আক্রোশ (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত প্রদীপ ২৭ জুলাই, ২০১৪, ১২:৫২:৩৪ রাত
আগের পর্ব
৮
চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে রহিমা বলল, আয়শাপু রোজার শেষে অনেক দিন পর কমন রুমের চা টা খেলাম। এই চায়ে একটা চুমুক দিলেই সব ক্লান্তি উধাও হয়ে যায়। কি অদ্ভুত!
আয়শা একটু মাথা ঝাকিয়ে বলল, সারাদিন ক্লাস, ল্যাব এই সেই কাজ শেষে আমরা এই চা খেতে দৌড়ে কেন আসি বলতো?
রহিমা একটু ভাবতে ভাবতে বলল, 'অসাধারণ একটা চায়ের মাধ্যমে একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য?'
- 'হুম্ম। এই চা টা আসলে কিন্তু তেমন আহামরি কিছু না। আমাদের ক্লান্তির সময় এর উপস্থিতি এটাকে আরও অসাধারণ করে তোলে। আমাদের সকল ক্লান্তি এক নিমিষে দূর হয়ে যায়। আমার মনে হয় আমাদের এমন একজন মানুষ হওয়া দরকার, যে এই চায়ের মত অন্যের কষ্ট আর হতাশা গুলো এক নিমিষে দূর করে দিতে পারে। শত কষ্টে হাল ধরে হাসি মুখে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।' আয়শার এ কথা অনেক মুল্যবান ও চরম সত্যি হলেও আয়শা জানে না সে নিজেই একটু পর এ কথাটা ভুলে যাবে।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। আয়শা রহিমাকে নিয়ে জানালার পাশে যেয়ে বসলো। হালকা বৃষ্টি দুইজনকে একটু একটু করে ছুঁয়ে যাচ্ছে। রহিমা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, আপু লাইফটা এত কঠিন কেন? একটু ভালো হয়ে থাকতে চাইলেই কষ্ট পেতে হয়। আমরা এত্ত গুলা মাদরাসার স্টুডেন্ট এ ভার্সিটিতে পড়ি এটা ঠিক। কিন্তু সেটাতো আমাদের নিজেদের যোগ্যতায়। এই অজিত শাওনরা দিনের পর দিন আমাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের এ অবস্থানটাতো সম্পূর্ণ আমাদের যোগ্যতায়। এখনও অজিত শাওনরা আমাদের পিছনে লেগে আছে কেন বুঝি না! আজকে ভাইভা বোর্ডে আমাদের সাথে কি ব্যবহারটাই না করলো! আমরা এত শক্ত ছিলাম, অথচ কোন লাভ হইলো? যেই লাউ সেই কদু। আর কোন দিন আমি কোন কিছুতেই প্রটেস্ট করতে যাব না।
আয়শা রহিমার হাত ধরে বলল, আপি, হেদায়াতের মালিক আল্লাহ। কারো হেদায়াত হলো কি হলো না এটা ভেবে সময় নষ্ট করো না। ভালোভাবে চিন্তা করে প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে যেখানে যতটুকু বলার বলে যাবা। আর- আল্লাহ কখন, কাকে, কিভাবে হেদায়েত দেন তা কি আমরা জানি! আমাদের দায়িত্ব আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পালন করে যাব ইন শা আল্লাহ। আর দেখবা আজকে আমরা যদি ভালো মত কিছু প্রটেস্ট করি হয়তো অনেক অপমান-লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হবে। কিন্তু আমাদের পরবর্তীতে ঠিক এ জায়গায়ই হয়তো আরও যেই ছোট আপুরা আসবে ওদের পথটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর, আমরা ভুল করলে হয়তো ওই নতুন আপুদের আরও বেশী কষ্ট করতে হবে। তবে আমরা যাই করি প্রজ্ঞার সাথে ধৈর্য্য ধরে করতে হবে। আর সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।
কিছুক্ষন চুপ থেকে আয়শা আবার বলল, তুমি ঠিকই বলছ। ইদানিং খুব বেশী বিরক্ত লাগতেছে। লাভ আছে এত্ত কথা বলে! কিছু কিছু জিনিস ছাড় দিয়ে সহ্য করে যাওয়াই মে বি ভালো। কেউ কি আর চেঞ্জ হয়! প্রত্যেকেই নিজের মত লজিক দিয়েই চলে। আর ভালো লাগতেছে না।
৯.
স্যার! গাড়ির গ্লাস উঠায় দিমু? ভিজ্যা যাইতাছেন তো!
স্যার!
“হুম? না থাক।” অজিত শাওনের উত্তরে ড্রাইভার অবাক হয়ে পেছনে ফিরে আবার গাড়ি চালান শুরু করলো। বিড়বিড় করে বলল, বড়লোক মাইনসের একেক দিন একেক খেয়াল।
বাইরের বৃষ্টির সাথে সাথে অজিত শাওনের মনেও প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। খালি মনে হচ্ছে, এত দিন কেন আমি এমন ভ্রান্ত পথে চললাম! যুক্তি-তর্ক করার জন্য কত কুরআন পড়েছি, কত আয়াত মুখস্থ করেছি। কিন্তু ভাইভা বোর্ডে হঠাৎ একটা কুরআনের আয়াত বলতে বললে সেই আয়াত আমাকে এভাবে নাড়া দিল। মেয়েটা একটা আয়াত বলে বুঝিয়ে দিল, আমি কতটা পিছিয়ে আছি! আসলেইতো কয়দিন আর বাঁচব! নিজেকে সম্পূর্ণরুপে মহান প্রভুর দিকে নিবেদন করলেই আসল শান্তি পাওয়া যাবে।
অজিত শাওন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সব পাপ মুছে ফেলতে চাচ্ছেন। তিনি তার বাসার যতই কাছে যাচ্ছেন, তার মনে প্রতিজ্ঞা ও অনুশোচনার ভার ঠিক ততটাই বাড়ছে। আর তার কানে বাজছে রহিমার বলা একটি কুরআনের আয়াত-
My Prayers, My Rituals, My life, and My Death are for Allah, Lord of all the Worlds. He has No Partner. This I am commanded, and I am the first of those who surrender" (Al-An'Am: 162, 163).
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৬ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link
- এতে পোস্টদাতা মনে করতে পারে যে আপনি উনার লেখাটা না পড়ে নিজেরটার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
- কিংবা মনে করতে পারে উনার লেখাটা মানসম্মত হয় নাই, তাই আপনার মতো সিনিয়র ব্লগাররা পোস্টের সমালোচনা অথবা প্রশংসা করার প্রয়োজনবোধ করলেন না।
এতে ব্লগার নিরুৎসাহিত হবে - আমার ধারনা।
আর যদি কোন ব্লগারের এমন ধারনা আসে, উনি হয়তো আপনার পোস্টও পড়তে যাবে না। সুতরাং আপনার দাওয়াতি কাজটা যতটুকু প্রচার/প্রসার পাবার কথা ছিলো তা থেকে কিছুটা হ্রাস পেলো আপনারই একলাইন লেখার অভাবের কারনে।
মনে কষ্ট নিয়েন না..... আল্লাহ'র ওয়াস্তে। অপ্রাসঙ্গিক মনে হলে আপনার ছেলে মনে করে ক্ষমা করে দেবেন।
এবং অনেক ভালো লেখার মন্তব্য করার সাহস পাই না । আপনি শুধু হারিকেন দিয়া দিয়া উজানের কই মাছের মত দোষ খুজেন কেন ।দাদী হইছি না এখন তো আবার ছোট বেলার মত হয়ে যাচ্ছে বুদ্ধি । তাই সবাই ক্ষমাপার্থী।
দোষ খোঁজা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা। আপনাকে সবাই উন্নত মানের লেখক ও সিনিয়র ব্লগার হিসেবে চেনে। তাই আপনার পক্ষথেকে পোস্ট রিলেটেড্ মন্তব্য প্রত্যাশা করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আপনার মন্তব্য পড়ে অনেকেই আপনার পোস্ট পড়তে যাবে আপনার ব্লগে। তাই পোস্ট-রিলেটেড গঠনমুলক মন্তব্য করলে-
- আপনার প্রতি অন্য ব্লগারের শ্রদ্ধাও বেড়ে যাবে,
- আপনার কারনে পোস্টদাতা উৎসাহ পাবে।
- আপনার পোস্টেরও পাঠক বৃদ্ধি পাবে।
ভুল বল্লে ক্ষমা করবেন
কত পর্ব?
"আপি, হেদায়াতের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ কখন, কাকে, কিভাবে হেদায়েত দেন তা কি আমরা জানি! আমাদের দায়িত্ব আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পালন করে যাব ইনশা আল্লাহ।"- হ্যাঁ এটা ছাড়া আমাদের আর অন্য কোনও উপায় নেই। সেই সাথে নিজেদের মজবুত করে রশিটা ধরে রাখতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে।
আমার জন্য দোআ করবেন, কেমন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন