উপেক্ষিত আল মাহমুদঃ তবে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে এবং নড়তেই থাকে
লিখেছেন লিখেছেন পদ্ম পাতা ০৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:০০:১৩ দুপুর
আল মাহমুদ এদেশের বড় কবিদের একজন অবশ্যই । তবে আদর্শিক ভাবে ইসলাম ঘেষা হবার কারণে তিনি আজ চরমভাবে উপেক্ষিত । একটা সময় ছিল যখন ইসলামের বারোটা বাজাবার জন্য গণকণ্ঠ (অধুনালুপ্ত) নামে একটি পত্রিকা বের করা হয়েছিল । এর সম্পাদক ছিলেন আল মাহমুদ । তখন তার কবিতা এবং কবিত্ত্বের বন্দনা করার লোকের অভাব ছিল না । এখনও আছে, তবে তার প্রকাশ আমরা দেখতে পাইনা । সাংবাদিক সমাজের এক বিশাল অংশ বাম ঘরানা হবার কারণে মিডিয়াও তাকে বিসর্জন দিয়েছে । কিছুদিন আগে (২৩ অক্টবর, ২০১৫) প্রথম আলো জীবনানন্দ গবেষক ভূমেন্দ্র গুহ এর একটি স্বাক্ষাৎকার ছাপে । সেখানে বিষয়টি খুব প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে । সাক্ষাৎকারের একটি অংশ লক্ষ করুণ
ফয়জুল: বাংলাদেশের কবিতা পড়া হয়? বিশেষ কারও কবিতার কথা মনে পড়ে?—শামসুর রাহমান আমাদের দেশের বড় কবি ছিলেন।
ভূমেন্দ্র: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ নামে একজন। ওঁর কবিতা ভালো লেগেছিল। পেল্লায় চাকরি করতেন সরকারের। আরেকজন আছেন আপনাদের—আল মাহমুদ, বিখ্যাত কবি, যথার্থ বড় কবি। তিনি কী রাজনীতি করেন তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। দু-দুবার আমি বাংলাদেশে গেলাম। আমাকে আল মাহমুদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে আমাকে যাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা কখনোই আমাকে বলেননি ‘ওঁর বাড়ি যাবেন না’। বলেছেন, ‘কাল নিয়ে যাব, পরশু নিয়ে যাব’—এভাবে কালক্ষেপণের কারণে আর যাওয়াই হলো না। আরেকবার গেলে দেখা তাঁর সঙ্গে করেই আসব। আমি হুেমায়ূন আহমেদের বাড়ি গিয়েছি। অবসরের মালিক আওরঙ্গজেব— আসলে নাম আলমগীর—আমি আওরঙ্গজেব বলি—একই বিল্ডিংয়ে থাকতেন দুজনে। পেল্লায় লেখক ছিলেন, বছর ঘুরতেই লাখ কপি বই বিক্রি হয়ে যেত তাঁর!
লক্ষ করলে দেখবেন, ফয়জুল সাহেব বড় কবি হিসেবে শামসুর রহমানের নাম মনে করিয়ে দিলেও তিনি সেখানে কোন পাত্তা পেলেন না, এমনকি ভূমেন্দ্র সাহেব তার সম্পর্কে একটি কথাও না বলে আল মাহমুদের কথাই বললেন । কিন্তু যা ভাল, সত্য ও সুন্দর তা পরিস্ফুটিত হবেই । আজ আর কালের ব্যবধান । আজ সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা তাকে উপেক্ষা করেন । শুধু তাকে নয় যেখানেই ইসলামের গন্ধ পাওয়া যায় সেখানেই তারা সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খুঁজে পান । কিন্তু তারা একথা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করতে পারে না যে ইসলামকে ঘৃণার মাদজ্যমে তারা নিজে কতবড় সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছেন !
বিষয়: বিবিধ
১৪৩০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একদা আমি যাদের কাছে নত হওয়া শিখেছিলাম,
রপ্ত করেছিলাম অভিবাদনের কায়দা-কানুন,
তারাই আজ আমার ঝুঁটি দেখে চিন্তিত।
তাদের দাঁত ঘষটানির শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি,
তাদের বন্দুকের নল এখন আমার দিকেই তাক করা।
আমার মাথা - আল মাহমুদ
সুত্র-Farid A Reza ফেসবুক থেকে
জাযাকাল্লাহ খায়ের
পুরাটা দিলাম।
আমার মাথা - আল মাহমুদ
আজকাল এমন হয় যে, আমার মাথা আমি আর
নামাতেই পারি না।
পৃথিবীর সমস্ত প্রাচীন দেয়ালের মতো শক্ত
আর উঁচু মনে হয় আমার মাথাকে।
ভৈরবের ব্রিজ ছাড়িয়ে, মেঘনার ঢেউয়ে পাল দুলিয়ে
দক্ষিণগামী ধানের নৌকার মাঝিরা যেমন
বীরগাঁওয়ের বিশাল দেবদারু গাছটা খোঁজে,
আমার মাথাও তেমনি দিকনির্ণায়ক বৃক্ষের মত উঁচু হয়ে উঠেছে।
দেখো অসংখ্য দুঃখী মানুষের হাত
আমার নগ্ন মস্তকের দিকে তর্জনী তুলছে।
একদা আমি যাদের কাছে নত হওয়া শিখেছিলাম,
রপ্ত করেছিলাম অভিবাদনের কায়দা-কানুন,
তারাই আজ আমার ঝুঁটি দেখে চিন্তিত।
তাদের দাঁত ঘষটানির শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি,
তাদের বন্দুকের নল এখন আমার দিকেই তাক করা।
এই যে আমার চুল বাতাসের ঝাপটে এখন
নিশানের মতো উড়ছে,
জাপানের উষ্ণ স্রোতের নাভি থেকে উঠে এসেছে এ হাওয়া,
এ বাতাস মৌলমিনের কাঠের বাগান পেরিয়ে
উ-পোকনির কবিতার মতো আমার মস্তকে বিলি কাটছে।
আমার মাথার জন্যে অশ্রুসজল আবেদনে কাঁপছে
ভ্রমরকৃষ্ণ একজোড়া চোখের পাতাঃ
তার সন্তানদের কেউ যেন ‘বেঈমানের বাচ্চা’ না বলে।
দূর মফস্বল শহরের এক দুর্বল বৃদ্ধা
তার সান্ধ্য প্রার্থনার জায়নামাজ বিছিয়েছেঃ
প্রভু, আমার ছেলের ঘাড় পাথরের মতো শক্ত করে দাও।’
সাবধান, আমার মাকে কেউ যেন গোলামের গর্ভধারিণী না বলে।
সুত্র- Farid A Reza·17 অক্টোবর 2015
মন্তব্য করতে লগইন করুন