*** এ গল্পের নাম হয় না ***
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আবদুল্লাহ ০১ জুন, ২০১৪, ০৬:৩৪:২০ সন্ধ্যা
একটা গল্প লিখলাম এই প্রথম। এর আগেও লিখেছি। কিন্তু তা প্রকাশযোগ্য নয়। দেখি গল্প লেখার এই ছোট্ট পরীক্ষাটায় কতটুকু পাশ করতে পারি।
*** এ গল্পের নাম হয় না ***
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে মাইমুনা। গরিব ঘরের মেয়ে। সংসারে নানা টানাপোড়েন। বাবা-মার কাছে তার আবদার সামান্য। একটা মোবাইল শুধু। বান্ধবীদের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলতে হয়। আদরের মেয়ের আবদার বলে কথা! ফেরাতে পারলেন না বাবা। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনের সাথেও মাঝে মাঝে... নাহ, এবার যে করেই হোক, মোবাইল একটা নিতেই হবে। ভাবতে ভাবতে বাবা সকালে পানি-ভাত খেয়েই বেরিয়ে পড়লেন।
নবম শ্রেণিতে উঠলেই মোবাইল পাবে মাইমুনা। বাবার প্রতিশ্রুতি শুনে মাইমুনা যারপরনাই আনন্দিত। খুশিতে তার পড়ার স্পৃহা দ্বিগুণ বেড়ে গেল। জেএসসিতে এ+ পেল সে। এ যেন গোবরে পদ্মফুল! সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন মা। চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দাঁড়িয়ে গেলেন নামাজে। মাইমুনাদের এলাকায় এক ভদ্র মহিলা আসেন। ধর্মের কথা বলেন। মহিলাদের বলেন পর্দায় থাকতে। ভদ্র মহিলার প্রভাবে মাইমুনার মা ধর্ম-কর্ম শুরু করেছেন। যদিও বিভিন্ন কাজের অজুহাতে পর্দা করাটা ঠিকমতো হয়ে ওঠে না। এছাড়া তার রূপের এমন যাদু আর নেই- তাই ওসব নিয়ে ভাবেন না তেমন। তার ভাবনা মেয়েকে নিয়ে। ধর্ম-কর্মের আলোচনা শুনলেও তাদের কেউই সাক্ষর ছিল না। তারপরও তারা নিজেদের দুরবস্থার কথা ভাবেন। ছেলেমেয়েগুলোকে স্কুলে ভর্তি করান। নিজেদের অজ্ঞতার অভিশাপ যাতে সন্তানের গায়ে না লাগে, এর জন্য প্রায় সবারই ছিল আপ্রাণ চেষ্টা। তবু কেউই পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়তে পারে না। বিয়ে হয়ে যায় অধিকাংশের। এলাকার ছেলেগুলো দিন দিন কেমন যেন হয়ে উঠছে। ভয়ে মা-বাবা মেয়ে নিয়ে আতংকে দিন কাটান। বিয়ে দিয়ে অনেকটা নিশ্চিত হতে চান তারা। মাইমুনার মাও চেয়েছিলেন মাইমুনাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু মেয়ের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে নতুন স্বপ্ন বোনেন হৃদয়ে।
নবম শ্রেণিতে ভর্তি হল মাইমুনা। উপহার হিসেবে পেল একটা মোবাইল। প্রায় দু’হাজার টাকা গুনতে হয়েছে মা-বাবাকে। মাইমুনা ভীষণ খুশি ফোন পেয়ে। তার খুশিকে অটুট রাখার জন্য মা-বাবা কেউই ঋণ-করা দু’হাজার টাকার কথা উল্লেখ করলেন না। মাইমুনা হিসেবি মেয়ে। দু’দিন পর ঠিকই মাকে সে টাকার কথা জিজ্ঞেস করল। মা হেসে বলেছিলেন- তোর বাবা তোর জন্যই তো টাকাগুলো জমিয়েছিলেন। সত্যটুকু চাপা দেওয়ার মতো চোখের জলটুকুও আড়াল করলেন মা। মাইমুনা কিছুই টের পেল না।
রাত ১১টা। ঘুমে আচ্ছন্ন মাইমুনা। বালিশের পাশেই মোবাইলটা। হঠাৎ একটা কল এল। মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাঙল মাইমুনার। উঠে বসল সে। নাম্বারটা অপরিচিত। আবার কল! রিসিভ করে কানে নিল।
-হ্যালো, কে? খুব আস্তে করে বলল।
-আমাকে তুমি চিনবে না, আমি হৃদয়।
-কোন হৃদয়? মাইমুনার ঠোঁট কেঁপে উঠল। সপ্তাখানেক মাত্র মোবাইলটি এসেছে তার হাতে। কারো সাথে তেমন কথা বলা হয়ে ওঠেনি। অপরিচিত একটা ছেলের সাথে কথা বলতে গিয়ে কেঁপে উঠল তার কণ্ঠস্বর।
-আচ্ছা তুমি এখন ঘুমাও, পরে ফোন করব, রাখি।
মাইমুনার হার্টবিট বেড়ে গেল। কে তাকে ফোন করবে এত রাতে? কেন করবে? আবার কিছু না বলে রেখে দিলই বা কেন? ইত্যাদি উল্টাপাল্টা চিন্তায় রাতে আর ঘুম হয়নি তার।
পরদিন স্কুলে গেলেও মাথা থেকে ভাবনাটি সরাতে পারছিল না সে। কাছের বান্ধবী বলতে কেবল রুবিনা। যাকে সবকিছু বলা যায়। কিন্তু এ ব্যাপারটি লুকাতে মনে চাচ্ছে কেন যেন। মাইমুনার অবচেতন মনে কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে- আমি হৃদয়। পরদিন রাতে আবার ফোন। মাইমুনা জেগেই ছিল। দরজাটা আলগা করে ঘরের পেছনে এসে কাঁঠাল গাছটার সাথে ঠেঁস দেয় সে। পাশের ঘরে তাকে-নিয়ে-স্বপ্ন-বোনা বাবা-মা নির্ভার ঘুমে মগ্ন। মাইমুনা ক্রমে তলিয়ে যেতে থাকে দুর্দমনীয় অনুভূতির অতল রাজ্যে। নতুন মোবাইল, কথা বলার নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন বন্ধু, নতুন ক্লাস সবকিছু তার নতুন হয়ে উঠছে।
… এভাবেই শুরু। এরপর বহু হাত ঘুরে, বহু ধাপ পেরিয়ে, নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চলে অন্ধকার জগতে পদচারণা। প্রেমের পবিত্রতার নামে, ভালোবাসার নামে পার্কে-রেস্তোরায়-রিকসায়-ক্যাম্পাসে-হোটেলে চলে অসংযমী দেহতত্ত্বের সাধনা। সমাজে স্বীকৃতি লাভের আশায়, বন্ধুমহলে মুখরক্ষার স্বার্থে, তারা পরিচিতি পায় বয়ফ্রেন্ড, গালফ্রেন্ড হিসেবে। এভাবেই পৃথিবীর আনাচে কানাচে কোটি কোটি মাইমুনা প্রেমের নামে ভুলে যায় বিবেকবোধ, ধর্মজ্ঞান, দায়িত্বজ্ঞান। শরীরের রোমাঞ্চ আহরণে নিজেকে সঁপে দেয় কামুক পুরুষের বুকে অবলীলায়।
...এভাবেই সৃষ্টি হয় এক একটি নিষিদ্ধ প্রেমের প্রেক্ষাপট। ভিন্নও হতে পারে। তবু হয়, হচ্ছে একথা নিশ্চিত।
.
.
.
এখানেই শেষ নয়। এরপর সে হয় প্রত্যাখ্যাত। তখন নারীবাদীরা, মনোবিজ্ঞানীরা সাহস যোগায়- সতীত্বই সবকিছু নয়। কী নিখুঁত যুক্তি! এবার নারীর অবশিষ্ট শালীনতাটুকু নস্যাৎ করার পাঁয়তারা চলতে থাকে। এখনই তাকে পণ্য বানানোর মোক্ষম সময়।
বিষয়: সাহিত্য
১১০২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন