আফগানিস্তানে বাড়ছে বেআইনি গর্ভপাত

লিখেছেন লিখেছেন বাঙালী তীরন্দাজ ০৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৫৭:২২ বিকাল

এশিয়ায় জন্মের হার সবচেয়ে বেশি যে দেশটিতে, সেই আফগানিস্তানে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এখনও ট্যাবু৷ সমাজে পরিত্যাজ্য হওয়ার ভয়ে ও অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেক নারী বেআইনিভাবে গর্ভপাত করান৷

‘‘আমি গর্ভপাতের জন্য ওষুধ খেয়েছি৷'' নীচু স্বরে বলেন লিনা৷ এতে তাঁর আফসোস নেই৷ কারণ তাঁর আর কেন উপায় ছিলনা৷

‘‘আমার স্বামীকে এক হামলার অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়৷ তার আগেই আমি গর্ভধারণ করি৷'' বলেন বছর কুড়ির এই তরুণী৷

‘‘তা না হলে আমার পরিবার লজ্জায় পড়তো৷ সবাই জিজ্ঞাসা করতো, এই বাচ্চা কীভাবে হলো?''

রক্ষণশীল সমাজে টিকে থাকা

লিনা তাঁর আসল নাম নয়৷ প্রকৃত নাম প্রকাশ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়৷ আফগানিস্তানের ছোট্ট এক জায়গায় বসবাস করেন তিনি৷ সেখানকার লোকজন অত্যন্ত রক্ষণশীল৷ স্বামী ছাড়া গর্ভধারণের কোনো গুজব হলেও মুখ দেখানোর অবস্থা থাকে না পরিবারের, হতে হয় একঘরে৷

এ ক্ষেত্রে সাধারণত মেয়েরাই হন ভুক্তভোগী৷ অনিচ্ছাকৃতভাবে সন্তান গর্ভে এলে গর্ভপাত করিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চান বহু মেয়ে৷ ‘‘আমার পরিচিত অনেক মেয়েই এই কাজটি করেছে৷ ডাক্তারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে খাওয়ার পর গর্ভের বাচ্চাটি মারা যায়৷'' বলেন লিনা৷

গর্ভপাত নিষিদ্ধ

যদিও ইসলামি প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তানে গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ ব্যতিক্রম হলো, যদি প্রসবকালে মায়ের জীবন বিপন্ন হওয়ার কিংবা বাচ্চাটির গুরুতর প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এছাড়া গর্ভপাত করালে কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে৷ এমনকি ধর্ষণ বা ইন্সেস্ট থেকে সন্তানসম্ভবা হলেও গর্ভপাত করানো যাবে না৷ বলেন পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাট শহরের একটি হাসপাতালের চিকিৎসক মালিকা পাইঘাম৷ মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে ইন্টারনাল মেডিসিনের তিন জন ডাক্তার ও একজন গাইনোকোলোজিস্ট প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার পর গর্ভপাত করান৷ এছাড়া এতে ইসলামি উলামা পরিষদ ‘শুরা উলামা'-র অনুমোদনপত্রও লাগে৷

অনেক সময় কোনো উপায় থাকে না

লিনার গর্ভপাত করাও ছিল বেআইনি৷

‘‘আমি জানি গর্ভপাত হলো সন্তানকে খুন করা৷ কিন্তু আমার তখন একটাই চিন্তা ছিল৷ হয় আত্মহত্যা করতে হবে, নয়তো বাচ্চাটিকে হত্যা করতে হবে৷''

লিনার আরো তিন সন্তান রয়েছে৷ মেয়েদের কাছ থেকে বহু সন্তান আশা করা হয়, বিশেষ করে পুত্র সন্তান৷ কেননা মনে করা হয়, ভবিষ্যতে তাঁরা পরিবারের দায়িত্ব নিতে ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারে৷ আফগানিস্তানের কঠোর রক্ষণশীল সমাজে ‘জারজ' সন্তান কল্পনাও করা যায় না৷

এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আফগানিস্তানে জন্মের হার সবচেয়ে বেশি৷ অনেক নারী কম সন্তান চাইলেও শিক্ষার অভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না তাঁরা৷ জাতিসংঘের শিশু সাহায্য সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী ৭৯ শতাংশ মেয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করেন না৷ পরিবারকে ছোট রাখার জন্য গর্ভপাতই তাদের একমাত্র ভরসা৷

জীবনের ঝুঁকিও থাকে

অন্যদিকে গর্ভপাত বেআইনি বলে গর্ভপাতের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধাত্রীদের কাছে যেতে হয় তাদের৷ এই সব ধাত্রী প্রায়ই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন৷ রক্তপাত ও জটিলতাকে আয়ত্তে আনতে পারেননা তাঁরা৷ জানান আফগানিস্তানের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র আডেলা মুবাশের৷

অনেক নারী আবার বেসরকারি হাসপাতালে যান গর্ভপাতের জন্য৷ সেখানে খরচও অনেক বেশি৷ বিয়ের আগে যে সব তরুণী অবাঞ্ছিতভাবে গর্ভধারণ করে, তাদের গর্ভপাতের জন্য এই সব হাসপাতালের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া অনেক সময় গতি থাকে না৷ জানান এক বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি৷

অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একটি সুষ্ঠু স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি আফগানিস্তানে৷ গত দশ বছরে মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পেলেও সারা বিশ্বে এখনও তা সর্বোচ্চ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানে প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন নারী গর্ভকালীন জটিলতার কারণে মারা যান৷

প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও কর্মীর অভাব

ডক্টর্স উইদাউট বডার্সের সেভেরিন কালুভেয়ার্টস সমালোচনা করে বলেন, ‘‘আফগানিস্তানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে৷ পুরুষ গাইনোকোলজিস্টকে দেখাতে চান না মেয়েরা৷ অন্যদিকে নারী ডাক্তার রয়েছেন খুব কমই৷''

সেভেরিন কালুভেয়ার্টস ও তাঁর সহকর্মীরা এ ব্যাপারে শিক্ষাদানের ওপর গুরুত্ব দেন৷ ‘‘আমরা মেয়েদের স্বাস্থ্য ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকি৷ কেননা আমরা জানি এতে করে মা ও শিশুর জীবন রক্ষা হতে পারে৷''

আজ লিনাও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন৷ তাঁর দাবি, সমাজের এই সমস্যার ব্যাপারে আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে৷ তিনি আশা করেন, ‘‘দেশের গণমাধ্যম ও ইসলামি কর্তৃপক্ষ জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আরো সোচ্চার হবেন৷ সমাজের ট্যাবুর কারণে এতো গর্ভপাত আর ঘটবে না৷''

সূত্র : ডিডব্লিউডিই

বিষয়: বিবিধ

১১৬৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

202165
০৩ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩২
ফেরারী মন লিখেছেন : তালেবানিরা তাহলে আকাম কুকামও শুরুছে মনে হচ্ছে।
০৩ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
151751
বাঙালী তীরন্দাজ লিখেছেন : হয়তো এরকম কিছুই!!!@ ফেরারী মন
202181
০৩ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৪
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : এটা সব দেশেই কমবেশী আছে। আমাদের দেশ যে ধোয়া তুলসি পাতা সেটা ভাবলে চলবে না।
202192
০৩ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
বিন হারুন লিখেছেন : ওরা এমন এক ভাইরাস, যারা মুসলিম দেশে ঢুকে ছলে-বলে-কৌশলে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে ধ্বংস করে দেয়.
202199
০৩ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সেই কুমিরেই নিয়ে যাওয়া। তালেবান! আর এরাও ঘাউরা কম না! Thinking Thinking
202292
০৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:০৮
সমালোচক লিখেছেন : স্পষ্ট মনে পড়ে - মার্কিনীরা আফগানিস্থান দখলের পর প্রথম দিকেই তালেবানদের মনোজগতে পরিবর্তন (জাতে উঠানো ?) আনার জন্য (তাদের পরিভাষায়- Attitude Adjustment - যুদ্ধের ভয়াবহতা ভুলিয়ে দেয়ার নিমিত্তে) তাদের স্ট্র্যাটেজিক মিত্র দেশ ভারতকে দিয়ে অর্ধনগ্ন নাচ-গানে টইটুম্বুর হিন্দী ছায়াছবির ক্যাসেট ও পোষ্টার আমদানী করিয়ে আফগানিস্থানে সয়লাব বইয়ে দেয়। ঐ "দাওয়াই” ছিলো আশাতীতভাবে দ্রুত ফলপ্রদ - কলুষ বিনোদনের পাশাপাশি একটি রক্ষণশীল সমাজে রাতারাতি ধর্ষণের মহামারী লেগে যায় ; প্রাক-বৈবাহিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকবে হয়তো !

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File