দুটি সন্তানের কম নয়; বেশি হলে ভাল হয়, এবং আরও কিছু কথাঃ
লিখেছেন লিখেছেন পদ্ম পাতা ০৮ এপ্রিল, ২০১৫, ০৫:১৫:২৩ বিকাল
আমার দাদা বেচারার সন্তান সঙ্কট । অপরদিকে আমার নানা বাহাদুরের অধিক সন্তানের প্রাচুর্য । দাদা নিঃসঙ্গতায় ভোগেন । নানা বাড়ি গমগম করে। দাদা বাড়িতে বেড়াতে গেলাম । লোকজন নাই । বাড়ি জুড়েই মৃত্যপুরীর নিরবতা । রাত হবার অনেক আগেই রাত হয় এখানে । এরপরও দাদাজান বাড়ি ছেড়ে আমাদের সাথে ঢাকায় এসে থাকতে চান না । বাপ দাদার ভিটা, বুকের পাজড় দিয়ে আগলে রাখবেন । আমরা বাড়িতে গেলে দাদা তার নিঃসঙ্গতার ভেতর আলো খোঁজেন, চোখের পানিতে এবং আরও কীসব !! দাদা বাড়ি আর নানা বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে । এই ঢাকার জানজট থেকে হঠাৎ করে বাড়িতে গেল ওই নিঃসঙ্গতা আমার ক্ষেত্রে আরও করুণ হয় । দাদা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন কিনা ! এজন্য অধিকাংশ সময় নানা বাড়িতেই কাটে । তাই আমার কাটলেও দাদার নিঃসঙ্গতা কাটে না ।
আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক বাস্তবতার কথা চিন্তা করে অল্প সন্তানের বিষয়টিকে উৎসাহিত করা হয়েছে । চীনে তো একেবারে আইনই করে দেয়া হয়েছিলো যে, একটি সন্তানের বেশি নেয়া যাবে না । কিন্তু চীনের জনগন অতি শিঘ্রই আবিষ্কার করলো, একটি সন্তান থাকলে সে নিঃসঙ্গতায় ভোগে, আরও নানান সমস্যা । অবস্থা শেষে এমন দাঁড়িয়েছে যে, চীনে একাধিক সন্তানের আকাঙ্ক্ষার সামাজিক আন্দোলনের রূপান্তর ঘটে । ভয়ে এবং আরেকটা জাতীয় বিদ্রোহের আশঙ্কায় চীন সরকার দ্বিতীয় সন্তানের অনুমতি দিয়েছে এখন ।
পশ্চিমা সমাজের মেয়েরা আবার ঝিলিমিলি উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের মোহে সন্তান নিতে আগ্রহী নয় । এসব দেশের সরকারের বিপদ । কোথাও জন্মহার শুণ্য । কোথাও আবার মাইনাস হারের আশঙ্কা । এক লাখ মারা গেলে যদি পঞ্চাশ হাজার জন্মায়, বুঝতেই পারছেন এই রকম জাতির ভবিষ্যত । তাই সরকার মাতৃভাতাসহ নানান সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় । কিন্তু তাতেও কাজ হয়না । কে চায় ভাতার জন্য সন্তান নিতে ? এদের কাছে সন্তানহীনতা নির্ঝঞ্জাট যৌবনের গ্যারান্টি । ভবিষ্যতে হয়তো এমন হবে সন্তান প্রতিপালনকে চাকরির মর্যাদা দেয়া হবে । কিন্তু তাতেও কী কাজ হবে ? সন্তান একটা বড় রেস্পন্সিবিলিটির জায়গা । সন্তানের দায়ীত্ব প্রায় সারা জীবনের । তখন হয়তো মায়েরা সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে জাতীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে । শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেয়ার কারণেই নারীকে ভিন্ন মাত্রায় এবং উচ্চতায় সম্মানিত করা হবে । নারী হয়তো তখন সত্যিই শুধুমাত্র নারী হবার কারণে ভীষন মর্যাদায় সমাসীন হবে । নারীকে নারী হবার কারণে খাটো করে দেখার কথা কারো কল্পনাতেও আসবে না । দুনিয়ার জাতিগুলো উপলব্ধি করবে নারী কতবড় সম্পদ । নারীও হয়তো তার প্রকৃত মর্যাদা উপলব্ধি করবে । ইসলামের দেয়া সেই অধিকারের দিকেই নারীর প্রত্যাবর্তন হবে । নারীর পায়ের তলায় সত্যিই বেহেশত আর পুরুষের পায়ের তলায় সেই পুরোনো জুতা । মায়ের সম্মান বাবার তিনগুণ ।
আরব দেশগুলোতে কোথাও অধিক সন্তান নেয়া ও একাধিক বিবাহের কোন প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আমার জানা নাই । তথাপি এসব দেশের জনসংখ্যা অনেক কম । সৌদি আরবে নারী বেশি, পুরুষ কম । ওদের নারীদের অবিবাহিত থেকে যাবার বিরুদ্ধে এবং পুরুষদের একাধিক বিবাহের পক্ষে একটা ক্যাম্পেইন রয়েছে । এ ক্যাম্পেইন নারীদের দ্বারাই পরিচালিত । আমার এক নানির সন্তানগুলো ডাক্তার, নাতিরাও ডাক্তার ইত্যাদি । এসব বুড়ো বুড়ো ডাক্তারেরা এখনো মায়ের কানমলা খান পরম আগ্রহে । যার পায়ের তলায় জান্নাত তার কানমলা খাওয়া ধন্য হয়ে যাবার কাছাকাছি বটে !
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বড় পরিবারে যে কি আনন্দ সেটা ছোট পরিবার কখনোই পাবেনা।
আল্লাহ যেন আমাকে অন্তত ১ ডজন সন্তান দান করেন। আমি ঘরের কোনা কাঞ্চিতে বাচ্চা কাচ্চা চাই...
মন্তব্য করতে লগইন করুন