পুরা নাম কও

-সূর্য্য গ্রহণ

-এইডা কেমন নাম

-বাবা-মা কোনো একটা নাম দিয়েছিল, কিন্তু পছন্দ হয় নাই। তাই বদলে ফেলেছি।

-ভালো। বাবা কি করে

-চাকরি

-কিয়ের চাকরি?

-সরকারি

আমার ব্যাপারে তথ্য জানা এই পর্যন্ত শেষ। আমাকে জেলের ভিতরে ভরে রাখা হয়েছে। নিজেকে বেশ ভীত মনে হচ্ছে। তাই পাশের সেলে তাকিয়ে আছি। মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়, অধিক ভয়েও হয়তো ইট-পাথর কিছু একটা হয়ে যায়। আমি ইট-পাথর হওয়ার চেষ্টা করছি। তখন নির্বিকার থাকা যাবে। আক্তার সাহেব আমার থেকে লুকিয়ে সিগারেট খাচ্ছেন। ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছি। আজ হয়তো ছাড়া পাবো না। আক্তার সাহেব মনে মনে ভেবে রেখেছেন, হয়তো কেউ আমাকে ছাড়াতে আসবে। তখন তার টু-পাইস ইনকাম হবে। কিন্তু এই টাইপের মানুষ আমার কাছে নেই। আফজাল মিয়াঁ দোকানদার ভিতরে ঢুকলেন। ও.সি সাহেবের সাথে কিছু কথা হচ্ছে, হয়তো আমার ব্যাপারে। আমার দিকে ঘনঘন তাকাচ্ছেন। এসে জোরে একটা থাপ্পর আমাকে বসালেন। তাঁরপর বললেন "তোরে যাতে ঐখানে আর না দেহি।" বলে গেট খুলে আমাকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন। আমার দিকে একটা বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে তাকালেন তিনি। একে বলে "অ্যাশ লুক" বাংলায় "ভস্ম দৃষ্টি।"

আফজাল মিয়া দোকানদার আমাকে ছাড়ার সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি কোনো কাজের না তবে আকামের না। আমি কোনো খারাপ কাজ করি না এইটা সিউর। তার কথা ঠিক, পুরোপুরিই। আফজাল মিয়া চা খাওয়ার অফার করলেন। আমি খাবো না। একটা সিগারেট ধরালাম। তখন মনে পড়লও, আমার পকেটে দুই টাকার বেশি নেই। তাও ধরিয়ে দুই টান দিয়ে আফজাল মিয়াকে টাকা সাধলাম। তিনি নিলো না। আমি ধীরে ধীরে আবার লেকের পাড়ে যাচ্ছি। সন্ধ্যার রুটিন সম্পূর্ণ হয়নি। আমি লেকের পাড়ে বসব। অন্ধকার আমাকে লুকিয়ে ফেলবে, সম্পূর্ণভাবে . . . .

বিষয়: বিবিধ

৮৮৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

191644
১৩ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
191769
১৩ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
সজল আহমেদ লিখেছেন : পিতা মাতার দেয়া নামটা পাল্টালেন কেন?
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:০৯
153207
সূর্য্য গ্রহণ লিখেছেন : পিতামাতা তো ভালও নাম ই দিয়েছিল, কিন্তু ডাকনামটা দিলো দাদু Happy তাকে খুব ভালবাসি তো তাই আর পিতামাতার নামটা কাউকে বলি না, ওইটা গোপন থাক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File