সাম্প্রদায়িকতার আওয়ামী ট্রাম্পকার্ড ও এক ডাক্তারের গল্প

লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ০২ মার্চ, ২০১৪, ০৮:১১:৫৫ রাত

গত কয়েকদিন আগে খুলনা গিয়েছিলাম জরুরী ব্যক্তিগত এক কাজে।আসার সময় বাসে সফরসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম যশোর কোতোয়ালী থানার এক অসহায় নির্যাতিত মানুষ।পেশায় গ্রাম্য ডাক্তার। চিকিৎসা সহকারীর ট্রেনিং পাওয়া মানুষটির হয়রানি আর কষ্টের উপাখ্যান শুনলাম।তার বাড়ি কোতোয়ালি থানায়।মতাদর্শের দিক দিয়ে তিনি সরকারবিরোধী। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য।ঘটনা ৫জানুয়ারির।ঘটনার স্থান অভয়নগর,যশোর।

তার আগে কিছু কথা বলা আবশ্যক মনে করি।জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ হিন্দুঘেঁষা একদল।ভারতপ্রীতির জন্যও পরিচিত এই সুপ্রাচীন দলটি। বহু আগের কথা না,কোন এক বেরসিক যেন আমাদের বিশিষ্ট পরহেজগার ও প্রাক্টিসিং মুসলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিঁদুর পড়া ছবি তুলে দিয়েছিল।হিসেব অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সময়কালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা নিশ্চিন্ত থাকার কথা ছিল।কিন্তু,ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমাদের দেশের হিন্দু ভাইদের জন্য যে,তারা এই পুরোনো দলটির ভোটব্যাংক হওয়া সত্বেও তারা আওয়ামী লীগের সময়েই সহিংসতার শিকার হয় বেশি।হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার বিন্দুমাত্র সুযোগও এই দলটি ছাড়তে নারাজ।এই ধারাবাহিকতা দেখেছি রামু সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।সাবোত্যাজের চরিত্র আওয়ামী লীগের অস্থিমজ্জায় খুব ভালোভাবেই মিশে আছে।মাইনোরিটিদের জমি দখল,লুটপাট ইত্যাদি কাজে আওয়ামী গুন্ডারা সিদ্ধহস্ত।

ফিরে আসি ডাক্তার সহযাত্রীর কাছে।যশোরের কোতোয়ালী থানায় বসবাস হলেও ভদ্রলোকের রোগী ছড়িয়ে আছে দূর দূরান্তে।এলাকাটিও অনেকটা হিন্দু অধ্যুষিত। স্ত্রী,পুত্র কন্যা নিয়ে বেশ সুখে স্বাচ্ছন্দে জিন্দেগী গুজরান করছিলেন।অভাব ছিল না জীবনে।সরকার বিরোধী হওয়ার জন্য ৫তারিখের নির্বাচনে ভোটও দিতে যাননি।এমনকি ঐদিন বাসাতেও ছিলেন না।গিয়েছিলেন খুলনাতে।পরদিন আসেন এলাকাতে।এসে শুনেন পাশের থানা অভয়নগরের দূর্ঘটনার কথা।অভয়নগরের মালোপাড়ায় তার নিজস্ব কিছু রোগীরও বাস ছিল।ছুটে যান দায়িত্ববোধের তাড়নায়।চিকিৎসা দেন আহত ব্যক্তিদের।এমনকি তিনি তিনজনকে হাসপাতালেও নিয়ে যান নিজে সাথে থেকে।ওখানকার কর্তব্যরত পুলিশদেরও দেন প্রাথমিক চিকিৎসা।সাত দিন পরে জানতে পারেন এই ঘটনায় পুলিশবাদী মামলার ৩৯জন আসামীর একজন তিনি।তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যান অভয়নগরে।সদালাপী এই আপনজনের বিপদে এগিয়ে আসেন মালোপাড়ার হিন্দু ভাইরাও।ডাক্তার ভাইকে নিয়ে থানায় যান তাঁরা।থানা থেকে বলা হয় উপরের নির্দেশ সব।আপাতত তাদের কিছু করার নেই।

এখন যাই ঘটনার একটু ভেতরে।আসলে হয়েছিল কি অভয়নগরে?অভয়নগরে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা দাঁড়িয়েছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থীরূপে।হারার পর পোষা বাহিনী দিয়ে তান্ডবলীলা চালান মালোপাড়ার জনপদে।যথারীতি সাম্প্রদায়িক ট্রাম্পকার্ডের সুযোগ নেয় আওয়ামী বুদ্ধিজীবি মহল,মিডিয়া ও আওয়ামী লীগ।

যাহোক,ডাক্তার ভদ্রলোক বলছিলেন নিজের দুর্ভাগ্যলিপি।সাতদিন পরে নিজের নাম আসামীর তালিকায় দেখে অনেকটাই আকাশ থেকে পড়েন তিনি।এলাকার সকলের চেনাজানা মুখ,নির্বিবাদী মানুষ তিনি।শুরু হয় পলাতক জীবনের। পুলিশের হয়রানি,গ্রেফতার ও রিমান্ড এর আতঙ্কে এলাকা ছাড়া হয়ে যান। আর্থিক ভাবেও দুর্বল হয়ে যান।ভদ্রলোক নিজের পুত্র কন্যার কথা বলার সময় বহুকষ্টে নিজের কন্ঠের আবেগকে সংযত রাখছিলেন। তিনি ঢাকায় আসছিলেন একটি চাকরির খোঁজে|পুরো রাস্তা শুনলাম এই অসহায় মানুষটির কথা। কিন্তু কিছু বলে তাঁকে সাহস দেয়ার ভাষা মুখে যোগালো না।

উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো আওয়ামী সভ্যতার অংশ। নতুন কিছুনা। রাঘব বোয়াল থেকে গেল পর্দার আড়ালে!

বিষয়: বিবিধ

৯৩৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

185669
০২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:১৪
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আওয়ামীলীগ পারেনা এমন কিছু নাই।
০২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:১৯
137551
এহসান সাবরী লিখেছেন : ঠিক!
185982
০৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
সজল আহমেদ লিখেছেন : আওয়ামি-লিক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File