'BDR' বিদ্রোহের চাঞ্চল্যকর অজানা কিছু তথ্য (১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন তানভীর আহমাদ ফাহীম ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৯:২৬ দুপুর

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সাবেক উইং কমান্ডার

"সালাউদ্দিন চৌধুরী" নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত

‘ঠিকানা’কে দেয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাত্কারে 'BDR' বিদ্রোহ নিয়ে নানা অজানা তথ্য জানিয়েছেন। (যা ১৭/০৮/২০১৩ তারিখে আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

সাক্ষাত্কারে বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজমের সহকারী একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত এই উইং কমান্ডার বলেন,

আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছি। আমি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছি।

পিলখানার ঘটনার পর আমি ২০০৯ সালের জুনে আবেদন করেছিলাম। পিলখানায় আমাদের এতগুলো অফিসারকে অসহায়ের মতো মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি।

কেউ তাদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। আমি তো ঘটনাটা দেখেছি, মনিটরিং করেছি কীভাবে তিলে তিলে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।

আমাকে চাকরিতে ধরে রাখার যারপরনাই চেষ্টা করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল ছিলাম এবং আবেদনের আড়াই বছর পর আমি অবসরে যেতে পেরেছি।

’নিউইয়র্কে বসবাসরত উইং কমান্ডার সালাহউদ্দিন চৌধুরীর সাক্ষাত্কারটির উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ এখানে উপস্থাপন করা হলো :

ঠিকানা : পিলখানার ঘটনাটা কি পরিকল্পিত ঘটনা?

সালাউদ্দিন : পিলখানার ঘটনায় সৈনিকদের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল, তার দায়-দায়িত্ব

মইন- ফখরুদ্দীন সরকারকে নিতে হবে। মইন-ফখরুদ্দীন সরকারের হঠকারিমূলক সিদ্ধান্তের কারণেই সৈনিকদের মধ্যে এরূপ ক্ষোভের জন্ম। আর এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যেভাবে সৈনিকরা ঘটালো, তা দমনে সব ব্যর্থতা হলো আওয়ামীলীগ সরকারের।

ঠিকানা : মইন-ফখরুদ্দীনের হঠকারী সিদ্ধান্তটা কী ছিল?

সালাউদ্দিন : একজন বিডিআর সৈনিকের দায়িত্ব কী?

বিডিআরের সৈনিকদের দিয়ে যখন মইন-ফখরুদ্দীন সরকার

জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য জনগণকে সেবা দেয়ার নামে বিভিন্ন জায়গায় চাল-ডালের দোকান শুরু করল (অপারেশন ডাল-ভাত) তখন বিডিআর সৈনিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এ কাজগুলো করেছে।

এ কাজগুলো করতে গিয়ে দেখলেন এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদেরই কিছু কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিছু কিছু কাজ করছেন, যেগুলো বিতর্কিত।

যারা দিনরাত কষ্ট সয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, অথচ বিনিময়ে তাদের যথাপুযুক্ত মূল্যায়ন করা হচ্ছে না । আর যার ফলে তাদের মাঝে ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তাছাড়া বিডিআর সৈনিকদের বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুবিধা, জাতিসংঘ মিশনে নিয়োগ, নিজস্ব বাহিনীর কর্মকর্তা নিয়োগসহ কিছু দাবি- দাওয়া ছিল যা ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন এবং পরে আওয়ামী সরকার মোটেও আমলে নেয়নি।

ঠিকানা : আপনার কি মনে হয়,

যদি মিলিটারি অ্যাকশনে যেত তাহলে এত ম্যাসাকার

হতো না?

সালাউদ্দিন : আমি নিজে একজন অফিসার হিসেবে বলছি,

যদি মিলিটারি অ্যাকশনে যাওয়া যেত, তাহলে এমন মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ হতো না।আমি তখন সিলেটের শমসের নগরে ছিলাম কমান্ডিং অফিসার হিসেবে। সেখানে এয়ারফোর্সের নতুন ইউনিট গড়ার কাজ চলছিল। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে ঢাকার তেজগাঁও ফেলকন হলে একটি মিটিং ছিল। মিটিংটি ছিল কমান্ড অ্যান্ড

ফ্লাইট সেইফটি মিটিং।

২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিঠি পেয়ে আমি চলে এলাম ঢাকায়

মিটিংয়ে যোগ দেয়ার জন্য।

আমি ২২ তারিখে আসার পর আমার স্ত্রীকে তার এক বান্ধবী ফোন করল। ফোন করে বলল, দোস্ত লবি এসেছ?

লবি মানে শহীদ কর্নেল এলাহীর স্ত্রী। তোর সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। তুই চলে আয়। আমার স্ত্রী বলল, আমার স্বামীও এসেছে।

আমি তাকে নিয়ে চলে আসব।

আমরা গুলশানে আমার স্ত্রীর বান্ধবীর বাসায় যাই। সেখানে আমরা সবাই আড্ডা মারলাম। আড্ডায় কর্নেল এলাহীর স্ত্রী বলছিল,২৮ তারিখ শেষ দিনে আমরা সবাই বইমেলায় যাব।

২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা সবাই ফেলকন হলে বসে আছি।

অনুষ্ঠান শুরু হলো সকাল সাড়ে আটটায়। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার

কিছুক্ষণ পরে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এলেন। তিনি স্টেজে গিয়ে এয়ার চিফের কানে কানে কিছু বললেন। এয়ার চিফের অবস্থা দেখে আমি বুঝতে পারলাম কোনো সমস্যা হয়েছে।

আমি ছিলাম কুর্মিটোলা বেইজের

আন্ডারে। বেইজ কমান্ডার ছিলেন এয়ার কমডোর মশিউজ্জামান সেরনিয়াবাত। তিনি আমাকে বললেন, সালাউদ্দিন তুমি আমার সঙ্গে আসো।আমরা গাড়িতে যাচ্ছি।

এর মধ্যে আমাদের হেলিকপ্টার

পিলখানার উপর উড়ে চক্কর দিতে লাগল বিডিআর সৈনিকদের আত্মসমর্পণের জন্য। বিডিআর

সৈনিকরা হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি চালালো। হেলিকপ্টার ব্যাক করল। হেলিকপ্টার নরমাল চক্কর দিচ্ছিল, কোনো বোমা বা অস্ত্র নিয়ে যায়নি। আমরা কুর্মিটোলা যাওয়ার পথে সেরনিয়াবাত স্যার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে দুজন আলোচনা করছিলাম এবং ওই ঘাঁটির সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে আমি আমার আগের অভিজ্ঞতার আলোকে তার

সঙ্গে আলোচনা করছিলাম।

আমরা সোজা চলে গেলাম

রানওয়েতে। গিয়ে দেখি এরই মধ্যে আমাদের এফ-৭ ফাইটার বিমানে রকেটগুলো লাগানো হলো,

আরেকটি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টারেও রকেট লাগানো হলো। আমরা প্রস্তুত। আমি যখন আমার কমান্ডারকে বললাম, স্যার! ১৯৯৫ সালে যখন আনসার-

বিডিআরের ঘটনা ঘটলো, আমি তখন বেইজের সিকিউরিটি অফিসার। জেনারেল নাসিম ওয়াজ আর্মি চিফ।আলতাফ চৌধুরী এয়ার চিফ। তখন আমাদেরপাইলটরা দুটি এয়ার এ- ফাইভ জঙ্গিবিমান নিয়ে সফিপুরআনসার একাডেমির উপর কিছুক্ষণ উড়েছিল এবং নবম

পদাতিক ডিভিশন গ্রাউন্ড সাপোর্ট দিয়েছিল। যার

ফলে অল্প সময় পরেই খবর এলো আনসার-ভিডিপি বাহিনীর বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে।

**বাকি অংশ পড়ুন পরবর্তী পর্বে*

বিষয়: বিবিধ

১৩১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File