আমার আওয়ামীপন্থী মামাজানের উপদেশ ও কিছু বাস্তবতা
লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:০৮:০৮ রাত
গত পরশু দিন গিয়েছিলাম আমার এক মামার জমজ সন্তান দেখার জন্য। মাশায়াল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে মামী এবং দুই সন্তানই সুস্থ আছে। আলহামদুলিল্লাহ। মামা নামকরা এক ব্যাংকে বেশ উচ্চপদে কর্মরত। পড়ালেখা করেছেন ক্যাডেট কলেজ থেকে। তারপর গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একথায় সেকথায় দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা উঠে। ইসলামী আন্দোলনের সব নেতাদের ফাঁসি হয়ে যাওয়াতে তিনি অতি পুলকিত এবং বেজায় খুশি। এই ধরণের লোকদের ব্যাপারে আমার চিন্তা হল আপনি এদের কোন কথা বা যুক্তি দিয়ে সত্য মিথ্যার ফারাক বুঝাতে পারবেন না। আল্লাহ পাক এদের হেদায়েত দেন হয়তোবা বাস্তব কোন ঘটনা থেকে। যাক, সব আসলে আল্লাহ পাক জানেন তাঁর বান্দাহদের তিনি কিভাবে হেদায়াত নসীব করবেন।
মূল কথায় আসি। কথার এক পর্যায়ে তাঁর আমার প্রতি মূল্যবান (!) উপদেশ হল তুমি কিন্তু কোন রাজনীতিতে জড়ায়ো না। বস্তুবাদী মানুষের কাছে ইসলামী আন্দোলন নিঃসন্দেহে এক রাজনীতির নাম যাতে কোন ফায়দা না থাকা সত্বেও মানুষ পড়ে থাকে। একে তো বয়সে মুরুব্বী আর তার উপর গিয়েছি এক সামাজিক কাজে যার জন্য আর তর্ক বা আলোচনা করার কোন ইচ্ছা মনে উদয় হয় নি।
আসলে ঠিক তখন বুকের মাঝে একগাদা কথা জমাট বেঁধে উঠেছিল। বলতে চেয়েও থেমে গিয়েছি তখন। বেচারা মামুজান পড়ালেখা করেছে ক্যাডেট কলেজ আর প্রাইভেট ভার্সিটিতে, এই কথা ভেবে তাঁর জন্য আমার বরং কিঞ্চিৎ মায়াই জন্ম নিল। কারণ প্রাইভেট ভার্সিটির ডিজুস সোসাইটির ছেলেপেলেদের কাছে দেশ ও অন্য সকল কিছু কোনো ম্যাটার করেনা তেমনভাবে। অবশ্যই ব্যতিক্রম বিদ্যমান আছে। কিন্তু তাতো আর উদাহরণ হতে পারেনা। আর প্রাইভেটে ছাত্রলীগের সুসন্তানদের (!) তৎপরতা কম। সেজন্য জাতির বেটির সোনার ছেলেদের কর্মকাণ্ডের খবর টিভিতেই হয়তো তাঁর দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কিছুটা। এমনিতেই হলুদ মিডিয়ার কল্যাণে খুব একটা কীর্তিকলাপ আসেনা তারপরেও যা আসে তা হয়তো ভেবে বসেছেন অপপ্রচার। অবশ্য চরম আওয়ামীমনা মানুষদের নিজেদের কুকাম জাস্টিফাই করার লজিকের কোনো ঘাটতি হয়না।
মামার তো আর এটা দেখার কথা না শুধুমাত্র মসজিদে জামাতে নিয়মিত হবার কারণে একজন ছাত্রের উপরে সোনার ছেলেরা কি পরিমাণ ক্ষিপ্ত হয়। প্যান্টের কাপড় টাখনুর উপরে থাকলে তার বিরুদ্ধে খবরদারি শুরু হয়। কোথায় যায়,কি করে এসব দেখা হয় তীক্ষ্মভাবে। সোনার ছেলেদের কাছে তো এখন ভার্সিটি আর ছাত্ররা বাপের তালুকে পরিণত হয়েছে। যখন যেকোনো ছাত্রকে ডেকে নিয়ে মারধোর করার ফ্রি লাইসেন্স এখন সোনার ছেলেদের রয়েছে। সাথে ইসলামী বই থাকার অপরাধে হল থেকে বহিস্কার, হয়রানি আর হেনস্থার কোনো শেষ নেই। নামাজ, কুরআন পড়া আর ইসলামী অনুশাসনে চলা এখন রাজনীতির কাতারে পড়ে গেছে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই ধরণের মৌলবাদী রাজনীতি করে শিবিরের ছেলেরা। এখন যেন এটা একটা অলিখিত সত্যে পরিণত হয়েছে। যে ছেলেরা শিবির করে না তারাও যদি শিবিরের কোনো ভাইয়ের সাথে কথা বলে তাতেও চক্ষুশূল হতে হয় হাসিনার হায়েনাদের। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা আজকাল যে কি রকম হয়েছে তা বলে বোঝানোর মত না। এখানে আপনি সব করতে পারবেন, পারবেন না শুধু আল্লাহ আর তার রাসূলের বিধান মোতাবেক নিজেকে পবিত্র জীবনের অধিকারী করে গড়ে তুলতে। ভালোভাবে চলাটা এখন জামায়াত শিবিরের রাজনীতির নামান্তর।
মামার জন্য অনেক অনেক বেশি শুভকামনা থাকল। হয়তো তার অজ্ঞতাই তার এরকম বিদ্বেষ আর ভুল ধারণার মূল কারণ। আল্লাহ তাঁকে হেদায়াত দান করুন আর তার দুই পুত্র সন্তানকে ইসলামী আন্দোলনের পথে এগিয়ে আসার সৌভাগ্য দান করুক। আপনারা অন্তর থেকে দুয়া করবেন আমার মামা আর মামাতো ভাইদের জন্য।
বিষয়: রাজনীতি
১৫১৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমীন৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন