কালের আকাল
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আবদুল্লাহ ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৫:০৭ সকাল
সেন্ট্রাল মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে গেট দিয়ে বেরিয়ে আসতেই ভিক্ষুকদের চিরাচরিত আত্মচিৎকার শোনা গেল। পাশাপাশি একজন নবাগতও এসে সে-দলে ভিড়ল। একটি বাচ্চা মেয়ে পুড়ে গেছে আগুনে- তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য। কথা শুনে বোঝা যায়, ঠিক পেটের ক্ষুধায় সে হাত পাতেনি। অন্য ভিক্ষুকরা যেমনটি করে।
লোকটির একটানা আকুতি অনেক নামাজিকেই দয়ার্দ্র করে তোলে। তারাও সামর্থ্য মত আকুতির জবাব দিয়ে যাচ্ছে। ফলে অন্য নিয়মিত ভিক্ষুকদের ভাণ্ডে ভিক্ষার পয়সা আর ঝন ঝন শব্দ করে বাজে না তেমন।
রাগে বা হিংসায় হোক, কাঁপতে থাকে নিয়মিতদের একজন। বিড়বিড় করে ঠোঁট দুটো। প্রথমে বোঝা যায় না। পরে আরো সহিংষ্ণু হয়ে ওঠে তার ঈর্ষান্বিত কণ্ঠ। “পাঁচ বছর তো ঐ মিথ্যা বলেই খেয়ে আসছে, মেয়েতো পুড়বেই। মেয়ে পুড়ছে না ছাই! আল্লায় সইবে না এই মিথ্যা কথা। চির জীবন তো এ-ই করে খেয়ে আসছে।”- তাতেও ভাগের ভিক্ষা হাতছাড়া হচ্ছে দেখে গলাটা যেন একটু কেঁপে উঠল ভিক্ষুকটির। এবার যেন মনে হয় কেঁদেই ফেলবে।
ভিড়টা ক্রমেই কমে এল নামাজিদের। নতুন আসা লোকটি এবার অন্য গেটে গিয়ে দাঁড়াল। সাদার উপর লাল সুতা দিয়ে আঁকা একটি রুমাল হাতে সেই একটানা আকুতি“...আমার একটা মেয়ে...মেয়ের পোড়া...পুড়ে গেছে...চিকিৎসার জন্য সাহায্য...” ভেসে আসে এ গেটেও। নিয়মিত ভিক্ষুকটি শুনতে পায় সেই আত্মচিৎকার। এক সময় লোকজন-ফাঁকা মসজিদের গেটে বসে ঝিমাতে থাকে দেরিতে-আসা নামাজিদের সহানুভূতির আশায়।
অনেকক্ষণ বসে থেকে বৃদ্ধ ভিক্ষুকটি বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। রাগে ক্ষোভে অভিমানে একবার ঠোঁট দুটো যেন নড়ে ওঠে। যেন বলতে চায়- ‘ভিক্ষারও আকাল।’
বিষয়: বিবিধ
১১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন