গল্প:-"মেয়েটা"

লিখেছেন লিখেছেন তারমিহিম আসফিম ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:০৯:৩৪ রাত

আমার লেখা নিচের গল্পটি গত 27.10.2013 তারিখে সমকাল পত্রিকায় প্রকাশ হয়।

ব্লগে এই লেখাটি আমার প্রথম লেখা সবাই কে একটু পড়ে দেখার অনুরোধ থাকল। ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন.....

"মেয়েটা"...

নতুন বাসায় উঠার পর থেকেই বাড়ীওয়ালীর মেয়েটার লক্ষণ তেমন ভাল মনে হচ্ছে না তপুর। সে খেয়াল করে দেখেছে তার রুটিন মেয়েটা পুরো ঠোটস্থ করে রেখেছে। সকালে কখন বের হয়, কখন বারান্দায় দাড়ায়, কখন ছাদে উঠে সব কিছু পুরো মুখস্থ। সকালে বাসা থেকে বের হবার সময়ই মেয়েটা হুড়মুড় করে নীচে নামে। তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে কেমন আছো? প্রথম দিন তপু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলো। ক্লাশ টেনে পড়ুয়া একটা মেয়ে তাকে প্রথম দেখাতেই তুমি তুমি করে বলায় অপমানে গাল লাল হয়ে গেলো। পরমুহুর্তে মনে করলো, অনেক ছোট তো তাই বড়ভাই হিসেবে তুমি করে বলছে। কিন্তু এটাও তেমন একটা গ্রহণযোগ্য যুক্তি মনে হলো না। ঠিক আছে ছোট কিন্তু তাই বলে এত ছোট তো আর না। রুমকি পড়ে ক্লাশ সেভেনে। অনেক পিচ্চি। তুই করে বলে ঠিক আছে। তাছাড়া ছোট বোন। কিন্তু এই ধামড়ি মেয়ে কোন সাহসে তুমি করে বলে? বয়স তো কম হয় নাই। কয়টা ছেলেকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায় কে জানে। ঠান্ডা গলায় তপু বললো, ‘তোমার বয়স কত?”। ঠোট কুচকে মেয়েটা বলে উঠলো, “ছিহ, তুমি ম্যানার জানো না? মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে হয় না।” আকাশ থেকে পড়লো তপু। বলে কি এই মেয়ে? - তুমি জানো না আমি তোমার চেয়ে অনেক বড়। আপনি করে বলবে। - ইশশ.. আমার যাদেরকে ভালো লাগে তাদের আমি তুমি করেই বলি। তোমাকে আমার ভাল লাগে। আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো। তুমি চুপচাপ শুনবা আর উত্তর দিবা। উল্টাপাল্টা কিছু করলে আমি বাবাকে বলবো তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করো। প্রেমের প্রস্তাব দাও। তখন বুঝবা ঠেলা। আর শুনো, আমার নাম তনিমা। তুমি আমাকে তমা বলে ডাকবা। আমার ভাল লাগবে। তপুর ইচ্ছা করছিলো মেয়েটার কান বরাবর একটা থাপ্পড় মারতে। কিন্তু মেয়ে যা বললো এই মাত্র তারপর এটা রিস্ক হয়ে যায়। বাসায় জানালে বাবা মা উল্টো তাকেই দোষ দেবে। তপু গটগট করে হেটে বাইরে চলে গেল। পিছনে থেকে খিলখিল হাসির সাথে শুনতে পেলো, “কি হল জান, ভয় পাইসো?” তারপর থেকে তপু বিশাল ভয়ে ভয়ে থাকে। পাগল ছাগল টিনএজ মেয়ে নিয়ে বিপদ। কখন যে কি করে বসে। ইদানীং শুরু হয়েছে নতুন যন্ত্রনা। তনিমা তার ঠিক উপর তলার রুমে থাকে। তপুর রাত জাগার অভ্যাস। ফাজিল মেয়েটা কিভাবে যেন টের পেয়েছে। প্রতিরাতে তপুকে সে ফ্রি গান শোনায়। বারান্দায় এসে প্রেমের গান গায়। সুরেলা কন্ঠে ডাক দেয়, “এই কি করো? বারান্দায় আসো না কথা বলি। না আসলে কিন্তু বাবাকে বলে দেবো তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করো।” অগত্যা তপু বারান্দায় যায় আর বকবক সহ্য করে। রুমকিটা এই ফাজিল মেয়ের সাথে থেকে হয়েছে আরেক ফাজিল। একদিন এসে বললো, “ভাইয়া, তুই বিয়ে করবি কবে?” - তোর বিয়ের পরের দিন। - এমন করিস কেন? বল না। - দেখি। - দেখি আবার কি? বল না কবে করবি। - জানি না। - আচ্ছা, ভাবীর সাথে তোর বয়সের গ্যাপ কত হতে হবে? - হঠাৎ এই প্রশ্ন? কি হয়েছে? - কিছু না। আচ্ছা উপরের তনিমা আপুকে তোর কেমন লাগে? - অসহ্য। - তুই ওকে অনেক লাভ করিস। ঠিক না? - তোকে ধরে রামধোলাই দেবো ফাজিল। তুই আর তনিমার সাথে কথা বলবি না। বললেই মাইর দেবো। এইসব কথা কোথা থেকে শিখেছিস? - হুমম। তুই তো বিয়ের পরে কথা বলবিই। আমি এখন একটু বললে তোর এত হিংসা হয় কেন? আপু আমাকে বলেছে তুই নাকি ওকে লাভ করিস। আই লাভ ইউ বলিস। মেজাজ গরম হয়ে যায় তপুর। রুমকির কান ধরে জোরে একটা মোচড় দেয়। রুমকি শয়তানীর হাসি হেসে বলে, “আব্বুকে বলে দেবো?” কান ছেড়ে দেয় হতাশ তপু। - বিশ্বাস কর। সব মিথ্যা কথা। আমি ঐ ফাজিলটার চেয়ে কত বছর বড় জানিস? মেয়েটা একটা খাটি ইবলিশ। লক্ষী বোন আমার তুই আর ওর সাথে কথা বলিস না। - তাহলে দুইশ টাকা দে - এক থাপ্পড় মারবো। - আব্বুকে ডাক দেই? - এত টাকা দিয়ে কি করবি? - আব্বুকে ডাক দেবো? - আমার কাছে দুইশ টাকা নাই - তাহলে একশ দে। - বিশ টাকা দেবো। - আব....বু - এই নে। তারপর থেকে এই মেয়ে তপুর ঘুম হারাম করে দিয়েছে। এতদিন জানতো নারীরা অবলা। কিন্তু এই মেয়ে বড় ভয়ংকর। আরেকটু বড় হলে তপু নিজেই লাইন মারতো। কিন্তু এটা তো বেশী ছোট। সাত বছরের ছোট। ঝামেলা। মেয়েটার মাথা পুরাই বিগড়ে গেছে। রুমকির হাত দিয়ে লাভ লেটার পাঠায়। সময় অসময়ে তপুর রুমে চলে আসে। একদিন তো দরজাই লাগিয়ে দিয়েছিলো আরেকটু হলে। তপু দেখে, বিরক্ত আর হতাশ হয়। এত বয়স হয়ে গেলো একটা মেয়েও ফিরে তাকালো না আর শেষমেষ এক বাচ্চা মেয়ে তার জন্য জান দিয়ে দিচ্ছে। সেলুকাস। হে খোদা বয়সটা একটু কমায়া দাও। আমিই লাফ মারি। সেদিন ছাদে বসে আছে তপু। পানির ট্যাংকের পেছনে বসে সিগারেট টানছে। এমন সময় হঠাৎ তনিমা কোথা থেকে উদয় হয়ে বললো, “জান তুমি সিগারেট খাও? সিগারেট খেলে কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ের পর চুমু দেবোনা।” তপুর তো এইবার মাথা নষ্ট হবার যোগাড়। -শোনো তনিমা, তোমাকে কয়টা কথা বলি। ঠান্ডা মাথায় শোনো। -একটা কেন জান? অনেক গুলা বলো। আর তোমাকে না বললাম আমাকে তমা ডাকতে। - আচ্ছা তমা, তুমি এখন টিন এজ মেয়ে। এই বয়সে এমন হয়। হঠাৎ কাউকে ভাল লাগে। এই ভাললাগা বেশীদিন থাকে না। - না আমি তোমাকে অনেক লাভ করি। তোমাকে বিয়ে করবো। -উহু শোনো। আরেকটু বড় হও। তখন বুঝতে পারবে। তুমি আমার চেয়ে অনেক ছোট। রুমকির প্রায় সমান। তুমি এই পাগলামী গুলা বাদ দাও। শুধু শুধু কষ্ট পাবে। - তুমি কি কাউকে লাভ করো? -আমি সেটা বলছি না। আমি তোমার বড় ভাইয়ের মতন। তুমি যা চিন্তা করছো সম্পূর্ণ ভুল চিন্তা করছো। -ও কি আমার চেয়ে সুন্দর? - ওফফ আমি কাউকে লাভ করিনা। কিন্তু তুমি আমার চেয়ে অনেক ছোট। আর এই বয়সে এমন হয়। আবার ঠিক হয়ে যায়। তনিমা প্রচন্ড জোড়ে মুখ চেপে চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে। তারপর কাপা কাপা গলায় বলে, “আমি বাবাকে বলে দেবো।” তারপর দৌড়ে চলে যায়। তপু পেছন থেকে ডাকতে থাকে। কিন্তু তনিমা থামেনা। রাত এগারটার দিকে উপরতলায় প্রচন্ড হৈচৈ শুনে তপু বাসা থেকে বের হয়ে উপরতলায় যায়। গিয়ে দেখে তনিমা হাতের ভেইন কেটে ফেলেছে ব্লেড দিয়ে। বাসার সবার কান্নাকাটি, চিৎকারে তপুর মাথাটা ভার হয়ে আসে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে এম্বুলেন্সের নাম্বারটা খুজতে থাকে। মোবাইলের লেখাগুলো খুব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ধুর ছাই, চোখ দিয়ে জল আসছে কেন?

বিষয়: বিবিধ

৩১৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File