আক্রোশ (চার)
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত প্রদীপ ১৬ মার্চ, ২০১৪, ১০:৫০:৪৮ রাত
আগের পর্ব
৫
-আসসালামু আলাইকুম। আসবো?
জয়নাল স্যার তাকিয়ে বললেন, হ্যা আসো। নাম?
-আমাতুল্লাহ।
জয়নাল স্যার ও মাইন স্যার দুই একটা প্রশ্ন করে অজিত স্যারকে প্রশ্ন করতে বললেন। অজিত স্যার চশমাটা নাকের ডগা থেকে চোখের দিকে ঠেলতে ঠেলতে জিজ্ঞেস করলেনঃ ১০৬ নাম্বার কোর্সের নাম বলো?
-থিওরি অ্যান্ড প্রিন্সিপাল অফ সোশিয়লজি।
- কোন বই পড়েছ এই কোর্সের জন্য?
- টেক্সট হিসেবে শঙ্কর রাওয়ের বই পড়েছি।
-সামাজিক স্তরবিন্যাস কি জানোতো?
- জী স্যার।
- ওকে। এক কথায় একটা সংজ্ঞা দাওতো।
- যে প্রক্রিয়া দ্বারা সমাজের ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী আভিজাত্যের দিক থেকে স্থায়ী ভাবে উঁচু ও নিচু স্তরে বিভক্ত।
- ইসলামে কি সমাজে এ ধরনের উঁচু নিচু স্তরবিন্যাস সাপোর্ট করে?
- জী না স্যার।
- শিওর?
- জী স্যার।
- কিন্তু আমি যদি ইসলামের ইতিহাসে খুব ধর্মপ্রাণ কোন মানুষের এ ধরনের সাপোর্ট দেখাতে পারি? ইসলামের ভুল বের করতে পারি;
- স্যার, মানুষ মাত্রই ভুল। যদি তার কোন ব্যাপার ধর্মের রুলসের বিপরীতে চলে যায় তাহলে সেটার জন্য সে দায়ী; ইসলাম না।
৬
আমাতুল্লাহ অজিত শাওনকে বুঝার চেষ্টা করছে। তার মুখে সূক্ষ্ম হাসিটার অর্থ বের করতে পারছে না। মনে হচ্ছে তিনি কেমন যেন একটা প্ল্যান অনুযায়ী এগুচ্ছেন।
অজিত স্যার সামনের দিকে একটু ঝুঁকে বললেনঃ তার মানে মুসলমানরা সব সময় ধর্মের রুলস পালন করে না। আবার কেউ কেউ না বুঝেই নিজেকে বড় ইসলামিষ্ট মনে করে। কি বলো?
আমাতুল্লাহকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অজিত স্যার খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা! তুমি কি বিবাহিত?
আমাতুল্লাহ না বোধক মাথা নাড়ানো দেখে তিনি অবাক-ই হলেন। বললেন- তাহলে? তুমি কেন পর্দা কর? তোমাকে কে বলেছে এভাবে নিজেকে ঢেকে রাখতে? তোমার মা?
আমাতুল্লাহ স্নিগ্ধ স্বরে বললঃ আমার মহান প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশে...
অজিত স্যার আমাতুল্লাহকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে একরাশ তাচ্ছিল্য নিয়ে বললেনঃ আল্লাহ বলেছে তোমাকে! কবে? কখন বলল?
আমতুল্লাহ দৃঢ় কণ্ঠে বললঃ জী স্যার! পর্দা করা সকল নর-নারীর উপর ফরজ। আর, আল্লাহ অবশ্যই বলেছেন। সুরা আহজাবের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ
"হে নবী ! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও বিশ্বাসী নারীদের বলো তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে কেউ উত্যক্ত করবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
অজিত স্যার ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললেনঃ আর তুমি যে মুখের উপর এটা দিয়ে রেখেছ! এটাও কি তোমাকে আল্লাহ বলেছে? এটাও কি ফরজ? স্যার একটু থেমে বললেনঃ আমি জানি এর উত্তর তোমার কাছে নেই।
আমাতুল্লাহ অজিত স্যারের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বললঃ স্যার, নেকাব ফরজ কিনা তা নিয়ে স্কলারদের মতভেদ আছে। অনেক স্কলারই এই নেকাবকে ফরজ মনে করেন। আর এই নেকাব আমি মন থেকে ভালোবাসি। কারণ, আমি এর মাধ্যমে আমার মর্যাদা, আমার আত্নিক প্রশান্তি, আমার নিরাপত্তা খুঁজে পাই। অজিত স্যার এবং আমাতুল্লাহ দুইজনেই হয়তো আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সায়মা ম্যাম বলে উঠলেনঃ হ্যা মেয়ে! এবার তুমি যেতে পারো।
পরের পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লিখতে থাকুন ভাইয়া/আপু।
মন্তব্য করতে লগইন করুন