এটা কিসের সংকেত?

লিখেছেন লিখেছেন তূর্য রাসেল ০২ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৩১:২৯ রাত



অভিজিৎ মারা যাবার পর সিলেটে একটি মিছিল হয়েছে। যেখানে ইসলাম বিরোধী ফেস্টুন ব্যাবহার করা হয়েছে (ছবিতে দেখুন)। এটা কিসের সংকেন? অভিজিৎকে কে হত্যা করেছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। এমনকি কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। একটা টুইটার বার্তা কখনও ক্লু হতে পারে না। টুইটারে যে কেউ লিখতে পারে। এমনও তো হতে পারে সে কোন মুসলমানের হাতে আক্রমনের শিকার হয়নি। তাহলে তার মৃত্যুর পর ইসলামকে কেন লক্ষ্যবস্তুতে রূপান্তর করা হল? একজন প্রাকটিসিং মুসলিম এটা কিভাবে নিবে? তার হত্যার জন্য কেন একটা ধর্মকে দায়ী করা হবে? যে হত্যা করেছে সে নিশ্চয় একজন দূর্বৃত্ত, প্রতিটি সচেতন মুসলমান তাকে ঘৃনা করে, সব ধর্মের মানুষ তাকে ঘৃনা করে।

নাস্তিকতার নামে, সেকুলার চর্চার নামে যারা ইসলামকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে তারা কি মুসলমানদেরকে উস্কে দিচ্ছে না? অভিজিৎ নিজেও তার ব্লগে, ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিভিন্ন সময় ইসলামকে কটাক্ষ করেছে, ইসলামকে নিয়ে অশ্লিল কথা বলেছে। যেমন সে তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, ইসলাম এই ভূখন্ডে ঢুকেছেই নালন্দার লক্ষ লক্ষ জ্ঞানসাধককে পুড়িয়ে মেরে, মেরেই চলেছে অদ্যাবধি। আর জন্ম দিচ্ছে একেকটা মুসলমান, একেকটা উন্মত্ত কুকুর। এই পাগলা কুকুরের হাত থেকে মুক্ত হোক আমার জনমভূমি।

এভাবেই অভিজিৎসহ নাস্তিক ও সেকুলাররা ইসলামকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এটাকে কিভাবে নিবে? তারা কি কখনও এটাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে? কখনই না। সেকুলার মানেই কি ইসলামকে আক্রমন করা? বলতে গেলে বাংলাদেশে সেকুলার চর্চার নামে ইসলামের বিরোধিতা করা হয়, সেকুলার শব্দটা তারা সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যাবহার করে।

অভিজিৎ মারা যাবার পর তার ব্লগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন? যাতে তার লেখা কেউ পড়তে না পারে, কেউ যাতে জানতে না পারে কিভাবে সে ইসলামকে আক্রমন করে লিখত। হয়তো একদিন ব্লগ খোলা হবে তবে লেখাগুলো ডিলিট করে। থাবা বাবা ওরফে রাজীবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। যদিও আমরা তার তদন্তের রিপোর্ট আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি। যখন দেখা গেলো এর সাথে নারী ঘটিত ব্যাপার জড়িত তখনই তদন্ত থামিয়ে দেওয়া হল।

আজ শ্রদ্ধেয় পিনাকী ভট্টাচার্য খুব সুন্দর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আপনাদের পড়ার অনুরোধ রইলো। তিনি লিখেছেন, সকালেই একজন ফৌন করলেন, আমি নাম বলছিনা। তিনি ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতি করতেন, আমাদের সাথেই। তাঁর পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্টের পরে এই পরিবারের উপর ভয়াবহ নির্যাতন নেমে এসেছিল। তিনি আমার চাইতে গভীরভাবে মার্ক্স পাঠ করেন।

তাঁর কণ্ঠস্বরে উদ্বেগ আর হতাশা। তিনি বলছেন, “দাদা, আপনি কি দেখেছেন সিলেটে একটা মিছিল হয়েছে সেখানে ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করে আঁকা ফেস্টুন ব্যবহার করা হয়েছে? আমিও তো মুসলিম, আমাকে কেন মুসলিম হওয়ার জন্য সন্ত্রাসবাদের এই দায় বহন করতে হবে? কেন আমার ধর্মকে এর জন্য দায়ী করা হবে? আমি না হয় লেফট ব্যাকগ্রাউন্ডের আমি এটা টলারেইট করলাম, কিন্তু আরেকজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম কেন এটা টলারেইট করবে? এরা কীভাবে স্যেকুলার, যারা ক্রমাগত একটা ধর্মকে আদার বানিয়ে দিচ্ছে, উস্কে দিচ্ছে?”

এই প্রশ্নের জবাব নেই আমার কাছে। বাংলাদেশের তথাকথিত স্যেকুলারদের প্রগতিশীলতা চলে যায় যদি তাদের কথায় বা আচরণে ইসলামের বিষয়ে সহানুভুতির সুর থাকে। আমাকে সকালে যিনি ফৌন করেছিলেন তিনি সেই স্যেকুলারদের কাছে আশ্রয় পাননি। উনার বেদনার কথা জানাতে পারেননি। স্যেকুলার ইজমের পরীক্ষার উনারা বারে বারে পরাজিত হচ্ছেন।

উনারা আদর্শের কাছে নত হন, মানুষের কাছে মানবসত্তার মর্যাদার কাছে নত হন না। যারা হতে চায়, বা হওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা নিগ্রহের, উপহাসের পাত্র হন। প্রকৃত স্যেকুলার সেই যে মানুষকে ধর্মের পরিচয়ে বিচার করেনা। কারো রক্তপাতে, মর্যাদাহানিতে ক্রন্দন করতে হলে সে দেখেনা, সে হেফাজত নাকি নাস্তিক।

স্যেকুলারদের যেমন উচিত হিন্দু সম্প্রদায় আক্রান্ত হলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। ওদের মন্দির রক্ষা করা। তার মানে এই নয় যে স্যেকুলাররা মন্দিরগামী। ঠিক তেমনি মসজিদের ওপর আক্রমণ হলেও তাঁরা রক্ষা করবে। বাংলাদেশে হয়তো মসজিদের উপর আক্রমণ হবেনা, কিন্তু ধর্মের উপরে ব্ল্যাঙ্কেট অপমান হলে সেটা থেকে রক্ষা করবে কে? প্রতিবাদ করবে কে? প্রতিবাদ করলেই আমরা হয়ে যাবো মোল্লা? এটি হচ্ছে মানুষকে রক্ষা করার প্রশ্ন - মানুষের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্ন। দেবতা ভাঙ্গলে দুঃখ করি মানুষের জন্য। কারণ, এখনও মানুষটা দেবতাকে সম্মান করে। তাই দেবতা ভাঙ্গলে তার অপমান হয়। তেমনি ইসলামের অপমানেও তো দুঃখ করতে হবে। মানুষটা তো একই ভাবে তাঁর ধর্মকে সম্মান করে। একজন স্যেকুলারকেই একজন নামাজি যখন নামাজ পড়েন, তখন তাকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। কেনো? ঈশ্বরকে ভালোবেসে? না। এটি করতে হবে মানুষকে ভালোবেসে।

হে স্যেকুলার দাবি করা বন্ধুগণ। প্রকৃত স্যেকুলার হওয়া একটা নিরন্তর চর্চার বিষয়। আপনার দাবিকে নিজেই প্রতিদিন প্রশ্নের মুখে ফেলুন। নিজেই বিচার করুন মানুষের প্রতি আপনার ভালোবাসা কোথাও কম্প্রোমাইজড হচ্ছে কিনা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

306888
০২ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:২৩
কাউয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৩ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩৬
248309
তূর্য রাসেল লিখেছেন : ধন্যবাদ Winking Winking Winking
306918
০২ মার্চ ২০১৫ রাত ১১:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এটাই তাদের প্রকৃত চরিত্র!
০৩ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩৫
248306
তূর্য রাসেল লিখেছেন : Happy>- Happy>- Happy>-
306930
০৩ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:১৪
আবু জারীর লিখেছেন : হক আর বাতিলের এই দ্বন্দ্ব চিরন্তন।
306939
০৩ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:২৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৩ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩৫
248307
তূর্য রাসেল লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ Happy Happy Happy
306973
০৩ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৫:৩০
sarkar লিখেছেন : এরা কোন সে বিকৃত মানব,মানবী??নাকি ফেরাউনের প্রেতাত্তা??
307007
০৩ মার্চ ২০১৫ সকাল ১০:২২
হতভাগা লিখেছেন : খিঁচুড়ি বা বিরিয়ানী খাবার লোভে তারা এটি করছে ।

কলেজ ইউনিভার্সিটিতেও এরা দুধ ভাত থাকে । এদেরকে বরং বড় দলগুলো পুষে একচেটিয়া কোন কিছু হচ্ছে না এটা বুঝাতে ।

এদের অনেক যুক্তি ও বুঝাবার শক্তি । মানুষ এদের কথায় ভালই প্রভাবিত হয় । কিন্তু ভোটের বেলায় এরা নিজেরাও নিজেদেরকে ভোট দেয় কি না সন্দেহ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File