সন্দেহ, অবিশ্বাস, অভিযোগ রিপোটিংয়ের ভিত্তি হতে পারে না
লিখেছেন লিখেছেন বাঙালী তীরন্দাজ ০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:১৯:৩৩ রাত
মুসা ইব্রাহীমকে নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। বলা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত মুসা এভারেস্ট চূড়া ছুঁতে পারেনি। মুসা প্রতারণা করেছে। সব ফটোশপের কারসাজি। এই বিতর্কে যে কারো মন খারাপ হবে। আমারও হয়েছে। প্রথম এভারেস্ট ছোঁয়ায় যাকে আমরা জাতীয় বীর ভাবতাম তার এমন প্রতারণার খবরে আমরা অনেক ছোট হয়ে যাই। মুসা এভারেস্টে গিয়েছে চার বছর আগে। তখন থেকেই পর্বত আরোহী কেউ কেউ মুসার এভারেস্ট জয়কে সন্দেহের চোখে দেখছেন। এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। সন্দেহ, অভিযোগ আর অবিশ্বাস যে কারো যে কোনো ইস্যুতে করতে পারে। প্রমাণ থাকলে সেটি গ্রহণযোগ্যতাও পেতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্ন সাংবাদিকতায় এই সন্দেহ, অভিযোগ আর অবিশ্বাসের মূল্য কোথায়? এটাতো রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়। প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ। আমরা কেন চার বছর পর এই বিতর্কটি উসকে দেবার সময় সবদিক বিবেচনায় নিলাম না।
আমরা এখন টিভি রিপোটিং-এর নামে যা করছি তার অনেক কিছুতেই আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। অনেক কিছু মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিকতার ন্যূনতম ব্যাকরণ না মেনে অনেক সময় আমরা যা ইচ্ছা তাই করি। এসব নিয়ে পরে এক সময় লেখার ইচ্ছা আছে। আপাতত লিখছি একাত্তর টিভিতে মুসাকে নিয়ে প্রচারিত রিপোর্টটি নিয়ে। রিপোর্টটি বেশ চমক জাগানো। অনেকটা ব্রেক করা নিউজ। চার বছর পর এভারেস্ট বিজয়ীদের একটা তালিকার খবর দিয়ে বলা হচ্ছে মুসা ইব্রাহীমের নাম সেখানে নেই। একাত্তর খবরটি প্রচারের পর অনলাইন নিউজ আর পরদিনের পত্রিকা খবরটি একাত্তরের বরাতে ছাপতে থাকল। আর খবর ছড়িয়ে পড়ল মুসা প্রতারক।
সন্দেহ নেই যে কোনো সাংবাদিকের জন্যে এটা খুবই সংবেদনশীল একটা প্রতিবেদন। অনেক আগপাছ বিবেচনা করে সঠিক সংবাদটি পরিবেশন করতে এক্ষেত্রে প্রতিবেদককে যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখাতে হয়। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে কি দেখলাম। কিছু সন্দেহ, কিছু অবিশ্বাস আর কিছু অভিযোগ দিয়ে মুসার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আর কৌশলে এক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গত বছরের মে মাসে প্রকাশিত নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের স্মরণিকাকে। বলা হচ্ছে, ঐ স্মরণিকায় মুসার নাম না থাকা, সে যে এভারেস্ট বিজয় করেনি তার বড় প্রমাণ। মজার বিষয় হলো, ঐ তালিকায় মুসার প্রতিপক্ষ মুহিতেরও ২০১১ সালে এভারেস্ট বিজয়ের নাম নাই। প্রতিবেদকই এই তথ্যটি জানালেন এবং এও বললেন মুহিতের নাম না থাকাটা নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের একটা ভুল। এটি মুহিতের সাথে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে তবে কি মুসার নামও ভুল করে বাদ পড়ল? এক্ষেত্র প্রতিবেদক জানাচ্ছেন নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে তিনি ফোনে আর ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয় নাই। ৮ মাস এজন্যে সময় নিয়েছেন তিনি। রিপোর্টটিকে এই সময় নেয়াটা জরুরি এবং সংগত। এখানে তাড়াহুড়ার কোনো সুযোগ নাই। যেহেতু নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন তাদের স্মরণিকায় একটি ভুল করেছে, তারা আরেকটি ভুল করতে পারে। প্রতিবেদকের উচিত ছিল আরও সময় নেয়া, প্রয়োজনে নেপাল চলে যাওয়া। নেপাল খুব দূরের দেশ নয়। প্রতিবেদক এখানে এসে অহেতুক তাড়াহুড়া করলেন। সময় নিলেন না। আর যার ফলে প্রমাণও করতে পারলেন না নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের স্মরণিকা, ভুল নাকি সঠিক তথ্য দিলো। প্রতিবেদনটি দেখে মনে হবে, প্রদিতবেদকের মনে এ নিয়ে একটুও সন্দেহ নাই। তিনি ধরেই নিয়েছেন নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েসনের স্মরণিকা ভুল করতে পারে না। প্রতারণা আমাদের ঘরের ছেলে মুসাই করে থাকতে পারে। আর এর ফলে প্রমাণ কিছু হল না, বিতর্ক ঠিকই উসকে উঠল। তবে এখন যদি নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন ভুল স্বীকার করে মুহিতের মতো মুসার নাম অন্তর্ভুক্তি করে ক্ষমা চায়, তাহলে একাত্তরের এ রির্পোটিংয়ের কি মানে দাঁড়াবে? আর তার চেয়েও বড় কথা, এ রির্পোটির ফলে ব্যক্তি মুসা ও জাতীয় মুসার যে ক্ষতি হলো, তাই বা কীভাবে পূরণ হবে? প্রতিবেদনে যখন বিতর্ক তোলা হয় তখন সবটুকু তথ্য প্রতিবেদককেই প্রমাণ করতে হয়। শুধুমাত্র সন্দেহ, অবিশ্বাস আর অভিযোগ কখনো রিপোটিংয়ের ভিত্তি হতে পারে না।
পরিবর্তন ডটকম
বিষয়: বিবিধ
১২৫৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন