গল্প:- //মা তুমি এত ভাল কেন?//
লিখেছেন লিখেছেন তারমিহিম আসফিম ০১ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫৬:৩৪ সকাল
মা আমার কিছু টাকা লাগবে?
কলেজ থেকে ফিরে বলল লিখন!!
-কত টাকা বাবা?
-এই তো 500টাকা হলেই হবে?
-পাঁচ শো টাকা....
[হয়ত আমাদের কাছে পাঁচশত টাকা কোন টাকাই নয় কিন্তু লিখনের মায়ের কাছে পাঁচশত টাকা মানে অনেক কিছু ওনার কাছে পাঁচশত টাকা মানে এক মাসের বাজার খরচ]
লিখন:-দিতে পারবে না তাইতো!!
মা:-এভাবে বলছিস কেন বাবা?তুই তো জানিস ই তোর বাবা মারা যাবার পর থেকে সংসার টা কেমনকরে চলে!!!
-হয়েছে হয়েছে তোমার ক্যাসেট আর প্লে করা লাগবে না!!শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে!!খুব খিদে পেয়েছে খেতে দেওয়া যাবে না সেটাও নেই?
-তুই হাত মুখ ধুয়ে আই আমি খাবার দিচ্ছি!!
লিখন মন খারাপ করে চলে আসল,ওর নিজের উপরই নিজের রাগ হচ্ছে!!
আসলেই তো মা এই সময় টাকা কোথাই পাবে!!
ওর বাবা মারা যাবার পর থেকে ওদের সংসার টা পুরাপুরি ওর মায়ের উপর নির্ভরশীল।
শুধুমাত্র ওর লেখাপড়ার খরচ টা ওর কাকু দেই,তারপরও মাঝে মাঝে লিখন ওর মায়ের কাছে হাত পাতে!!
মাও তার সাধ্য অনুযায়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন!!
কিন্তু শুধুমাত্র দর্জির কাজ করে আর কয় টাকা হয়?
লিখনের নিজের উপর নিজেরই প্রচন্ড রাগ হয়!!
ও মায়ের থেকে টাকা না চেয়েই কি করবে ওর হাতে যে এক কানা করিও নেই!!
টিউশানির টাকাটাও অগ্রিম নিয়ে ফুরে গেছে!!
যত গোল বাধিয়েছে এই রেনু মেয়েটা!কেন যে পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে ওকে ভালবাসতে গেল?
কোনদিন লিখন রেনুকে কিছুদেই নাই,কাল ওর জন্মদিন কাল ওকে কিছু না দিলে যে ও বন্ধুদের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না!!
খাওয়া দাওয়া করে লিখন পড়ছে!!
ও মনে মনে ভাবছে মা কখন এত টাকা দিতে পারবে না!
তারমানে ও সকালে অপমানিত হবে!!
হঠাত নরম হাতের ছোয়াই লিখন পিছন ফিরে তাকাই!!
লিখন:-ও তুমি!!
মা:-আমার উপর রেগে আসিছ না রে বাবা!!
-(আনমনে) কৈ না তো?
-আমি জানি টাকা টা তোর খুব দরকার না হলে আমার থেকে চাস নাই!!
-হুমম ঠিকআছে বুঝছি,দিতে পারবা না তাইত?- যদি বলি পারব?
-মজা করছ তাইনা?
-মজা করব কেন সত্যি এই নে!!
[ওর মা একটা পাঁচশত টাকার নোট লিখনের হাতে দেই]
লিখন যেন হাতে আকাশের চাদ পেয়েছে!!ওর খুশি দেখে কে!!
-মা তুমি সো গ্রেট,অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
আচ্ছা তুমি টাকা টা কোথাই পেলে!!
-হয়েছে তোর ওইটা শুনা লাগবে না!এখন চিন্তা বাদ দিয়ে মন দিয়ে পড়!!
***
লিখন আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি!
সারারাত ওর উত্তেজনাই ঘুমই হয় নি!!
আজ যে রেনুর জন্মদিন।
তাছাড়া আজ লিখন ওকে কিছু একটা গিফট দেবে?
লিখন মার্কেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে!!
পথের মধ্যে হাটতে হাটতে লিখন ওর মাকে অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছে!! আর ভাবছে মা টা কত বোকা!
কি জন্য ওর টাকা লাগবে সেটা একটা একবারের জন্য জিজ্ঞাস করল না !!!
হঠাত পেছন থেকে লিখন বলে কেও একজন ডাক দিল ওকে!!
ও পেছন ফিরে দেখে ওর দুরসম্পর্কের বারিক কাকা।
-লিখন কোথাই যাস!!
-এই তো একটু বাজারে যাব!
-তোদের বাড়ি কিছু হয়েছে নাকি?-কৈ না তো?
-তাইলে যে তোর মা গতকাল আমাকে দিয়ে একটা নাকফুল বেচাইলো!!কৈল টাকার খুব দরকার?
-ও তাই!!
ওর কাকা চলে গেল!!কিন্তু লিখন এখন ওখানেই দাড়িয়ে আছে!!
ওর বুঝতে বাকি রইল না যে মা ওর বাবার শেষ সৃতি নাকফুল টা বেচে ওকে টাকা দিয়েছে!
ওর নিজেকে নিজের কাছে অনেক অপরাধি মনে হতে লাগল?ও কি করেছে এইটা ওর প্রেমিকার জন্য নিজের মা কে দুঃখ দিয়েছে!!
***
লিখন বাড়িতে ফিরে দেখে ওর মা ঘড়ে বসে একাএকা কাদছে!!ছেলেকে দেখে মা চোখের পানি নিয়ন্তনের বৃথা চেষ্টা করে!!
-কিরে ফিরে এলি যে বাবা।কলেজে গেলি না!
লিখন ওর মায়ের কাছে এগিয়ে যাই!!
-কি হল প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিত না কেন?কলেজ যাস নি?
লিখন নিশব্দে মাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেই!
-এই পাগল,কি হয়েছে কাদছিস কেন?আমাই বল!!..কি হল!
লিখনের মুখে কোন কথা নেই ও অঝর ধারাই কেদে চলেছে!
-কিরে তুই কি বাচ্চা ছেলে নাকি,এরম কাদছিস লোকে দেখলে কি বলবে?কি হয়েছে?
-তুমি বাবার শেষ সৃতি নাকফুল টা বেচে আমাই টাকা দিছ কেন?
-তোর লাগবে তাই!তাছাড়া ওটা তো আর কেও পরে না ঘরে পরেই ছিল!!তাই ভাবলাম...
-তাই বলে বাবার শেষ সৃতি..
-এ ছাড়া যে কুন উপাই ছিল না রে বাবা!!
আবারও লিখন ওর মা কে জরিয়ে ধরে আর বলে মা তুমি আমাই এত ভালবাস!!
আচ্ছা মা তুমি এত ভাল কেন?
মায়ের কাছে যে এই প্রশ্নের উত্তর নেই!!মা শুধু নিশব্দে চোখের জল মুছে..........
মরাল:-বাবা-মায়ের থেকে অযথা টাকা নেওয়ার আগে উনারা টাকা টা কিভাবে দিচ্ছে আর একবার ভেবে নেওয়া উচিত নয়!!!
[দাড়ান লাইক দিবেন না। যদি গল্পটি সব টা পড়ে থাকেন তবে ভাল খারাপ যায়হউক একটা মন্তব্য করুন প্লিজ? লাইক চাই না]
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন