তাহাজ্জুদের সালাতঃ প্রশান্তি ও খোদাভীতির উৎসারক!
লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ১৪ মে, ২০১৪, ১০:৩৭:০৭ রাত
মহান আল্লাহ্ আমাদের অস্থিরতা দান করেন জীবনে চলার বাঁকে বাঁকে। মূলত এসকল অস্থিরতা,বা’লা-মুসিবত তাঁর পক্ষ হতে বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা! পরম করুণাময় আমাদের এইসকল বিপদ,অস্থিরতা সহ সকল পেরেশানিতে তাঁর মুখাপেক্ষী হওয়া পর্যন্তই অপেক্ষা করেন। আমরা যখনি খোদার শরণাপন্ন হই ঠিক তখনই যেন রহমতের এক পশলা বর্ষণে আমরা হয়ে উঠি ভারমুক্ত। বিপদ-আপদ ছাড়াও আল্লাহ্র সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য একটি সর্বোত্তম পন্থা তাহাজ্জুদের সালাত। গভীর নিশুথি রাতে মহিমাময় স্রষ্টার সামনে বিনীতভাবে দাঁড়ানোর যে তৃপ্তি তা আসলে এইরকম ছোটখাটো কিছু বাক্যে বলা সম্ভব না। অস্থির হয়ে যাওয়া মন হয়ে উঠে প্রশান্তিতে ভরপুর। বান্দাহর আত্মা জান্নাতি খুশবুতে হয়ে উঠে পরিপূর্ণ। যৌবনকালে এই তাহাজ্জুদের মজা,তৃপ্তি নিঃসন্দেহে আরো কয়েকগুণ বেশি। খোদাভীতিতে উজ্জ্বল অন্তরে যেন আল্লাহ্র মহিমা খুঁজে পায় আরো অধিক পরিমাণে।
ইচ্ছা করলে আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যে রাতটা আপনি কাটাচ্ছেন চরম মানসিক অস্থিরতার মাঝ দিয়ে; ওযূ করে জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে যান মহান র’বের সমীপে! নিস্তব্ধ রাতের সুনসান নীরবতায় কথা বলুন প্রতিপালকের সাথে। তা’জিমের সাথে দু’আ করুন আল্লাহ্কে সামনে আসীন মনে করেন। নিঃসন্দেহে আপনি পরিতৃপ্তি পাবেন। তাহাজ্জুদের ফযীলাত কতটুকু এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে অনেক বর্ণনা এসেছে। অসীম করুনাময় আল্লাহ্র দরবারে ধরণা দিয়ে মু’মিনের আত্মা ঈমানী সজীবতায় আরো সজীব হয়ে উঠে।
“আর তারা রাত কাটায় তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদায় অবনত ও দন্ডায়মান অবস্থায়” (সূরা ফুরক্বানঃ৬৪)
“তারা রাত্রিকালে খুব কমই শয়ন করত। আর তারা রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করত” (সূরা যারিয়াতঃ ১৭-১৮)
যৌবনকালে তাহাজ্জুদের নামাজ সাহায্য করে চরিত্র গঠনে, সাহায্য করে নিজেকে আরো মজবুত ঈমানের অধিকারী করতে। রাতের শেষ প্রহরে মা’বুদের দরবারে চোখের জল নজরানা পেশ করে মা’বুদের পাবন্দী হওয়া নিশ্চয়ই মা’বুদের পছন্দের কাজ। খুব সম্ভবত ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে শিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছিল কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে। অন্যতম মেহমান ছিলেন কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী সাহেব। উনি বলছিলেন এই যুবক বয়সে যারা রাত পার করে তাহাজ্জুদের সালাতে তাদের ইবাদাত খোদার কাছে অতি পছন্দনীয়। কারণ বৃদ্ধ বয়সে এমনিতেই হাজার শারিরীক ঝামেলায় রাত জেগে কাটাতে হয়। সাঈদী সাহেব হাসির ছলে বললেও কথাটি সত্য। আরামের,আলস্যের নিদ্রাকে হারাম করে আল্লাহ্র ভয়ে দন্ডায়মান থাকা নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র নিকট অনেক পছন্দের। তাই সুবর্ণ সুযোগ আমাদের তরুণ ভাইবোনদের! নিয়মিত তাহাজ্জুদের অভ্যাস আমাদের করতে পারে আরো মুত্তাকী, আরো সুষমামন্ডিত চরিত্রের অধিকারী। বৃদ্ধি করবে আমাদের আত্মিক বিশুদ্ধতা ও মানসিক প্রশান্তি! সর্বশেষে দুইটি হাদিসের উল্লেখ করছি।
১। “ হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ্ তা’য়ালা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব” ( সহীহ বুখারিঃ ১১৪৫,৬৩২১,৭৪৯৪)
২। “ হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ করুণা করেন ঐ ব্যক্তির উপর যে রাতে উঠে সালাত পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয়। স্ত্রী যদি উঠতে না চায় তাহলে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ্ করুণা করেন ঐ নারীর প্রতি, যে রাতে উঠে সালাত পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগিয়ে দেয়। স্বামী যদি উঠতে না চায় তাহলে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়।“ ( সুনানে আবু দাউদঃ ১৪৫০)
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন