আকীদার অর্থ এবং দ্বীনের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে এর গুরুত্বের বর্ণনা

লিখেছেন লিখেছেন এম এ এস মিলন ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:৪৬:৫৫ রাত

আকীদার অর্থ এবং দ্বীনের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে এর গুরুত্বের বর্ণনা

আকীদার আভিধানিক অর্থ:

আকীদা শব্দটি আরবী العَقدُ العَقدُ(আল-‘আকদু (থেকে গৃহিত। এর অর্থ কোন কিছু বেঁধে রাখা। বলা হয়عَقدْتُ عَليْهِ القلبَ وَالضَّمِيْرَ অর্থাৎ আমি এর উপর হৃদয় ও মনকে বেঁধেছি। আকীদা হল ঐ বিষয়, মানুষ যা মেনে চলে। বলা হয়, ‘তার আছে সুন্দর আকীদা’ অর্থাৎ এমন আকীদা যা সন্দেহমুক্ত। আকীদা অন্তরের কাজ। অন্যভাবে বলা যায়, আকীদা হল কোন বিষয়ের প্রতি অন্তরের ঈমান ও প্রত্যয় এবং অন্তর দিয়ে সে বিষয়কে সত্য প্রতিপন্ন করা।

আকীদার শর‘ঈ অর্থ:

শরীয়তের পরিভাষায় আকীদা হল: আল্লাহর প্রতি, তাঁর মালাইকা (ফেরেশতা), তাঁর গ্রন্থসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান পোষণ এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান রাখা। আর এগুলোকে বলা হয় ঈমানের রুকন।

শরীয়ত দু’ভাগে বিভক্ত : আকীদা ও আমল তথা অন্তরের বিশ্বাসগত বিষয় ও দৈহিক, আর্থিক কর্মকাণ্ডগত বিষয় :

আকীদাগত বিষয়সমূহ হল এমন যা কাজে রূপায়িত করার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় অর্থাৎ যার কোন বাহ্যিক কার্যরূপ নেই। যেমন এই আকীদা পোষণ করা যে, আল্লাহ্ রব এবং তাঁর ইবাদাত করা ওয়াজিব। একইভাবে ঈমানের উল্লে¬খিত বাকী রুকনগুলোর প্রতিও বিশ্বাস রাখা। এগুলোকে বলা হয় মৌলিক বিষয়।

আর আমলী বিষয়সমূহ হল এমন যা কার্যে পরিণত করা যায়, যেমন সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, সাওম পালন ও যাবতীয় সকল আমলী বিধান। এগুলোকে বলা হয় আনুষঙ্গিক বিষয়। কেননা এগুলোর শুদ্ধাশুদ্ধি উক্ত মৌলিক বিষয়সমূহের শুদ্ধাশুদ্ধির উপর নির্ভরশীল। (শারহুল-আকীদাহ্ আস্-সাফারিনিয়া ১/৪)

অতএব বিশুদ্ধ আকীদা হল এমন মৌলিক ভিত্তি যার উপর দ্বীন স্থাপিত এবং যা থাকলে আমল শুদ্ধ ও সহীহ হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾ [الكهف: ١١٠]

‘‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।’’ (সূরা আল-কাহাফ: ১১০)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :

﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [الزمر: ٦٤]

‘‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, যদি (আল্লাহর সাথে) শরীক কর তাহলে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’’ (সূরা আয-যুমার: ৬৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ ﴾ [الزمر: ٣]

‘‘অতএব তুমি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত কর। জেনে রাখ, আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদাত ও আনুগত্য।’’ (সূরা আয-যুমার: ২-৩)

সুতরাং এই মহান আয়াতসমূহ ও অনুরূপ অর্থে আরো বহুসংখ্যক যে আয়াতসমূহ এসেছে তা এ প্রমাণই বহন করছে যে, আমল শির্ক থেকে মুক্ত না হওয়া ব্যতীত কবুল হয় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই রাসূলগণ (আল্লাহ্ তাঁদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) সর্বপ্রথম আকীদা সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই তাঁরা সর্বপ্রথম স্ব-স্ব জাতির লোকদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি ও অন্য সব কিছুর ইবাদাত ত্যাগ করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ﴾ [النحل: ٣٦]

‘‘আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন রাসূলকে প্রেরণ করেছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাগুতকে পরিহার করবে।’’ (সূরা আন-নাহল: ৩৬)

প্রত্যেক রাসূলই তার জাতিকে প্রথমে এ কথা বলে সম্বোধন করেছিলেন যে, ﴿

ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ ٥٩ ﴾ [الاعراف: ٥٨]

‘‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই।’’ (সূরা আল-আ’রাফ: ৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫) এ কথাটি বলেছিলেন নূহ, হুদ, সালেহ, শু‘আইব এবং সকল নবীগণ (আল্লাহ তাঁদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) তাঁদের নিজ নিজ জাতির উদ্দেশ্যে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াতের পর তের বছর ধরে মানুষকে তাওহীদের প্রতি ও আকীদার সংশোধনের প্রতি আহ্বান জানাতে থাকলেন। কেননা আকীদাই হচ্ছে ঐ মূলভিত্তি যার উপর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপিত। আর প্রত্যেক যুগেই দা‘ঈ-ইলাল্লাহ ও সংস্কারকগণ নবী ও রাসূলগণের সে আদর্শের অনুসারী ছিলেন। তাঁরা তাওহীদের প্রতি ও আকীদা সংশোধনের প্রতি আহ্বান করার মাধ্যমেই তাঁদের কাজ শুরু করেছিলেন। এরপর তাঁরা দ্বীনের অন্যান্য নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের দিকে মনোনিবেশ করেন।

Part# 1

তাওহীদ পরিচিতি, ড. সালিহ ইবন ফাওযান ইবন আবদুল্লাহ আল-ফাওযান

অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

বিষয়: বিবিধ

১০২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File