এক নজরে সাইদীর রায়ের A to Z; গণজাগরণ মঞ্চ এবং সাধারণ মানুষ, কে কি ভাবছে?

লিখেছেন লিখেছেন তূর্য রাসেল ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:৩৮:২৫ সন্ধ্যা

আজ মাওলানা সাইদীর ফাঁসির রায় বাতিল করে যাবৎজীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। এই রায়ে দুই পক্ষই অসন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেছে। সাইদী ভক্তরা মনে করছে এটি একটি প্রহসনের রায়, তার খালাস পাওয়া উচিত ছিল। অপরপক্ষে অর্থাৎ গণজাগরণ মঞ্চ মনে করছে এটি সরকারের সাথে জামায়াতের আঁতাতের ফল। আবার বিএনপিও এমন ধারণা করছে। বিএনপির ভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা ফাঁসি কামনা করেছিল। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ মনে করছে সাইদী নির্দোষ। তাদের প্রশ্ন সুখরঞ্জন বালী ভারতের কারাগারে কেন ? যে দুইজনকে হত্যার অভিযোগে সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে তারা ছিলেন-বিশাবালী এবং ইব্রাহিম কুট্টি । সেই বিশাবালীর আপন ভাই সুখরঞ্জন বালী সাঈদীর 'পক্ষে' সাক্ষ্যদিতে এলে ২০১২ সালের ৫ই নভেম্বর তাকে আদালত চত্বর থেকে অপহরণ করে সরকার পক্ষ । পরে নিউ এজ পত্রিকার অনুসন্ধানে তাকে ভারতের দমদমা কারাগারে পাওয়া যায়

। গুমহওয়ার আগে সুখরঞ্জন বালি বলেন তার ভাইয়ের হত্যায় আল্লামা সাঈদী জড়িত ছিলেননা। সাধারণ মানুষ এও প্রশ্ন করছেন ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় কোথাও সাঈদীর নাম নেই কেন? কারণ পাকি বাহিনীর হাতে নিহত ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী ১৯৭২ সালে একটি হত্যা মামলা করেন পিরোজপুর আদালতে । সেই মামলার কোথাও সাঈদীর নাম ছিল না । আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্টের বরাতে পত্রিকার সংবাদ । উল্টো বর্তমান পিরোজপুরের ওলামা লীগনেতা মোসলেম মওলানারনাম রয়েছে। তারা আরও প্রশ্ন করছেন দেলু শিকদার আর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একই লোক হলে দুইজনের বাপ আলাদা (রসুল শিকদার ওইউসুফ সাঈদী) হলো কীভাবে ?

এইদিকে রায় ঘোষণার পরেই শাহবাগ চত্তরে প্রায় ৫০-৬০ জন গণজাগরণ কর্মী বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ বিক্ষোভে বাধা দিলে সামান্য হাতাহাতি হয়। পুলিশ জলকামান নিক্ষেপ করে। এতে গণজাগরণ মঞ্চের কিছু কর্মী আহত হয়। ইমরান সরকারসহ কয়েকজন কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তী করা হয়। উল্লেখ্য এই গণজাগরণ মঞ্চকে এক সময় সরকার প্রত্যক্ষ সহযোগীতা করেছিল। সরকারের কোন কোন মন্ত্রী এই মঞ্চে যোগ দিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এই মঞ্চে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

আমরা যদি একটু পিছনে ফিরে দেখি তবে দেখতে পাই পূর্বে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন হয়। এর মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত আটটি অভিযোগের দু’টি হত্যার অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আদেশ দেয়ার কারণে বাকি ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাতে কোনো শাস্তির কথা উল্লেখ করেননি ট্রাইব্যুনাল। বাকি যে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ধর্মান্তরকরণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও অপহরণ।

যে দুই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় তার মধ্যে আট নং অভিযোগে বলা হয় ১৯৭১ সালের ৮ মে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে পাকিস্তান আর্মি এবং শান্তি কমিটির লোকজন চিথলিয়া গ্রামে মানিক পসারীর বাড়ি লুট করে। মানিক পসারীর বাড়ি থেকে ইব্রাহিম কুট্টি ও মফিজুল নামে দু’জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পাড়েরহাট বাজারে। তারা ওই বাড়িতে কাজ করতেন। পাড়েরহাট বাজারে নেয়ার পর মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পাকিস্তান আর্মি ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে হত্যা করে।

১০ নং যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে চার্জ ফ্রেমিং অর্ডারে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৬ জুন সকাল ১০টায় উমেদপুর গ্রামে সাঈদীর নেতৃত্বে ২৫টি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় সাঈদীর নির্দেশে বিশাবালী নামে একজনকে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে হত্যা করা হয়।

আপিল শুনানির সময় ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ে আসামি পক্ষ তাদের যুক্তিতে বলেছেন, ইব্রাহিম কুট্টি ১৯৭১ সালে ৮ মে তার শ্বশুরবাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে মামলা করেন ১৩ জনকে আসামি করে, তাতে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। মমতাজ বেগম এখনো জীবিত আছেন।

বর্তমানে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ৭ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ বছর এবং ৮ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে ১২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

অধিকাংশ বিচারকদের মতামতের ভিত্তিতে ৬, ১১ এবং ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ড থেকে ১২ বছর কারাদণ্ড

ট্রাইব্যুনাল বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও ৮ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ৮ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ মে বেলা ৩টায় সাঈদীর নেতৃত্বে তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় সদর থানার চিতলিয়া গ্রামের মানিক পসারির বাড়িতে হানা দিয়ে তার ভাই মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহিমকেসহ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচটি বাড়িতে কেরসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সেনা ক্যাম্পে ফেরার পথে সাঈদীর প্ররোচণায় ইব্রাহিমকে হত্যা করে লাশ ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়া হয়। আর মফিজকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে সাঈদী ও অন্যদের আগুনে পারেরহাট বন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় সাঈদী সরাসরি অপহরণ, খুন, যন্ত্রণাদানের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিল, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(২)(এ) ধারা অনুসারে অপরাধ। এ অভিযোগে আপিল বিভাগ সাঈদীকে ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।

প্রামাণিত অভিযোগ থেকে খালাস

অভিযোগ-৬: ৭ মে সাঈদীর নেতৃত্বে একদল শান্তি কমিটির সদস্য পিরোজপুর সদরের পারেরহাটে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওই এলাকায় স্বাগত জানান। তাদেরকে পারেরহাট বাজারে নিয়ে এসে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের বাড়িঘর ও দোকান পাট চিনিয়ে দেন সাঈদী। পরে সাঈদী অন্যান্যদের সঙ্গে এ সকল বাড়ি ও দোকানে হানা দিয়ে মূল্যবান সম্পদ লুট করে। যার মধ্যে সেখানে মুকুন্দ লাল সাহার দোকান থেকে বাইশ সের স্বর্ণ ও রৌপ্য লুট করেন সাঈদী।রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে সংগঠিত এসব কার্যক্রম মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যা আইনের ৩(২)(এ) ধারায় শাস্তিযোগ্য। এ অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন সাঈদী। তবে এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও শাস্তি দেয়া হয়নি।

অভিযোগ-১১: ২ জুন সাঈদীর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ইন্দুরকানি থানার টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে যান। সেখানে সাঈদী তার বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করেন। এরপর সাঈদী নগদ টাকা, অলঙ্কারাদি ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে যান। এমন অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

অভিযোগ-১৪: মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় যায়। রাজাকারদের আগমন দেখে গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু নারী পালিয়ে যান। কিন্তু মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তখন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তাকে ধর্ষণ করেন। এর ফলে স্বাধীনতার পর তিনি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এ নিয়ে গ্রামে বিভিন্ন কথা ওঠায় শেফালী ঘরামী দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন। পরে এই হিন্দুপাড়ার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এই অভিযোগ থেকেও সাঈদীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১২৬০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266235
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:০২
কাহাফ লিখেছেন : এই জুলুমের বিচার শুধু আল্লাহর কাছে দিয়েই দায় মুক্তি ঘটবে না,সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে এ অন্যায়ের বিহিত করতে সবাই কে এগিয়ে আসতে হবে.......।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File