আক্রোশ (এক)
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত প্রদীপ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:৩১:৩৩ রাত
১
অজিত স্যার কিছুক্ষণ আগেই বাসা থেকে বের হয়েছেন। তিনি সাধারণত এগারোটার আগে বাসা থেকে বের হন না। ক্লাস গুলো এগারোটার পরেই নেন। আজ এক ভার্সিটির এক্সটারনাল হওয়ায় বের হতে হলো। ভালোই দূরের পথ। অজিত স্যার তার কালো স্টেশন ওয়াগন গাড়ি-ই ব্যবহার করেন। কিন্তু আজ ছোট ছেলের মারুতিটা গ্যারেজে পাঠানোর কারণে তার গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। কি আর করা; তিনি মাইক্রো নিয়েই রওনা দিয়েছেন। জ্যামে পরলে অজিত স্যারের খুব রাগ হয়। মনে হয় রাস্তার সবাইকে শাস্তি দেন। কিন্তু দিতে পারেন না। রাস্তার সবাইতো আর তার ছাত্র না। তবে আজ অজিত স্যার একটুও বিরক্ত নন। তিনি কাল রাতে তার দাদাকে স্বপ্ন দেখেছেন। তার চিন্তা জুড়ে শুধুই দাদার কথা। তিনি যখন ক্লাস এইটে পড়েন, তখন তার দাদা মারা যায়। দাদা খুব ধর্ম- কর্ম না করলেও প্রায়ই মারা যাওয়া, কবর এইসব নিয়ে বলতেন। তার নামটা দাদারই দেয়া। অজিত স্যারের জন্মের সময় তার দাদা তাকে কোলে নিয়ে বলেছিলেন, "আমার নাতি কোনদিনও কারো কাছে পরাজিত হইব না। শাওনের বৃষ্টিতেও ওর চোখ ভিজবনা। ওর নাম রাখলাম অজিত শাওন। কবরে যাইয়া দূর থেকা আমার নাতিরে দেখুম আর হাসুম।" এই ঘটনা অজিত স্যার অনেক বার শুনেছেন। তিনি ভাবছেন, আর যাই হোক তিনি পরাজিত কেউ নন। ছোটবেলায় তার দাদা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতো। এখন তো তিনি সমাজে একজন অতি পরিচিত মানুষ। অজিত স্যার বর্তমানে একটি নামকরা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রায়ই অনেক চ্যানেলের টকশোতে তার ডাক পরে। সবাই অজিত শাওন নাম শুনলেই চিনে। তার দাদা কি তাকে দেখে হাসতে পারছে?
২
অজিত স্যার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। তার জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছিল, এখনই ভাইভা শুরু হবে। ভাইভা হচ্ছে ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান সায়মা ম্যামের রুমে। সাথে মাইন স্যার এবং জয়নাল স্যারও আছেন। অজিত স্যার হাসি মুখে শিক্ষার্থীদের টুকটাক প্রশ্ন করছেন। বেশিরভাগ প্রশ্নই বাকি তিন ইন্টারনাল করছেন। তিনি ছাত্রদের দেখছেন আর ভাবছেন, এরাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। এ কথা ভাবতে ভাবতেই তিনি সামনে বসা ছাত্রকে বললেনঃ 'এবার বল, তুমি তোমার দেশকে নিয়ে কি স্বপ্ন দ্যাখো?' সামনে বসা ছাত্রের উত্তর অজিত স্যারের খুব পছন্দ হল। প্রশ্ন শেষ করতে করতেই কি চমৎকার উত্তর! এতটুকু ছেলে কত সুন্দর চিন্তা করে। এই ছেলে দেশটাকে উন্নতির শিখরে দেখতে চায়। দেখতে চায় একটি সুন্দর, নিরাপদ, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
অজিত স্যার বললেন, 'তুমিতো অনেক পড়েছ। ভালোই জানো মনে হচ্ছে। এবার তুমি আস।' অজিত স্যারও অনেক কিছু জানেন, অনেক কিছু বুঝেন। তবুও তিনি ধরতেই পারলেন না, ছেলেটা টক শো দেখে দেখে তারই কথাগুলো তাকে মুখস্থ শুনিয়ে গেল। অজিত স্যার ভাবছেন আমাদের আর দেশ নিয়ে ভাবনা কি ওরা তো আছেই। হঠাৎ অজিত স্যারের ভ্রু কুচকে গেল। তিনি দেখলেন সাদা পাঞ্জাবী পরা মুখ ভর্তি দাড়ি নিয়ে একটা ছেলে রুমে ঢুকে লম্বা এক সালাম দিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, নাম কি? ছেলেটি মুচকি হেসে বলল, সাইফুল্লাহ। (চলবে ইন শা আল্লাহ্)
পরের পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১৫১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন