শেখ মুজিব নিজেই তার পতনের জন্য দায়ী ছিলেনঃ মেজর ডালিম।
লিখেছেন লিখেছেন পাকিস্তানি চাচা ০৭ আগস্ট, ২০১৫, ০২:০৩:২৯ দুপুর
দুঃখজনক পরিণতির জন্যে অন্য কেউ নয়; স্বয়ং শেখ মুজিব নিজেই দায়ী।
পৃথিবীর ইতিহাসে ক’জন নেতা দেশের মানুষের এত ভালোবাসা পেয়েছেন? কিন্তু পরিবর্তে তিনি জনগণকে আপন করে নিতে পারেননি। দুষ্কৃতিকারী কর্মী ও নেতারা তার কাছে আশ্রয় ও প্রশ্রয় পেয়েছে। পরিবারের অনেকের বিরুদ্ধে দুঃষ্কর্মের রিপোর্ট পেয়েও তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। কর্তৃত্বের প্রতি প্রবল আকর্ষণের জন্য তার চেয়ে অধিক রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিসম্পন্ন কাউকে তিনি বরদাস্ত করতে পারতেন না। তার চরিত্রে ধৈর্য্যের অভাবও ছিল যথেষ্ট। ফলে তিনি পরীক্ষিত ও গুনবান যোগ্য সহযোগীদের কান কথায় বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে অপসারন করেন। তিনি এক পর্যায়ে আপন/পর, বিশ্বস্ত সহযোগী এবং নির্ভরশীল বন্ধু বিবেচনার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। শেখ মুজিবের এই মানসিকতাকে তার রাজনৈতিক জীবনের চরম ব্যর্থতা ও পরিণতির জন্য একটি বিশেষ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যুব নেতাদের দৌরাত্ত্বে গোটা প্রশাসনযন্ত্র বিকল হয়ে যায়। দেশে দুর্ভিক্ষ। প্রতিদিন হত্যার খবর শুনতে হয় মানুষকে। প্রকাশ্য দিবালোকে নির্বিচারে হত্যাকান্ড প্রায় প্রতিদিন সংঘটিত হয়েছে তখন। বিরোধী দলগুলোকে নির্মূল করার জন্য রক্ষীবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া ছাড়াও দলীয় কর্মীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল। পুরো দেশ এভাবেই একটা সীমাহীন নৈরাজ্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। যে মানুষ একদিন মুজিবের কারামুক্তির জন্য রোজা রেখেছে; নফল নামাজ আদায় করেছে; সেই মানুষই আওয়ামী-বাকশালী শাসনামলে আল্লাহ্পাকের কাছে কেঁদে কেঁদে শেখ মুজিবের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চেয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসন শেখ মুজিবকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। বাকশালী একনায়কত্ব সৃষ্টি করে তিনি তার দলের মধ্যেও অন্তঃবিরোধ তীব্র করে তোলেন। তার এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেননি দলের অনেকেই।
বাকশাল গঠন করার আগে জোর প্রচারণা চালানো হল- শেখ মুজিব তার দল ও দলীয় কর্মীদের ক্ষমতার লোভ, লালসা ও দুর্নীতি সর্ম্পকে উদাসীন নন। তিনি বুঝতে পেরেছেন তার পার্টির চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এ পার্টি দ্বারা দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন করা আর সম্ভব নয়। তাই তিনি পার্টির বিলুপ্তি ঘোষণা করে একদলীয় সরকার কায়েম করে দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনা করতে যাচ্ছেন। লোকজন ভাবল, তার এই পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে কলুশিত লোকজন ক্ষমতাচ্যুত হবে এবং সে জায়গায় নিয়োগ করা হবে ভালো লোকজনদের। কিন্তু সে আশা অল্প সময়েই কর্পুরের মত বিলীন হয়ে গেল। দেখা গেল পার্টির বিলুপ্তি ঘোষণা করে তিনি যে বাকশাল গঠন করলেন সেখানে ক্ষমতাবলয়ে স্থান পেলো ধিকৃত গাজী গোলাম মোস্তফা, মনসুর আলী এবং শেখ মনি এন্ড গংরাই। তারাই হয়ে উঠল মুখ্য প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। যাদের অপকর্মের বদৌলতে আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসাবে জনগণের আস্থা হারিয়েছিল; তাদের নিয়েই ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ যাত্রা শুরু করলেন শেখ মুজিব। জনগণ হতাশ হয়ে পড়ল। পার্টি বিলুপ্ত করলেও চাটার দলকে বাদ দিতে পারলেন না শেখ মুজিব। বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে আর একটি জিনিস পরিষ্কার হয়ে উঠল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলয়ে পাকাপোক্তভাবে অধিষ্ঠিত করা হল তার পরিবারবর্গকে। ব্যাপারটা এমনই যেন- পুরো দেশটাই শেখ পরিবারের ব্যক্তিগত জমিদারী!
আমরা ঠিক করলাম, জাতিকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে যে কোন ত্যাগের বিনিময়েই। পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে মানবিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক অধিকার। শুরু হল আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে সেনা পরিষদ গড়ে তোলার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। দেশের প্রতিটি সেনানিবাসের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন ও রেজিমেন্টে সমমনা অফিসার ও সৈনিকদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে গোপন সংগঠন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, শেখ মুজিবকে আজীবন রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আগেই বিপ্লব ঘটিয়ে শেখ মুজিবের একনায়কত্ব ও বাকশালের পতন ঘটাতে হবে। বিপ্লবকে সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সাংগঠনিক তৎপরতা তরিৎ গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলে কেন্দ্রিয় কমিটি।
প্ল্যানিং ষ্টেজের এক পর্যায়ে একদিন লেঃ কর্নেল আব্দুর রশিদ খন্দোকার সেনা পরিষদের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের কয়েকজনের সাথে সাক্ষাৎ করে। মিটি-এ দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও শেখ মুজিবকে আজীবন রাষ্ট্রপতি বানাবার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে লেঃ কর্নেল রশিদ অভিমত প্রকাশ করে যে, শেখ মুজিব যদি একবার পাকাপোক্তভাবে ক্ষমতায় আসন গেড়ে বসে তবে তার স্বৈরাচারী সরকারের জোয়াল থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করা খুবই দূরূহ হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দুর্বলতার কারণে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানো তাদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সে ও লেঃ কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খন্দোকার মোশতাকের নেতৃত্বে একটি বিকল্প সরকারের কথা চিন্তা-ভাবনা করেছেন। এ ব্যাপারে সেনা পরিষদের নেতাদের অভিমত কি তা জানতে চায় লেঃ কর্নেল রশিদ। লেঃ কর্নেল রশিদ ও লেঃ কর্নেল ফারুক দু’জনেই মুক্তিযোদ্ধা। সেই সময় লেঃ কর্নেল রশিদ ও লেঃ কর্নেল ফারুক যথাক্রমে ২য় ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি ও ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারস এর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছিল। দু’টো ইউনিটই তখন ঢাকায়। দু’জনই সেনা পরিষদের নেতৃবৃন্দের কাছে সুপরিচিত। তাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রশ্নে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তাই লেঃ কর্নেল রশিদকে সেনা পরিষদের সিদ্ধান্তের কথা খুলে বলা হল। সব শুনে লেঃ কর্নেল রশিদ প্রস্তাব রাখলো যৌথ উদ্যোগে অভ্যুত্থান সংগঠিত করার। তার প্রস্তাবে আন্তরিকতার অভাব ছিল না। তার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলা হল, অভ্যুত্থানের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যাবলী সর্ম্পকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত রয়েছে সেনা পরিষদের। আলোচনা সাপেক্ষে সেগুলোতে ঐক্যমত্য হলেই সেনা পরিষদ তার প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। লেঃ কর্নেল রশিদ আলোচনা করতে রাজি হওয়ায় পরবর্তিকালে ঐ সকল বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সেনা পরিষদের তরফ থেকে লেঃ কর্নেল রশিদকে জানানো হয় বিপ্লবের পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানই হবেন চীফ অফ আর্মি ষ্টাফ। এই পরিপ্রেক্ষিতে লেঃ কর্নেল রশিদ প্রস্তাব রাখে এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দোকারকে অব্যাহতি দিয়ে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এমজি তোয়াবকে বিমান বাহিনী প্রধান হিসাবে নিয়োগ করার। তার এই প্রস্তাব সেনা পরিষদ মেনে নেয়। ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় যৌথ বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেনা পরিষদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্যাবলী ও নূন্যতম প্রোগ্রাম সম্পর্কে খন্দোকার মোশতাক সম্মতি প্রদান করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খবরা-খবর আদান-প্রদান ও যৌথভাবে বিপ্লবের কার্যকরী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এভাবেই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ফলে অভ্যুত্থানের সফলতার সম্ভবনা স্বাভাবিক কারণেই আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
বিষয়: রাজনীতি
১৭৭৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উনাকে ভাল না বাসলে আখিরাতে জবাবদিহি করতে হবে বলে জনাব মহিউদ্দিন চেীধুরির উপর ওহিয়ে শয়তান নাযিল হয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন