বিয়ের গল্প ঃ প্রথম
লিখেছেন লিখেছেন নীল অপরাজিতা ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:৪৫:৫৮ রাত
অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির গল্প
বিয়ে!!
যে বিষয়টি ঘিরে থাকে স্বপ্ন, আবেগ, অনুভূতি, কৌতুহল আর অনিশ্চয়তায়! সাথে যদি এক হয় নিজের একান্ত চাওয়া আর পছন্দের বিষয়গুলো তবে তাই হতে পারে পরম সুখস্মৃতি...
সময়টা ২০১১। সবেমাত্র অনার্স্ ২য় বর্ষে আমি। আগে থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও, এবার যেনো বাবা অনেকটা উঠেপড়েই লাগলেন আমাকে বিয়ে দেবার জন্য। মানসিকভাবে হঠাৎ বিপর্যস্ত হয়ে পড়া আমি প্রথমে আর মেনে নিতে না চাইলেও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত বিষয়টিতে হ্যাঁ বললাম। তবে, অবশ্যই পাত্র আমার আদর্শের সাথে মিলতে হবে। আর সাধারণ উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের ছেলেরাই বাস্তববাদী হয় বেশী, এদিকেও ছিলো দুর্বলতা।
কিন্তু তেমনকি আর সহজে হয়? একদিক হলে অন্যদিক নেই। কি করবো! খুব হতাশ হতাম। তবে সেই সাথে আল্লাহর কাছে খুব চাইতাম যেন উত্তম সঙ্গীর ব্যবস্থা তিনি করেই দেন। এ ব্যাপারে লজ্জা পেলে, বঞ্চিতও হতে পারি, তাই খুব বেশিই দোয়া করতাম। একজন বন্ধুই চেয়েছিলাম, প্রচলিত অর্থে হাজবেন্ড নয়!
এদিকে আমার অজান্তেই আমার পরিচিত এক বোনের কাছ থেকে প্রপোজাল এলো তার আত্মিয়ের জন্য!!! (সে আত্মীয় যে, তারই ভাই তাতো বুঝতেই পেরেছিলাম!) কিন্তু বাবা বেঁকে বসলেন। কারণ, ওদের বাড়ী ঢাকা আর আমরা বড় হয়েছি চট্টগ্রামে। তাই অত দূরে বাবা আত্মীয়তা করবেন না তা ছেলে যাই-ই হোকনা কেন?! উল্লেখ্য, তার ভা্ইটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া, বর্তমানে ল্যান্ড বিজনেস করছে আর সবচেয়ে বড় বিষয় সে আদর্শভাবে আমার পছন্দ হবার-ই কথা- তার বোনের ভাষায়! ফ্যামেলির সবাই হায়ার এডুকেটেড।তবু বাবার ব্যাপারে আমি খুব আপসেট হয়ে গেলাম।
অনন্যোপায় হয়ে ঐ বোন (বর্তমানে আমার প্রাণপ্রিয় ননদ) তার পরিচিত এক বোনকে মাধ্যম করলেন যাকে বলে ‘ঘটক’! মজার ব্যাপার হলো, তারা দুজনই মেডিকেল স্টুডেন্ট ছিলেন আর ঐ ঘটক আপুকে আমার বাবা খুব ভালো জানতেন। কিন্তু তাকেও বাবা রিফিউজ করলেন। তবু, ঐ ঘঠক আপু আমাকে বললেন ‘ধৈর্য করে থাকো! ইনশাআল্লাহ, আাল্লাহ যা চান তাই হবে!।
সত্যি তাই হলো!! এমন কাকতালীয়ভাবে পুরো ঘটনা পাল্টে যাবে ভাবিনি। চিকিৎসার জন্য বাবা ঢাকা গেলেন আর এ সুযোগে ঘটক বোনটি আমার সেই পাত্রকে তার পরিবারের মাথ্যমে বাবার সাথে পরিচিত হয়ে নিতে বললেন। ব্যাস!!
আজকের আমার হাজবেন্ড, সেই ছেলেটি যে সেদিন কি করেছিলো কে জানে বাবা তো সন্ধ্যায়ই মাকে ফোন করে বললেন, ছেলে তো অসাধারন! ‘তোমার মেয়ের একেবারে মনের মত হবে!’ বুঝতে বাকি রইলোনা কি ঘটতে চলেছে! সেদিন রাতেই ফাইনাল হলো, ছেলের ফ্যামেলি আমাকে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর দেখতে আসবে!!!
আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি সাহায্য পেয়ে আমিতো শুকরিয়ার ভাষা হারিয়ে ফেললাম! তবে দেখতে আসবে শুনে সাথে যোগ হলো খানিক আতঙ্কও!!!
অতঃপর ওরা এলো। পাত্রের সাথে তার মা-বাবা, বড় দু’বোন, আর এলো ছোট্ট বোনটা যার মাধ্যমে্ এত বড় বিষয়টি এতদূর পর্যন্ত গড়ালো! সত্যি! এত হাসিখুশি আর ফ্রি মাইন্ডেড ফ্যামেলি আমি খুব কমেই দেখেছি। সাজতে না চাইলেও ওর বোনেরাই আমাকে জোর করে সাজালেন, পাছে তাদের ভাইয়ের যদি পছন্দ না হয়???
অবশেষে পরীক্ষার সময় এলো। সামনে গেলাম.. অনেক কথা হলো। তবে আদর্শকে নিয়েই বুঝতে চাইলাম বেশী! শেষ পর্যন্ত রূমের বাইরে থেকে চাঁপা হাসির শব্দ পেলাম.. আর ছোট্ট বোনটিতো হুট করে ভেতরে এসে দুষ্টু হাসি চেপে বললো কিরে? দু’ঘন্টা তো হলো! সবকথা এখনই শেষ করে ফেললে পরে কি করবি? খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম আমরা। তারপর বিকেলে আমায় আংটি পড়িয়ে, অনেক কাঁদলেন আমার হবু শাশুড়ি মা। অনেক দোয়া করলেন আমাকে। এ মানুষটি সত্যিই আমাকে খুব পছন্দ করেছিলেন। যা তার ছেলের সামনেই আমাকে বললেন। ঠিক হলো বিয়ের তারিখ। পাত্রের একান্ত ইচ্ছে ১১/১১/১১ তে বিয়ে হবে। সাবই খুব মজা পেলেও দুটো পরিবারই সহজভাবে মেনে নিলো। আমার বিয়ে আমার কাছে অনেক প্রিয় স্মৃতি কারণ এমন একটি বিয়ে, যেখানে দুটো পরিবারের মধ্যে কোন প্রচলিত লেনদেন হয়নি, কিন্দুমাত্র মনোমালিন্যও হয়নি!
আরো মজার ব্যাপার হলো, আমার বাবা কিংবা ঐ পাত্র কেউই চায়নি, নিজের এলাকার বাইরের কারো সাথে বিয়ে হোক! কিন্তু তাই হলো। আর শুধুমাত্র আদর্শগত কারণেই, আমরা বিয়ের আগ পয়ন্ত দু’জন কেই কারো সাথে কথা বলতাম না যদিও দুজনই একে অন্যের পরিবারের সাথে অনেক কথা হতো। এটা নিয়ে সবাই খুবই মজা পেতো।
দেখতে দেখতে সেই পরম আকাঙ্খিত দিনটি ঘনিয়ে এলো। শুধু বিয়ে পড়ানো হবে অর্থাৎ ইজাব-কবুল হবে। আজই উঠিয়ে নেবেনা।
তাই খুব ছোট্ট আকারেই আমাদের বাসায় বিয়ের আসর বসলো। বিয়ের আগে থেকেই বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত আমি টানা ডায়েরী লিখছি! লক্ষ্য ছিলো শুধুমাত্র পারস্পরিক বোঝাপড়া আর আশা আকাঙ্খার অভিব্যাক্তি শেয়ার করা। খুব সুন্দর করে সেটাকে এ্যারেঞ্জ করেছিলাম। আর বিয়ের আগের রাতে যখন ঘরময় আনন্দের কোলাহল, রাত জেগে কাজ করা আর হইচই এ সবাই মত্ত, কথন আমি ঘরের এক কোণে বসে সারারাত জেগে সেই ডায়েরিটা আর খুবপ্রিয় একটা উপন্যাস একাসাথে করে একটা গিফ্ট রেডি করলাম। খুব সুন্দর রেপিং না হলেও নিজের তৈরী জিনিসটা খুব ভালো লাগছিলো। এখন শুধু াপেক্ষা, কখন ওকে দিবো.. সত্যি, আমরা অনেক ভালো বন্ধু হতে চা্িচ্ছিমাল
পরদিন সকাল থেকে মেহেদী পড়া, সাজার ব্যস্ততা, প্রায় ১২টার কাছাকাছি যখন সময়, চাঁপা গুঞ্জন শুনলাম.. একটু পড়েই বিয়ে পড়াতে আসবে!! বুক কোঁপে উঠলো যেনো। আমার কাজিন আর বান্ধবীদের মাঝে বসে থেকেও হঠাৎ মনটা যেনো কোথায় উঠে গেল!!.. আরেকটু পরই যে বিয়ে হয়ে যাবে!! তার কিছুক্ষণ পরই সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো। আমার এত্ত কান্না পাচ্ছিল! আমার মা দূর থেকে আমায় দেখে কাঁদছিলেন। তাকে দেখে আরো কান্নার বেগ বেড়ে গেলো.. এ কান্নাতো একসাথে সুখ আর দুঃখেরই! পরে শুনেছিলাম আমার বরও সেদিন বিয়ের আসরে মোনাজাতে খুব কেঁদেছিলেন। সত্যি! বিয়েটা যেন শুধুই ইজাব-কবুলে নয় বরং দুটো মনের একতাবদ্ধ বাঁধন যেনো দৃঢ় হয়., সার্থক ও সুন্দর হয়, এর জন্যই খুব বেশী চাওয়ার ছিলো।
বিয়ে হয়ে গেলোতো সেই দুপুরে কিন্তু আমার বর, বেচারা আমার সাথে তার আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হলো সন্ধ্যায়!! কারণ, চাচা-মামা, দাদী-নানী শাশুড়িরে দল আর সবশেষে শালীদের দল এ তিনস্তরের ধাক্কা সামলিয়েই না সে আমার অবধি পৌঁছুতে পারলো।
ও এতো প্রাণখোলা আর হাসিখুশি, বিয়ের আসরেই প্রথম তাকে এমন দেখলাম। একদিকে আমার বোনেরা আর ওর সাথে ওর বোনেরা। আমি খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম, তাই দু’পক্ষেই ওর সাথে মিলে আমাকে নিয়ে মজা করলো!
রাতেই তারা রওনা হয়ে গেলো। আমি গিফ্ট তুলে দিতেই ও তো ভীষণ অবাক হলো আজো সেই কাজের জন্য ওর প্রশংসা পাই। এত্তো খুশি হবে ভাবতেই পারিনি!
আমার বিয়ে হয়ে গেছে ভাবতেই কেমন অন্যরকম ভালো লাগা, অদ্ভূৎ এক অনুভূতি এসে ঘিরে ধরতো। রাতে ও চলে যাবার পর তাই এত্ত খারাপ লাগছিলো! হঠাৎ করেই একজন মানুষ কেমন করে এতো আপন হয়ে উঠলো? বুঝতেই পারলাম না একেবারেই বন্ধুর মত!
৩১ ডিসেম্বর। আনুষ্ঠানিকভাবেই আমাকে তুলে দেয়া হবে। আজ! অন্যতম স্মরনীয় দিন। অতিপ্রিয় আপনজন মা-বাবা আদরের ভাই-বোনদের ছেড়ে যেতে হবে আজ! কি যে কষ্টের অনুভূতি।
এখানেও আমার বরই আমার বন্ধু-সমব্যাথি হলো। বিয়ের আসরে ও এতো মজার কান্ড করেছিলো যে উপস্থিত আত্মীয় আর শুভাকাঙ্খীরা খুব মজা পাচ্ছিলো। কেউ কেউ তো আমাকে বলেই ফেলেছিলো ‘তোমার বর খুব কো-অপারেটিভ! তুমি সত্যিই লাকি!’
খুব সুন্দর বিষয় হলো আমাদের বিয়ের আসরে পুরুষ মহিলা সবাই ছিলো আলাদা অথ্যাৎ আমার বরও এ ব্যাপারে একমত ছিলো! এতো সুশৃঙ্খল আর চমৎকার হয়েছিলো যে, সেই বিয়ের আসরের প্রশংসা আজো শুনি। “তোমাকে তো এয়ার নিয়ে যাবে” তাইনা? এমন প্রশ্নে হঠাৎই আমি চরম সারপ্রাইস হয়ে গেলাম। কই? জানিনা তো? পরে শুনেছিলাম ওটা ছিলো আমার জন্য সারপ্রাইজ গিফ্ট!! পুরো বরযাত্রীরা বাই রোডে গেল ও আমরা যাবো অন এয়ারে! মনে মনে আমার বরকে নিয়ে খুব গর্ব হলো আর অন্যরকম ভালোলাগায় মন ভরে গেল।
বিদায়ক্ষণটি সত্যিই দারুণ কঠিন মনে হলো। ওর হাতে তুলে দিতে গিয়ে আমার বাবা-মা খুব কাঁদলেন। বোন দু’টিও কান্নায় কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলোনা। আমি অনেক কাঁদলাম। আমাদের ফ্লাইট ঠিক পাঁচটায়। চারটার মধ্যে এয়ার পোর্টে রিপোর্র্ট করতে হবে। তাই তাড়া এলো।
ভাইয়া আমাকে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এলো। সাদা ফুল ছিলো আমাদের বিয়ের অন্যতম অনুসর্গ। সেই সাদাফুল, আর শুভ্র ওড়নায় সাজানো গাড়িতে তুলে দেয়া হলো আমাদের!
পেছনে আরেকবার চাইলাম। উপস্থিত সবাই আমাদের হাত নেড়ে বিদায় জানালো। কেমন জানি তোলপাড় করে উঠলো ভেতরটা।
পথে ও আমাকে বন্ধুমত সান্ত্বনা দিতে লাগলো, যেন স্বাভাবিক হতে পারি। কারণ এ সময় মানিসক সাপোর্ট টা খুব জরুরী।
এয়ারে! লাইফে যা কোন দিন কল্পনাও করিনি। শুদুমাত্র আমার জন্য। যার এত্তবড় এই গিফ্ট, নতুন জীবনের শুরুতেই সেই হাজবেন্ডকে পুরোপুরি বন্ধুই ভাবতে পেরেছিলাম।
দিনটা ৩১ ডিসেম্বর! তাই সাজানো হয়েছে পুরো বিমনাবন্দর! ভাগ্য এতটোই চমৎকার যে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদরে ফ্লাইট হবে বড় বিমানে অর্থাৎ কোন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইনস-এ! কি যে উত্তেজনা তখন!
ওদিকে বিমন বন্দরে ঢোকার পর থেকেই সবাই ঔৎসুক্যের কেন্দ্রে আমরা। যাহোক ইমিগ্রেশন শেষ করে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসতে হলো।খানিক পরেই ঘোষণা এলো।
সব নতুন তবু স্বাভাবিকই থাকতে চাইলাম। তারপরই যে অপেক্ষা করছে অচিন্তনীয় কিছু...।
বিমানের ভেতর ঢোকার পরই সবার চোখ আমাদের দিকে। নেকাব আবৃত হলেওে মাথার উপরে বিয়ের জমকালো উড়নাই বলে দিচ্ছিলো নতুন কণে।
বিমান টেক অফ করলো কিছুক্ষণ পরই এলো দুজন এয়ার হোস্টেজ আর ক্যাবিন ক্রু। তারাতো খুবই আশ্চর্য হলো আমাদের দেখে! উ্চছ্বাস প্রকাশ করতে করতে এলো আরো কয়েকজন ক্রু। আমাদের সাথে পরিচিত হলেন। একজন তো বলেই ফেললেন- ‘অনেক বছর পর এমন দেখা গেল!’ খুব ভালো লাগছে!’ যিনি প্রধান ক্রু, তিনি খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন ‘আগে থেকে যদি জানতাম কোন নিউ কপল আজ উঠবে, আামরা আরো ভাল কিছু করতে পারতাম। “যদিও আমরা দুজনই ্তাদের কৃতজ্ঞতা জানালাম সব ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই’ বলে তাদের আশ্বস্থ করলাম।
আমরা দুজন বসে ছিলাম ঠিক বিমানের ডানার পাশে। আমাদের চরম আপন করে দিয়ে সোজা যা করলো প্রথমেই আমাদের রিকোয়েস্ট করে নিয়ে গলে বিমানের এবারেই সামনে ফাস্টক্লাস সিটে। দুজনকে উঠিয়ে তা্রা আমাদের বসার ব্যবস্থা করলো। তার আরো অবাক হলাম, যখন আমাদের ডেকে নিয়ে গেল ক্রদের জন্য নির্দিষ্ট রুমে আর আপ্যায়ন করালো শুধু ক্রুদরে জন্য সার্ভ করা খুব মজাদার একটা ডেজার্ট। আমার এত্ত ভালো লাগছিলো যে ওরা ঠিক আত্মীয়ের মত সাধলো আর আফসোস করছিলো যে আরো ভালো কিছু দিয়ে আমাদের অনার করতে পারছিলেন না । আমরা তো বারবারই কৃত্জ্ঞতা জানাচ্ছিলাম।
খুব মজা পেলাম যখন একজন বয়স্ক মত ক্রু বলে বসলো— ‘আপনাদের দু’জনকে খুব দারুন মানিয়েছে! আগে থেকে এ্যাফেয়ার ছিলো নাকি? আমার ফেইস তো দেখাই যাচ্ছিলোনা তবু যখন এ্ই কমেন্ট! আমরা তো সলজ্জ্ব ভাবেই বলে ফেললাম না! পুরোপুরিই ফ্যামেলির চয়েজ। শুনে ওরা খুবই প্লিজড হলো। আর অনেক উইশ করল।
শেষ পর্যন্ত আমাদের চূড়ান্ভাবে উচ্ছ্বসিত করলো- ওরা আমাদের ককপিটএ নিয়ে গেলো। লাইফএ প্রথম এয়ারে উঠেই এতোটা পাওয়া.. আমিতো কি বলে যে খোদাকে শুকরিয়া জানাবো বুঝেই পেলাম না। আর স্বামীর প্রতি খুব কৃতজ্ঞতা বোধ হচ্ছিলো। যদিও সে মূল্যায়ন করলো যে,- ‘আমি সাথে আছি বলেই নাকি তারা এত্তো সম্মান দেখালো’... কি আর বলবো!!!
