সৃজনশীল প্রশ্ন এবং পাশের হার
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আবদুল্লাহ ২৫ মে, ২০১৪, ০৪:৪৬:৩৬ বিকাল
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সিলেবাসে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়ার শুরুর দিকে অনেক অভিভাবক-শিক্ষার্থীই আতঙ্কে ছিল। খোদ সচেতন মহল থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে। কারণ তখন পর্যন্ত শিক্ষকেরা জানতেন না এ পদ্ধতির পাঠদান কৌশল। যদিও এ পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে ‘গাইড ব্যবসা’ হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল সাময়িকভাবে। কিন্তু ক্রমে ‘সৃজনশীল পদ্ধতির অনুশীলন গাইড’ বাজারে আসে। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই এখানে।
সৃজনশীলের আগেকার পদ্ধতি (সনাতন পদ্ধতি বলব কি?) সম্পর্কে যে অপবাদটি প্রচলিত তা হল, মুখস্থ বিদ্যাকে উৎসাহিতকরণ। সৃজনশীল এসে শিক্ষার্থীর মননের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে মুখস্থ বিদ্যাকে জাদুঘরে পাঠিয়েছে। এমন দাবি করাটা হাস্যকর হত না, যদি পাশের হারে এর কোনো প্রভাব দেখা দিত। পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণে আপাতদৃষ্টিতে প্রমাণিত হয় বাঙালির সন্তানগুলো সৃজনশীল মেধার এক একটা খনি!
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। আসল ধরাটা তখন বেশ ভালোভাবেই খায় যখন ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই এ পদ্ধতির প্রায়োগিক দিক নিয়ে কতগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
ক) শিক্ষকগণ সৃজনশীল পাঠদান সম্পর্কে কতটুকু ধারণা রাখেন?
খ) সৃজনশীল পড়াশোনা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে কি সময়সাশ্রয়ী নাকি সনাতন পদ্ধতির তুলনায় বেশি সময় দিতে হয়?
গ) যারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন তাদের মধ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে কোনো প্রবণতা কাজ করে কি?
এসব প্রশ্নের উত্তর নীতিনির্ধারকগণ খুঁজে বের করুক। আমরা আসুন, একটা সূক্ষ্ম বাস্তবতার মুখোমুখি হই।
বাংলাদেশে খেলার মাঠগুলো, সাঁতারের পুকুরগুলো, ব্যায়াম করার পার্কগুলো ক্রমান্বয়ে ‘নানা কারণে’ হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া প্রাইভেট ভার্সিটির মতো প্রাইভেট স্কুল এন্ড কলেজেরও অভাব নেই ঢাকা শহরে। সেখানে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নেই কোনো খেলার মাঠ। ফলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিনোদন হিসেবে চার দেয়ালে বন্দীত্বকেই বরণ করে নিচ্ছে। স্যাটেলাইট চ্যানেলের রিমোট টিপে অথবা ফেসবুকের বাটন টিপে সৃজনশীল মস্তিষ্ককে আরো ভোঁতা করছে প্রতিনিয়ত। শুধু ফোন নাম্বার দিয়ে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ ফেসবুক ফোবিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। অভিভাবকের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ মা-বাবাকে ফাঁকি দিয়ে রাত ১০টার মধ্যে ঘুমুতে যাওয়ার নাম করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে সারারাত ফেসবুকিং করলেও কেউ টের পাবে না। এটাও এক ধরনের সৃজনশীলতা বলতে পারেন। তবে আমরা কেউই এ ধরনের সৃজনশীলতার পক্ষপাতী নই।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দাদু বা নানু বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মারা যায়। কোনো সৃজনশীল পদ্ধতি তাদেরকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে না। যে সৃজনশীলতা বাস্তবজীবনে কোনো কাজে লাগে না, তা সিলেবাসে রেখে আনুষ্ঠানিকতা করার ফায়দাটা কী? এই যে খেলাধুরার অভাবে শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ হচ্ছে না, পানিতে ডুবে যাওয়া কিংবা ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে তাকে সাঁতার শেখানো হচ্ছে না, কৃত্রিম খেলনা দিয়ে চার দেয়ালে বন্দী করে রাখা হচ্ছে আর সে আসক্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল, টিভি ও ফেসবুকের প্রতি। এত এত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কী করে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল হয়ে ওঠে? কেমন করে এ+ আর গোল্ডেন-ঝড়ে সারাদেশে বইতে থাকে খুশির হাওয়া? এ প্রশ্ন রইল দু’দলের কাছে।
১) যারা পাশ করায় আর ২) যে অভিভাবকগণ সন্তানের পাশ দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন