ভাষার মাস,ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ব্যক্তিগত অনুভূতি!

লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:৩৮:০৯ সকাল

তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিলাসিতা নিঃসন্দেহে একটি প্রাণঘাতি ব্যাধি। অথচ অবাক করা ব্যাপার, আমরা এটাই করে যাচ্ছি অনেকদিন যাবত।

প্রসঙ্গটা টানার আগে একটা কথা বলা দরকার। আর কয়দিন পরেই একুশে ফেব্রুয়ারী। মহান ভাষা দিবস। অনেক স্বপ্ন, ত্যাগ আর সংগ্রামের মাধ্যমে পাওয়া এই ভাষা। বিশ্বায়নের যুগে, আন্তর্জাতিক ভাবে যোগাযোগ বেড়েছে অনেক।বিশ্ব এখন একটা মোবাইল স্ক্রিণে এসে পড়েছে। এজন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ভাষার দরকার ছিল অনেক। আধুনিক প্রযুক্তিতে এগিয়ে আসায় প্রভাব বিস্তারকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজি এজন্য সকল স্থান দখল করে নিয়েছে। এই ভাষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবেনা। এখন অনেক কথার পর যা নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা ছিল সে প্রসঙ্গে আসি!প্রসঙ্গটা আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল! রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়া এক শ্রেণী,উঠতি উচ্চবিত্ত,উচ্চমধ্যবিত্ত আর এলিট শ্রেণির অনেক মানুষের কাছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোই মনে হয় শিক্ষার একমাত্র স্থান। তারা খুব সযতনে এড়িয়ে চলেন বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলো। এর ফলাফলের দিকে কি আমরা একটুও ভালো করে লক্ষ করেছি?? দেশে এমন একশ্রেণীর তরুণ সমাজের উদ্ভব হচ্ছে যারা এক বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে বড় হচ্ছে যাদের ধ্যান জ্ঞানই হয়ে পড়ছে বিদেশ কেন্দ্রিক। আমার কথাগুলো যদি কারো ব্যাক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত লাগায় আমি দুঃখিত। কিন্তু দুই একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া এই ধারার বাইরের ছেলে মেয়ে কি কেউ দেখাতে পারবেন??? আমরা আমাদের দেশের এক সম্ভাবনাময় তরুণ অংশকে ঠেলে দিচ্ছি দেশের বাইরে। তারা দেশের মূলধারায় যুক্ত হতে পারছে না। পারছে না দেশের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করতে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ছোট্ট দেশের তরুণদের মাঝে এক বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে।আমার খুব চেনাজানাদের মাঝেও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বন্ধুবান্ধব আছে। তারা যে আলাদা এক সংস্কৃতি লালন করে একথা কি অস্বীকার করবেন? তাদের চিন্তার জগত যে সমাজে দশ পাঁচটা সাধারণ ছেলে থেকে আলাদা এটা কি হেসে উড়িয়ে দিবেন? তারা বাংলা পড়তে পারে না এটা নিয়ে তাদের মাঝে কোনো আফসোস তো নেই বরং একটা গর্ব কাজ করে। ভাষার জন্য লড়াই করা আমাদের পূর্বসুরীরা কি এরকম এক যুবসম্প্রদায়ের কথা কল্পনাও করেছিলেন? কি উত্তর দিবেন এই প্রশ্নের? তারা যে বাংলা মিডিয়ামে পড়া একটা ছেলেকে দেখে নাক সিটকায় এটা কি আপনি ভুলতে পারবেন?আপনি পারলেও আমি পারবনা! আমার মত আরো অনেকেই পারবেনা..

তাহলে উপায় কি এই সমস্যা থেকে বাঁচার। এ প্রশ্ন সবার মনেই আসতে পারে। সত্যি কথা কি, আমি নিজেও জানিনা। তবে আশু প্রয়োজন যেটা তাহল দুই শিক্ষা ব্যবস্থার একটি সমন্বয় সাধন। তার চেয়েও জরুরী দেশের আপামর জনতার এই বিষয়টি নিয়ে মানসিকতার পরিবর্তন।

পরিশেষে একটা ছোট ঘটনা দিয়ে শেষ করব। রাত জাগার কারণে এফএম রেডিও শোনা হয় প্রায়ই। কয়েক মাস আগে রাতে রেডিও টুডেতে আরজে সালমানের একটি শো শুনছিলাম। এক ইংলিশ মিডিয়ামের ললনা ফোন দিল। সুকণ্ঠের আরজে মেয়েটিকে কথায় কথায় বাংলা গানের কথা বললে আপুটা বলল সে বাংলা গানের অর্থভালোমত বুঝেনা।আরজে সালমান অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলেন!অনেক!! তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছিলাম আমি।

আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন এরকম কতজন শিক্ষার্থী আছে ইংলিশ মিডিয়ামের? জানি বলার সাহস নেই! তাই বলি,এগিয়ে আসুন!ভাষার মর্যাদার জন্য আপনার নিজের যতটুকু করার ততটুকু করুন অন্তত! ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে এই অহেতুক বিলাসিতা থেকে দূরে থাকুন!!!

বিষয়: বিবিধ

১০৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File