আমরা ককপিট এ ছিলাম প্রায় ৪০-৪৫ সেকেন্ড! শেষ বিকালের মেঘগুলো অনেকটা রক্মিাভ তুলার বলের মত যেন ভেসে আছে!... এর মধ্যেই তারা বিমান চালিয়ে নিচ্ছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে! সত্য খোদার অসীম কুদরত।
আমরা ল্যান্ড করলাম প্রায় ৪৫ মিনিটের মাথায়। বিমানে বিদায়ী অভ্যর্থনা আর আমাদের আরেকবার অভিবাদন জানারেন সবাই! ইন্ড ডে অফ দি ইয়ার তাই বিমান বন্দর সুদৃশ্যবাবে সজ্জিত করা হয়েছিল, যেনো, আমাদের জন্য। আজ সব উৎসব!!
ঢাকায় নেমে আমরা রওনা হলাম বাড়ীর উদ্দেশ্যে.. যেখানে আমাদের বরণ করে নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই... এখানেও সারপ্রাইজ! আমার স্বামী এত্তভালো ড্রাইভিং জানে, যে নতুন করে সাদা ফুলে সাজানো বিয়ের গাড়িটা ওই ড্রাইভ করলো। কত যে আনন্দের ছিল তা আমার জন্য ... প্রকাশের ভাষা নেই! কাররেণ শুধু আমার জন্যই যে সে এতো সারপ্রাইজ গিফ্ট করলো।
সর্বশেষ গত বছরই জীবনের পরম আকাঙ্খিত সৌভাগ্য অর্জন করলাম ওর হাত ধরেই। ও, আমি আর শাশুড়ি মা পবিত্র হজ্জ্ব সম্পন্ন করলাম একসাথে।
আজ প্রায় দু’বছরের বেশী হতে চললো। সত্যি আমরা স্বামী-স্ত্রীই নই শুধু, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা দু’জন খুব ভালো বন্ধুও!! নতুন পরিবারে গিয়ে আমি পেয়োছি্লাম বন্ধুর মত শুশুর-শাশুড়ি যাদের সাথে এতটাই সহজ আমি আর পেয়েছি পরম শুভাকাঙ্খী কয়েকটা বোন। ঠিক আমার বড় বোন।
অর্থাৎ পরিবার ছেড়ে বলেও যে, সে অভাবটা বুঝতেই পারিনি। লাইফ-এ এ্যাফেয়ার করিনি, কোনদিন করার কথা চিন্তাও করিনি আদর্শের কারণেই এটা চরম অপছন্দের ছিলো সব সময়ই।
আলহামদুলিল্লাহ, হয়তো একারণেই এতটা সৌভাগ্য খোদার কাছে থেকে পেয়েছি।
প্রত্যাশাকে যেন ছাড়িয়ে গেল প্রাপ্তিগুলো!!!
বিষয়: বিবিধ
১০০৩৬ বার পঠিত, ১০৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিয়মিত লিখবেন, আপনার লেখার হাত ভালো
তোমরা অনেক সুখী হও এই কামনাই করি
আমার পুরুষ্কার কইইইইইই
যথাযথ পুরুষ্কার হাতে হাতে বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে তোমার জন্য। ভবিষ্যত জীবনের জন্য রইল অনেক শুভকামনা।
যথাযথ পুরুষ্কার হাতে হাতে বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে তোমার জন্য <:-P । ভবিষ্যত জীবনের জন্য রইল অনেক শুভকামনা। ;
ঢাকা থেকে চিটাগাং গিয়েছিলেম বিয়েতে এটেন্ড করার জন্য। ফ্রেন্ডদের একটা প্রোগ্রাম আমাকে মিস করতে হয়েছিল এখানে এটেন্ড করার কারনে। কারন আমার এ ভাইয়ের বিয়েতে না গেলে আমার খবর ছিল।
সত্যিই খুব অমায়িক একজন বর পেয়েছেন আপনি। ইউনিভার্সিটিতে আমাদের খুব বেশী প্রিয় ছিলেন তিনি। শুধু আমাদের কাছেই প্রিয় ছিলেন তা নয়, পুরো ক্যাম্পাসের সব শ্রেনীর লোক উনাকে পছন্দ করতেন। উনিও সবাইকে খুব মূল্যায়ন করতেন। পরবর্তীতে বউ ভাতে পুরো ক্যাম্পাসের একটা বিরাট অংশের শুধু কর্মচারীদেরকে নেয়ার জন্য একটা বাসভাড়া করেছিলেন তিনি।
মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি কিভাবে আপন করে নেয়া যায় সে কৌশলের বেশ কিছুটা উনার কাছেই শিখেছিলাম। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের সবাইকে আপন করে নেয়ার সাংগঠনিক দায়িত্বটাও বোধ হয় সেজন্যই আমার উপরেই এসে পড়েছিল। চেষ্টা করেছিলাম দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের, কিন্তু উনাকে ছাড়াতে পারিনি নিশ্চয়ই।
ভাবি এতো কিছু লিখেছেন কিন্তু যার নাম দেয়ার জন্য আমরা সিক্রেট গ্রুপে নামের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলাম আমাদের সেই নতুন মেহমানের কথা উল্লেখ করেন নি কিন্তু।!!
আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জান্নাতি দাম্পত্বজীবনকে কবুল করুন। আমীন।
বিজয়ী হওয়ার জন্য শুভেছ্ছা ও অভিনন্দন। আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম মডুরা যোগ্য ব্লগারকেই প্রথম বিজয়ী ঘোষনা করেছে। তাই মডুদের ধন্যবাদ।
দোয়া রইলো।
দোয়া রইলো।
বুঝলেন।
যাজ্জাকাল্লাহ খায়ের ।
সংগৃহীত
যাইহোক অসাধারন।
মেয়েরা নিজের আপন জন ছেড়ে গিয়ে শ্বশুর বাড়ি তে যেন আপন জনই খুজে পায় এটাই কাম্য...
অর্থাৎ পরিবার ছেড়ে বলেও যে, সে অভাবটা বুঝতেই পারিনি। লাইফ-এ এ্যাফেয়ার করিনি, কোনদিন করার কথা চিন্তাও করিনি আদর্শের কারণেই এটা চরম অপছন্দের ছিলো সব সময়ই।
সাবলিলভাবে দারুন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন। দোয়া রইল,আমার জন্যেও দোয়া করেন
বোন অপরাজিতাকে (জানি এটা নিক নাম) অভিনন্দন প্রথমেই প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য। লেখার সমালচনা করা আমার কাজ নয়। নতুন জীবনের সুন্দর একটা বর্ণনা, যা হৃদয়গ্রাহী না হলেও চমৎকার।
সমালোচনাঃ বর্ণনাশৈলী আরো রিস হতে পারতো এবং হতে পারতো হ্রদয়গ্রাহী।
সংশোধনের মানসিকতায় পরামর্শ এক আদর্শিক বোনকেঃ আপনার লেখা থেকে কোট করেছি একটি বাক্য। আলহামদুলিল্লাহর ব্যবহার পারফেক্ট। কিন্তু "খোদা"! কেন বোন? আল্লাহ বললে কি ভাল হতো না? মহান আল্লাহর যতগুলো নাম আছে তার মধ্যে ঐ "খোদা" কি আছে? নাই, তাই না? তাহলে কেন বলবো আমরা ওটা? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তার নামগুলো কত না সুন্দরভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন। সবগুলো কতই না পছন্দনীয় এবং আবেগীয়! কিন্তু "খোদা"? আমি জানি কোথা থেকে এসেছে এটা। কিন্তু এটাও জানি যে, এটা আল্লাহ বা রাসূল (সাঃ) কারো কাছ থেকে আসে নি।
মা'আচ্ছালাম।
অভিনন্দন আপা..
বেশ মজার তো। ঢাকায় একজন কমে গিয়েছিলো, তা "নীল অপরাজিতা" এসে পূরণ করে দিলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন