র্যাগঃবিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক আতঙ্ক ও মানসিক নির্যাতনের উপাখ্যান!
লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ০৪ মে, ২০১৪, ১২:১১:৪১ রাত
অনেকদিন পর আবার আসলাম আমার প্রিয় এই ব্লগের দুনিয়ায়।এই কয়টা দিন প্রচন্ড মিস করেছি আমার এই প্রিয় ব্লগ জগতটাকে।প্রিয় শহর ছেড়ে,বাবা-মা,আদরের ছোটো বোন সহ অসংখ্য প্রিয় মানুষকে ছেড়ে থাকার বেদনা বুঝি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এই কয়দিনে। শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষার জন্য আসা এত দূরে। অবশ্যই নতুন জায়গা,নতুন বান্ধব,নতুন শিক্ষক মন্ডলী সব কিছু নিঃসন্দেহে মনে একটা ভালো লাগার আবেশ এনে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের যে স্বাধীনতা,মাদকতা সকল কিছুই উপভোগ করছি। তবে কিছু কথার অবতারণা না করে আসলে মানসিক শান্তি পাচ্ছিনা।
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে rag দেয়ার কথা এর আগে কিছুটা শুনেছি। অবশ্যই সবচাইতে বাজে ভাবে যে বিশ্ববিদ্যালয় দুটোর কথা জেনেছি তা হল জাহাঙ্গীরনগর ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা। সর্বপ্রথম rag শব্দটার সাথে পরিচিত হই একটা হিন্দি সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমার নাম “Table No. 21”। এই বাজে জিনিসটার কুফল নিয়ে চমৎকার কাহিনী চিত্রায়িত হয়েছে মুভিটাতে। একটা প্রতিভাবান ছেলের জীবন ধ্বংস করে দেয়ার গল্প দেখান হয়েছে।
সাধারণত নতুন বর্ষের ছাত্রদের সিনিয়র ভাইরা পরিচিত হবার নাম করে বিভিন্ন ধরণের কাজ করায়। বিষয়টা যে সকল সময় বাজে হয় তা কিন্তু না। ক্ষেত্রে বিশেষে এই rag এর মাধ্যমে কাছাকাছি হওয়া যায়।তবে খারাপ আর বাজে দিকটাই বেশি হয়। বাংলাদেশের সকল পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনেক বন্ধু বান্ধব পড়ালেখা করার সুবাদে সব জায়গারই খোঁজখবর রাখা হয়। রাজধানী ছেড়ে এতদূর আসার আগে সবার কাছ থেকেই একই পরামর্শ পাচ্ছিলাম।“Be aware of ragging”
স্বাভাবিকভাবেই তখন বিন্দুমাত্র পাত্তা দিই নাই। ভেবেছি দেশের অন্যতম সেরা পাবলিক একটি ভারসিটিতে যাচ্ছি অধ্যয়নের জন্য।যারা এখানে পূর্বে পড়ার সুযোগ পেয়েছে সকলেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে এসেছে।এরকম নোংরামি যুক্ত কথা আর আচরণ কোনো ভদ্র ঘরের সন্তানের দ্বারা সম্ভব না।কিন্তু বিধি বাম!!
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর দেখলাম এক ভিন্ন দশা। ইমিডিয়েট সিনিয়রেরা যেন অপেক্ষা করছিল কবে আসবে নতুন বর্ষের ছেলেরা। যেন এক মুরগী ধরার নেশা পেয়ে বসে এই শিক্ষিত(!) ছেলেদের। কিসব কারণে যে হেনস্থা আর হয়রানি করা হয় তা কেউ না দেখলে মোটেই বিশ্বাস করবেনা। কাউকে একলা,কাউকে বিভিন্ন গ্রুপের সাথে নিয়ে rag বা পরিচয়ের নাম করে করা হয় নোংরামি। আবার এর সাথে আছে বিভিন্ন টাস্কের জ্বালা যন্ত্রণা!এমন নজীরও দেখলাম কাউকে সারা রাত রাখা হয়েছে। দশটায় ডেকে এনে ভোর পাঁচটায় ছাড়া হয়। একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া এই অত্যাচারের বর্ণনা করা সম্ভব না। সব কিছু ছেড়ে আসা একটা ছেলেকে মানসিকভাবে করা হয় প্রচন্ড নির্যাতন।
ভাবতে অবাক লাগে এত বড় বিদ্যাপীঠে পড়ে এই মানুষরূপী জানোয়ার গুলো এত ছেলেকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এতে এদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও কাজ করে না।এসব পিশাচগুলার কি শাস্তি হওয়া উচিত তা আমার মাথায় আসেনা।এরা কিসব যে বলে তার কোনো নমুনা দেয়া সম্ভব না যার মাঝে বিন্দুমাত্র লাজ-লজ্জা,শরম বা হায়াবোধ আছে তার পক্ষে। চরম পর্যায়ের অশ্লীল কথা বলে যায় অবলীলায়। এমন অনেক ছেলে আছে যারা বলে যে এই তথাকথিত rag খাওয়ার আগে তারা এত নোংরা আর বাজে কথা বিশ বছরের জীবনে দুই কানে শোনেনি! একটা বছর এসব পশুগুলাকে ‘শিক্ষা’ কি শিক্ষা দিল সেটাও এখন বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সত্যি বলতে কি কবে বন্ধ হবে এই জঘন্যতম চর্চা সেটা বলা স্পম্ভব না।কিন্তু এই নিকৃষ্টতম চর্চা যে বন্ধ হওয়া দরকার এ বিষয়ে আশা করি কারো দ্বিমত নেই!
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই আমাদের বাস্তবতা!!
চোখে যেসব দেখছি তা মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন