নসীম হিজাযীর খুন রাঙা পথ ও সার্বভৌমত্বের সামষ্টিক অনুভূতি
লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ২২ মার্চ, ২০১৪, ১২:২১:২৬ দুপুর
আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযী। আমার মত অনেক পাঠকেরই হয়ত অসম্ভব প্রিয় একজন লেখক তিনি। উর্দু সাহিত্যের প্রয়াত এই ঔপন্যাসিক ইসলামী জগতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ের উথান পতনের চিত্র অঙ্কন করে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন মুসলমানদের। তাঁর প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হয়েছে তা মহান আল্লাহপাকই জানেন, কিন্তু এই মানুষটির জন্য হৃদয় থেকে দু'আ করি তাঁর ভাগ্যে জান্নাত নসীব হোক। আজকে অত্যন্ত ছোট্ট পরিসরে যে কথা ক'টি বলতে চাচ্ছি তার মূলসুর এই শক্তিশালী লেখকের ঐতিহাসিক উপন্যাস খুন রাঙা পথের সূত্র ধরেই বলব। সামষ্টিক অনুভূতি দেশ ও জাতির সার্বভৌম অস্তিত্বের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় তা উনার এই অমর উপন্যাসটা পড়লেই স্পষ্ট হবে। পাঠক ও ব্লগার ভাই-বোনদের অনুরোধ করছি বইটি পড়ে নেবার।যাহোক,মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কেন এত চিন্তিত আমরা। আমরা কিনা জানিনা ঠিক,আমি আসলে চিন্তিত।স্বাধীন দেশের স্বাধীন বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি প্রতিদিন, মুক্ত পতাকা উড়ছে আমাদের,অতি সুদক্ষ সেনাবাহিনী আমাদের! তারপরেও কেন এত ভয় সার্বভৌমত্ব নিয়ে! এবার একটু মুদ্রার পিঠটা উল্টে দেই। তার আগে বলে নেই,আমি খুব পরিষ্কারভাবে ভারতবিরোধী।এদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বহিঃশত্রুর মাঝে হুমকি হিসেবে আমার কাছে একমাত্র ভারতকেই মনে হয়। অভ্যন্তরের দেশীয় দালালদের কথা আলাদা।সেটা অন্য আরেকদিন বলা যাবে। পৃথিবীর প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের মাঝে শত্রুতা নতুন নয়।লাগোয়া সীমান্তে প্রতিবেশী দুই দেশ পরষ্পরের দিকে বন্দুকের নল তাক করে আছে এরকম দেশও কম নয়, কিন্তু ভারত বাংলাদেশের অবিসংবাদিত বন্ধু(এ সরকারের দাবিমতে)হওয়া সত্বেও
আমাদের সীমান্তে আমরা সবচেয়ে বেশি রক্ত দিচ্ছি। বন্ধুত্বের এই অপূর্ব নিদর্শন আর কোনও দেশ দিতে পেরেছে কিনা সন্দেহ আছে। ভারত আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ঠিক করে দিচ্ছে, কোন দেশের সাথে আমরা কেমন সম্পর্ক রাখব তার দিকনির্দেশনা আসছে ওপার থেকে। সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কীইবা হতে পারে! আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে তারা আমাদের দেশে ঢুকে পরে আমাদেরই জোয়ান-বৃদ্ধদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পাখির মত মানুষের উপর নিশানাবাজি করছে।আমাদের সীমান্তবর্তী জমির ফসল তারা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশকে বানাতে চাচ্ছে রাজস্থানের মরুভূমি। সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবার আরো প্রমাণ দরকার ভাই?? সাংস্কৃতিক ভাবে আমাদের দেশকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারের অতল খাদে। আসলে আমাদের দেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারত আমাদের গ্রাস করতে মুখিয়ে আছে।মরহুম শেখ মুজিবকে শ্রীমতি ইন্দিরা পরামর্শ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনী গঠন না করতে। তিনদিকে ভারত,দাসত্ব চুক্তি ছিল পঁচিশ বছর মেয়াদী।আসলেই তো সেনা-সৈন্য,কামান-বন্দুকের কি দরকার।ইন্দিরা গান্ধীর নিষেধ সত্বেও মুজিব ওআইসির সম্মেলনে যোগদান করায় ভারত নাখোশ হয়েছিল এটাও ইতিহাসই বলে। সহজ বাংলায়,বাংলার সার্বভৌমত্ব স্বাধীনতার পর থেকেই বিপন্ন। এমতাবস্থায় আমরা কি করব। আমাদের করণীয় নিয়ে বলার মত যোগ্যতা ও সাহস কোনোটাই আমার নেই। আমি শুধু হিজাযীর উপন্যাস "খুন রাঙা পথ"এর কিছু বিষয় তুলে ধরব। নবাব আলীবর্দী খান মসনদে থাকাকালীন সময়ে একসাথে লড়েছিলেন ইংরেজ বেনিয়াদের চক্রান্তের সাথে আর মারাঠা ডাকাতদের আগ্রাসনের
সাথে। যার জন্য তিনি কখনো কখনো নিরুপায় হয়ে সন্ধি ও করতে বাধ্য হতেন হয় চোরদের সাথে নাহয় ডাকাতদের সাথে। এত দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত থেকেও তিনি জাতির আত্মসম্ভ্রমবোধ ও বিপদের সামষ্টিক অনুভূতি সম্পর্কে জনতাকে সচেতন করার চেষ্টা করেননি। তার কাছে মূখ্য বিষয় ছিল নিজের সিংহাসন রক্ষা। তিনি তারটা হয়ত রক্ষা করে গিয়েছিলেন কিন্তু যে কুয়ো খুঁড়েছিলেন তাতে নিজের দৌহিত্রের পতন নিশ্চিত করেছিলেন।আমরাও দুশো বছর ছিলাম পরাধীন।পলাশীতে পরাজয়ের পর ইংরেজ যখন মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করল,মুর্শিদাবাদের জনতা যদি একটা করে ইটের টুকরাও ছুড়ে মারত তাও ইংরেজ ধ্বংস হয়ে যেত।কথাটা আমার না কোনো এক ব্রিটিশ ঐতিহাসিকের।একটা জাতি কতটা অচেতন হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পতন দেখেও নির্বিকার থাকতে পারে তার প্রমাণ দিয়েছিল সেদিনের মুর্শিদাবাদীরা।খোদা নাখাস্তা আমরাও যাতে এরকম অচেতন না হয়ে যাই।
পরিশেষে নসীম হিজাযীর "সীমান্ত ঈগল"এর একটা লাইন বলতে চাই, "কুদরত কোনো জাতির সম্মিলিত অপরাধ করেনা"|
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
সোনার বাংলা ব্লগে একবার নসিম হিজাজির উপর একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন