//"ছাদ কাহিনী"//

লিখেছেন লিখেছেন তারমিহিম আসফিম ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৩৭:৫১ সন্ধ্যা

//"ছাদ কাহিনী"//

প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে ছাদে যাওয়া হয় সাজিন এর। এটা যেন দৈন্দিন রুটিন হয়ে গেছে ওর।

অবশ্য ছাদে গিয়ে কোন কাজ নেই, শুধু শুধু বসে থাকা, দুরের আকাশ দেখা, আর গৌধুলী সময় প্রাইভেট ফেরত পাড়ার মেয়েদের দেখা ছারা।

তারপরও কেন যেন খুব টানে ওই তিনতালা বাসার ছাদ টি, একলা একলা বসে আনমনে কল্পনা করতেও ভাল লাগে সাজিন এর।

সাজিনদের বাড়িটিঋ তিনটা ফ্লাট। নিচের দুইটা ভাড়া দেওয়া, আর সবার উপরেরটাইওরা পরিবার সহ থাকে।

***

প্রতিদিনের মত একটি কবিতার বই হাতে আজও ছাদে আসল সাজিন।

সে আনমনে বাসে থাকার সময় সাজিন লক্ষ করল কিছুদূর দূরে একটি বাসার ছাদে একটি মেয়ে। এদিকেই তাকিয়ে আছে মেয়েটি,

অবশ্য মেয়েটিকে সাজিন আজই প্রথম লক্ষ করল ঠিক তা নয়, এর আগেও বহুবার দেখেছে সাজিন। যখন সে ছাদে আসে তার কিছুক্ষনপর মেয়েটিও ছাদে আসে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এই দিকে, সাজিন যে একদম তাকাই না তা কিন্তু নয়। কে কি

ভাববে এই ভেবে কম কম তাকাই।

মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে সাজিনের প্রচন্ড পরিমান ভাল লাগে।

মেয়েটিকে দুরথেকে যতটুকু দেখা যাই তাতে আসম্ভব সুন্দর মেয়েটি। সাজিন অবশ্য মাঝে মাঝে ভাবে দুর থেকে মেয়েদের হয়ত অনেক বেশীই সুন্দর লাগে।

কাছ থেকে দেখার দরকার মেয়েটিকে।

কিন্তু চাইলেও সম্ভব হয়ে উঠে না। কারন সাজিন ওদের ফ্লাটের সামনে অনেকবার গিয়েছে কিন্তু মেয়েটিকে বাইরে বেরুতে দেখে নাই।

***

সাজিন গতদুইদিন যাবত লক্ষ করছে,

মেয়েটি আর ছাদে আসছে না।

অনেক খারাপ লাগে সাজিন এর,

নানা প্রশ্ন দানা বাধে ওর মনে?

মেয়েটি হঠাত করে ছাদে আসা বন্ধ করে দিল কেন?

আমার কোন ব্যবহারে কিছু মনে করল না তো?

নাকি ও অসুস্থ?

ধুর!! এত সব ভাবছে কেন সাজিন!

তাহলে কি....

না না এ হতে পারেনা মেয়েটিকে চেনেনা,জানেনা এমন কি নামটি পর্যন্ত জানা হয়নি সাজিনের,কিন্তু এই দুইদিনে ওকে এত অস্থির দেখাইতেছে কেন?

ঘুরেফিরে মেয়েটিকে নিয়েই ভাবছে কেন সাজিন।

কালকেই খোজ নেবে মেয়েটি সম্পর্কে।

সকালে খোজ নিয়ে জানা গেল ওই বাসার তিনতলাই পরিবারসহ থাকত মেয়েটি,ওরা গতকাল বাসা চেন্জ করেছে।

অনেক মন খারাপ সাজিনের।

ও বুঝতে পারল মেয়েটিকে দুর থেকে দেখেই ওকে ভালবেসে ফেলেছিল সাজিন,মেয়েটি কি এইসব কিছু ভেবেছিল।

মেয়েটি ও তো তাকিয়ে থাকত।

তাহলে কি সাজিন দেরি করে ফেলেছে।

অনেক নষ্টালজিক হয়ে পড়ে সে।

***

সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে রাতে বাড়ি ফিরে সাজিন।

খাবার সময় বাবা মায়ের কথাপকথনে জানতে পারে বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া এসছে।

-যা পরিচিত হয়ে আয় সাজিন কে উদ্দেশ্য করে বলল ওর মা।

-আমি পারব না কিছুটা বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিয়ে খাওয়াই মন দিল সাজিন।

-এই সাজিন কিছু হয়েছে তোর? মা বললেন।

-না মা কি হবে অবজ্ঞা স্বরে উত্তর দিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেল সাজিন।

***

সাজিন ছাদের সিড়ি বেয়ে উঠছে আর ভাবছে কেন এমন হল।

ছাদে প্রবেশ করতেই সাজিন লক্ষ করল আকাশে মিষ্টি একটি চাঁদ উঠেছে। জোসনার আলোতে ছাদটা

আলোকিত হয়ে আছে।

মৃদ পায়ে সামনে দিকে এগুতে থাকল সাজিন, কিছুদূর এগুতেই ভূত দেখারমত চমকে উঠল সে।

ছাদের দক্ষিন কর্নারে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে।

এক দৃষ্টিতে আকাশ দেখছে মেয়েটি।

মেয়েটির পরনে সেই নীল থ্রি পিচ যা সাজিন ঐ ছাদের মেয়েটিকে পড়তে দেখেছে।

তাহলে কি এই মেয়েই সেই মেয়ে। সাজিনের আর বুঝতে বাকি থাকেনা যে ঐ মেয়ের পরিবার-ই সাজিনদের নতুন ভাড়াটে।

মুহুর্তেই সাজিনের মনে একরাশ আনন্দ দোলা দিয়ে যাই।

সাজিন মেয়েটিকে লক্ষ করেএকটু কাশি দেয়।

মেয়েটি বুঝতে পেরে পিছন ফিরে তাকাই।

সাজিন কে দেখে সে ভূবন ভোলানো হাসি দেয়।

মেয়েটির প্রশ্ররই এর হাসি দেখে সাজিন মেয়েটি কাছে এগিয়ে যাই।

সাজিনকে এগুতে দেখে মেয়েটি মনে হয় একটু লজ্জিত হয়।

-তার মানে তোমরাই হলে আমাদের বাড়ির নতুন ভাড়াটিয়া।

-মেয়েটি কিছু না বলে শুধু হ্যা সূচক মাথা নারাই।

-তুমি যান তোমাকে আমি কত খুজেছি? আজ আমার মনটা খুব খারপ ছিল তোমার জন্যে গতদুইদিন তোমাকে ছাদে দেখিনা। আমি খুব অস্থির ছিলাম তোমার জন্যে।

-মেয়েটি শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাজিনের দিকে।

-আসলে তুমি হয়ত ভাবছ আমি এগুলা কি বলছি,আসলে সত্যি বলতে আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি আর আমি জানি তুমিও আমাকে ভালবাস?

এই কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে মেয়েটির চোখের দিকে তাকাল সাজিন।

একি!! মেয়েটির চোখ দিয়ে অঝর ধারাই পানি পড়ছে।

এই কান্না খুশির নাকি দঃখের বুঝতে পারল না সাজিন।

ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির চোখে চোখ রেখে ওর চোখের জল হাত

দিয়ে মুছে দিতে দিতে সাজিন বলল ধুর পাগলি কাদছ কেন?

-মেয়েটি কিছু না বলে আচমকা জরিয়ে ধরল সাজিন কে!!

সাজিন ও একটু হেসে জরিয়ে নিল বাহুডরে।

কিন্তু পরক্ষনেই সাজিন কে চমকে দিয়ে ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল মেয়েটি।

সাজিন ও যাবার পথের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল।

***

সারারাত ভেবেও মেয়েটির এমুন ব্যাবহারের কারন উত্ঘাটন করতে পারল না সাজিন।

পরেরদিন নাস্তা টেবিলে সাজিন মাকে নতুন ভাড়াটিয়াদের সাথে পরিচয় হতে যাবে বলল।

-জানিস সাজিন ঐ ভাড়াটিয়াদের না একটি খুব সুন্দর মেয়ে আছে আগ্রহ নিয়ে বলল সাজিনের মা।

- ও তাই নাকি!! মুচকি হেসে উত্তর দিল সাজিন।

-কিন্তু দুঃখের বিষয় কি জানিস, ওনাদের ওমন সুন্দর মেয়েটা কথা বলতে পারে না। জন্ম থেকে বোবা!!!

-সাজিনের মাথাই যেন বাজ পরল??? এইটা কি বল তুমি ঐ মেয়েটা কথা বলতে পারে না??

-হ্যা ঐ মেয়ের মা আমাকে তো তাই-ই বলল!!!

কিরে সাজিন না খেয়ে কোথায় যাস।.....

কোন উত্তর না দিয়ে নিচের তলার সিড়ি ভাঙ্গতে থাকে সাজিন।

***

একা একা বসে আছে সাজিন।

ওর কাছে এখন সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেছে।

মেয়েটার না তিপ্তি সে জন্ম থেকেই বোবা।

এই কারনেই সেদিন সাজিন এত কথা বললেও মেয়েটি একটি কথাও বলে নাই।

শুধু দু চোখের পানি ফেলেছে।

সিজান ভাবছে বাস্তবতা বোধহয় এমুনই হয়....

কি এমন দোশ ছিল মেয়েটির যার জন্য বিধাতা তাকে সব কিছু দিয়েও যেন কিছু একটার জন্য কার্পন্য করলেন... :'( :'(

বিষয়: বিবিধ

১৭১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File